ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে

বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা খুব বেশি এবং সেটি দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেঙ্গু খুব ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে যা পূর্বে খুব বেশি দেখা যায় নি। বর্তমানে ডেঙ্গু অনেকটা মহামারীর মতো রূপ ধারণ করছে। শিশু থেকে বয়স্ক যেকোন বয়সের ব্যক্তিদের এই রোগ হচ্ছে। সবাই এই রোগ নিয়ে বেশি চিন্তিত। ডেঙ্গু জ্বর হলে অনেকেই প্রশ্ন করে ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে, ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে, ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে ইত্যাদি।

অনেকে এই বিষয়গুলো নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করে। বিশেষজ্ঞরা বলে, ডেঙ্গু রোগ হলে খুব বেশি চিন্তার কারণ নেই। প্রাথমিক অবস্থায় ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিলে এই রোগ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। সর্বনিম্ন ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে, ডেঙ্গু যদি প্রথম অবস্থায় ধরা না পড়ে অথবা এই রোগকে অবহেলা করা হয় তাহলে এর কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

তাই ডেঙ্গু রোগ কে সাধারণ রোগ বলা যাবে না। এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে এবং কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চলতে হবে। তাহলে এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ, ডেঙ্গু টেস্ট কখন করতে হয়, ডেঙ্গু মশা কোথায় কামড়ায়, ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে, ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে এবং ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে ইত্যাদি।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে

অন্যান্য জ্বরের মতো ডেঙ্গু জ্বর হলেও গোসল করা যাবে। ডেঙ্গু রোগীদের পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকা অত্যন্ত জরুরি। তবে সেক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না। ২৭ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বা হালকা কুসুম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। এছাড়া, মাথায় পানি দিলে বা গা মুছলেও শরীরের তাপমাত্রা কমে।

অনেকেই মনে করে গোসল করলে ঠান্ডা লেগে যাবে, সর্দি কাশি হবে তাই জ্বর হলে গোসল করা যাবে না। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে গোসল করা কে সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয় নি। এরপরেও জ্বর হলে অনেকে গোসল করে না। তবে বেশির ভাগই লোক জ্বর হলে মাথায় পানি ঢালে, জলপট্টি দেই এবং গা মুছে। যদিও এগুলো করার ফলে কিছুটা ভালো লাগে। কিন্তু, গোসল করলে জ্বরের তীব্রতা সাময়িকভাবে আরো অনেকটা কমে আসবে। এছাড়া অস্বস্তিবোধ লাগে না।

জ্বর হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই, ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে এতে কোন সমস্যা নেই। তবে, জ্বর হলে অনেকের অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগবে সেক্ষেত্রে শুধু মাথায় পানি দেওয়া ও গা মুছলে হবে। গোসল করার প্রয়োজন হলে কুসুম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। তবে খুব বেশি গরম বা খুব বেশি ঠান্ডা যাতে না হয়।

আরো পড়ুন: ডেঙ্গু টেস্ট কখন করতে হয়

টাইফয়েড জ্বর হলে কি গোসল করা যায়

টাইফয়েড জ্বর হলে কুসুম পানি দিয়ে গোসল করা যাবে, তবে চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না। জ্বর ও শরীরের তাপমাত্রা বেশি হলে তা কমানোর জন্য কপালে জলপট্টি দেওয়া যাবে ও ভেজা ভালো কাপড় দিয়ে সম্পূর্ণ শরীর মুছা যাবে। ফলে রোগীর অনেক ভালো লাগবে এবং সুস্থতা অনুভব হবে। তবে, কোন অবস্থায় ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না। কারণ এই সময় অনেকের এমনিতে ঠান্ডা লাগে।

টাইফয়েড জ্বর হলে খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে জীবনযাপন করতে হবে। খাওয়ার আগে ও পরে, টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। টাইফয়েড জ্বর দ্রুত ভালো করার জন্য টিকা অথবা ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। তবে টিকা বা ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য ডাক্তারের অনুমতি লাগবে। পানি পান করার সময় ফুটন্ত পানি পান করা উত্তম। খাবার রান্না করার সময় ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

বাচ্চাদের জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে

শিশু বা বাচ্চাদের জ্বর হলে অবশ্যই গোসল করানো উচিত। কারণ চিকিৎসকরা বলে, যেকোন রোগে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা গুরুত্বপুর্ণ। তবে শিশুদের ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করানো যাবে না। কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে এবং পানি অতিরিক্ত গরম হলে হবে না। এছাড়া, ভেজা গামছা বা তোয়ালে দিয়ে শিশুর সম্পূর্ণ শরীর ঘন ঘন মুছে দিলে শিশুর আরাম লাগবে।

অনেক বাচ্চার বাবা মায়েরা জ্বর হলে বাচ্চাকে গোসল করাতে চাই না এবং বেশ ঘাবড়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে বাচ্চাকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাচ্চাদের জ্বর ২ দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। যদি আপনার বাচ্চার জ্বর ২ দিনের বেশি হয় তাহলে ডাক্তারের কাছে যান। এছাড়া, জ্বর যদি ১০৩° এর বেশি হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

আরো পড়ুন: কি খেলে পাইলস ভালো হয় জেনে নিন

ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ

ডেঙ্গু জ্বর কোন ধরনের ছোঁয়াচে রোগ নয়। ডেঙ্গু জ্বর একজন থেকে আরেকজনের কাছে যায় না। এই জ্বর মূলত ডেঙ্গু বা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ভাইরাসবাহী এডিস মশা কামড়ানোর কয়দিন পর এই জ্বর হয়। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের ব্যবহার করা জিনিস অন্য কেউ ব্যবহার করলে তার ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ডেঙ্গু জ্বর হলে দ্বিতীয়বার আর মশার কামড় খাওয়া যাবে না। তাই ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশারির বাইরে বের হওয়ার পর যতটা সম্ভব লম্বা কাপড় পরে নিজেকে ডেকে রাখতে হবে। বাড়ির আশেপাশে কোন ধরনের ফুলের টপ, টায়ার ডাবের খোল সহ পানি জমা থাকলে সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। প্রতি সপ্তাহ পর পর গাছের টবে পানি পরিষ্কার করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

সাধারণত, ডেঙ্গু জ্বর ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত থাকে। খুব বেশি সংখ্যক মানুষ ১ সপ্তাহ পর থেকে সুস্থ হয়ে উঠে। তবে রোগী ভালো হয়ে যাওয়ার পরেও অসুস্থ, ক্লান্তি, রক্তক্ষরণসহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় ভালো হওয়ার ২ থেকে ৩ দিন পর ফুসকুড়ি ও চামড়া উঠতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর ২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে বিপদ হতে পারে। তবে সঠিক সময়ের মধ্যে চিকিৎসা নিলে এই রোগ দ্রুত ভালো হয়ে যায়।

আপনি জেনে হয়তো অবাক হবেন একজন ব্যক্তির সারাজীবনে ৪ বারের বেশি ডেঙ্গু রোগ হবে না। ডেঙ্গু ৪ ধরনের হয়ে থাকে ডেন ১, ডেন ২, ডেন ৩ ও ডেন ৪। কোন ব্যক্তির যদি একবার ডেন ১ ডেঙ্গু হয়ে থাকে তাহলে তিনি দ্বিতীয়বার ডেন ১ ভাইরাসে আর আক্রান্ত হবেন না। কিন্তু, কোন ব্যক্তির যদি তৃতীয় বা চতুর্থ বার ডেঙ্গু হয় তাহলে সেটি খুব ভয়াবহ হতে পারে। রোগী অনেক কষ্ট পাবে এমনকি অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

একটি ডেঙ্গু মশা শরীরের যেকোন স্থানে কামড়াতে পারে এবং ভাইরাস শরীরের যেকোনো অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে। সাধারণত একজন গর্ভবতী এডিস মশা মানুষকে কামড়ে থাকে। একটি ডেঙ্গু মশা ১৫-৪০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শীতকালে তাদের বেঁচে থাকার হার সবচেয়ে বেশি। তবে গরম কালে এরা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে। তাদের গায়ে-পায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। এছাড়া তারা অনেকটা মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। তারা বেশির ভাগ ময়লা আবর্জনা পানিতে জন্ম নেই।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রতি ছয় ঘণ্টা পর পর প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। তবে সবাই এই ঔষধ সেবন করতে পারবে না। যেমন; যাদের ডায়াবেটিস, কিডনি, হার্ট ও লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদের প্যারাসিটামল খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সবার ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে ঔষধ খাওয়া উচিত।

আরো পড়ুন: হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি করা উচিত

শরীরে জ্বর বাড়লে ডি-হাইড্রেশন এর পরিমাণ ও বৃদ্ধি পায়। তাই, ডেঙ্গু জ্বর হলে বেশি বেশি পানি করতে হবে। চিকিৎসকের মতে, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন সর্বনিম্ন ২ লিটার পানি পান করা উচিত। এক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগীর প্রতিদিন কমপক্ষে ২.৫ লিটার থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। পানি জাতীয় খাবার খেলেও হবে। যেমন; ডাবের পানি, দুধ, ফলের রস, স্যুপ, শরবত ইত্যাদি।

ডেঙ্গু রোগীরা ভালো হওয়ার পরেও ৭-১০ দিন পরিশ্রম করতে পারবে না। তাদের এই সময়টাতে বিশ্রাম নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হালকা ব্যায়াম করতে হবে অথবা স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা, দৌড়াদৌড়ি ও দৈনন্দিন কাজ করা যাবে। ডেঙ্গু রোগীদের বিশ্রামের কোন বিকল্প নেই। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে মশার কয়েল ও ব্যবহার করতে হবে।

জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ওষুধ খাওয়া যাবে। তবে, দিনে ৮ টার বেশি বা সর্বোচ্চ ৪ গ্রামের বেশি প্যারাসিটামল খেলে কিডনি সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। জ্বর কমানোর জন্য অন্য কোন ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না। সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!