কি খেলে পাইলস ভালো হয় জেনে নিন

কি খেলে পাইলস ভালো হয় – পাইলস বা অর্শ রোগ শিশুদের থেকে শুরু করে যে কোন বয়সী ব্যক্তিদের হতে পারে। অনেকে মনে করে থাকে পাইলসের সমস্যা শুধুমাত্র বয়স্কদেরেই হয়ে থাকে। বয়স্কদেরে বেশি হয়ে থাকলেও এটা কমবয়সী সবার ক্ষেত্রে হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, খাদ্যবাস এবং জীবনযাপনের অনিয়মিত কারণে অন্যান্য রোগের চাইতে এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য কারণে এই সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। চিকিৎসকদের মতে, পাইলস থেকে বাঁচার জন্য অবস্যই খেয়াল রাখতে হবে মল যাতে শক্ত না হয়।

তাই, মলদ্বারের সমস্যা দেখার সাথেই সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া, পাইলস বা অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শাকসবজি এবং প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে। শুধুমাত্র ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে পাইলসের সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাহলে এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন কি খেলে পাইলস ভালো হয়।

কি খেলে পাইলস ভালো হয়

ফুলকপি, গাজর, তরমুজ, ব্রোকলি, শসা, বাঁধাকপি, টমেটো, নাশপাতি, আপেল, পেঁয়াজ, কলা, কিশমিশ , আঙুর, ডাল, মটরশুঁটি, ইত্যাদি এই খাবার গুলো খেলে পাইলস বা অর্শ রোগ ভালো হয়। এই সকল খাবারে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকার কারণে এগুলো সহজে মল ত্যাগে সাহায্য করতে পারে।

পাইলসের জন্য পানি খাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ, পানিও মল ত্যাগে সাহায্য করে। গবেষকরে মতে প্রতিদিন দুই লিটার সমপরিমাণ ৭ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

পাইলস বা অর্শ রোগের সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খাওয়া উত্তম বলে আমরা মনে করি। এই রোগের জন্য চিকিৎসকরা বেশিরভাগই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। তাই, চিকিৎসকের অনুযায়ী বেশি বেশি ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়া চেষ্টা করবেন। যাইহোক, আপনি যদি ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার কোন গুলো না জানেন তাহলে লিংকে ক্লিক করুন।

পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ

চা বা কফি, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, টক খাবার, ডিম, লঙ্কার গুঁড়ো, লবণাক্ত খাবার, ভাজা এবং তেলযুক্ত খাবার, মদ্যপান, অ্যালকোহল, দুধজাতীয় খাবার, লাল মাংস ইত্যাদি পাইলস বা অর্শ রোগীদের খাওয়া নিষেধ। এছাড়া, বেকরারির খাবারে ফাইবার থাকে না তাই এইসব খবর এড়িয়ে চলতে হবে।

মসলাযুক্ত খাবার পাইলস রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মল থেকে রক্ত বের হওয়ার জন্য এটি দায়ী। সে কারণে অর্শ রোগীদের মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এর সাথে সাথে লবণাক্ত খাবারও এড়িয়ে চলতে হবে। অন্যদিকে, দুধজাতীয় খাবার পাইলস রোগীদের যন্ত্রণা দেয় এবং এটি কোষ্ঠকাঠিন্য জন্যেও দায়ী। এছাড়া, ভাজা খাবার ও লাল মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। লাল মাংস হজমের সমস্যা করে। সর্বশেষ, মল শক্ত বা শুখিয়ে যাওয়ার পিছনে চা ও কপি দায়ী। তাই পাইলস হলে উল্লিখিত খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

আরো পড়ূনঃ ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে জেনে নিন?

পাইলস বা অর্শ রোগ কী

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় পাইলস বা অর্শ রোগের নাম হলো হেমোরয়েড। পায়খানার রাস্তার মুখ যদি ফুলে যায় এবং সঙ্গে রক্ত পরে অথবা মল শক্ত ও মলত্যাগে সমস্যা হয় তখন একে পাইলস বা অর্শ রোগ বলা হয়। এই রোগ যদি জটিল আকার ধারণ করে তাহলে অপারেশন করার প্রয়োজন হয়। যদি জটিল আকার ধারণ করার আগেই সঠিক চিকিৎসা করা সম্ভব হয় তাহলে অপারেশন করার প্রয়োজন হয় না।

পাইলসের কারণঃ পাইলস কেন হয়

পাইলস বা অর্শ রোগ হওয়ার পিছনে অনেক গুলো কারণ রয়েছে, যেমন:

  • অতিরিক্ত ওজন হওয়া
  • পায়খানার বেগ আটকে রাখলে
  • মলত্যাগের সময় জোরে চাপ দিলে
  • শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণে
  • দীর্ঘদিন ডায়রিয়া চললে
  • দীর্ঘ দিন কোষ্ঠকাঠিন্য চললে
  • ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার কম খেলে
  • অতিরিক্ত প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাবার খেলে
  • গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনের কারণে

সাধারণত পায়ুপথের মুখ দিয়ে মল বের করা এবং পায়ুপথের মুখ বন্ধ করা ইত্যাদি কাজ বেশ কিছু জিনিসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। অ্যানাল কুশন হলো তার মধ্যে অন্যতম। যদি কোন কারণে এগুলো ফুলে যাই এবং রক্ত যায় অথবা মল শক্ত বা গোটার মতো দেখায় তাহলে বোঝা যায় এটি পাইলস বা অর্শ রোগ।

আরো পড়ূনঃ মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ ও প্রতিকার

পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

ঔষধ এবং অপারেশন ছাড়া পাইলস বা অর্শ রোগ ভালো করা সম্ভব। এখানে কিছু ঘরোয়া উপায় দেওয়া রয়েছে সেগুলো দেখে নিন:

  • পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করুন: পাইলস বা অর্শ রোগের অন্যতম কারণ হলো পানিশূন্যতা। এছাড়া, পানি পান না করার ফলে মল শক্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই, দিনে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিৎ। শুধু অর্শ রোগের জন্য নয়, পানি আমাদের শরীরের আরো অনেক উপকার করে থাকে।
  • ফাইবার যুক্ত খাবার খান: বেশি বেশি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে পাইলসের সমস্যা হয় না। এই ধরণের খাবার খেলে মল নরম হয়।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন: শরীরচর্চা হিসেবে আপনি হাঁটাচলা, সাঁতার কাটা, দোড়ানো কে বেছে নিতে পারেন। চিকিৎসকের মতে, হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করার মাধ্যমে পাইলস প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই, পাইলসের জন্য ভারী ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। কমপক্ষে দিনে ২০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন।
  • আইস প্যাক ব্যবহার করুন: মলদ্বারের ব্যথা কমানোর জন্য আইস প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। বরফ ব্যথা কমানোর পাশাপাশি রক্ত চলাচল সচল রাখে। মলদ্বারে ব্যথার স্থানে বরফের টুকরো কাপড়ে পেঁচিয়ে ১০ মিনিট লাগান। এভাবে দিনে কয়েকবার করলে ব্যথা কমে যাবে।
  • মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত সময় নষ্ট করবেন না: টয়লেটে বসে মোবাইল চালানো, পেপার পড়া, মুভি দেখা ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
  • পায়খানার চাপ আসলে আটকে রাখবেন না: এর ফলে মল শক্ত হয়ে যাবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিবে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: যাদের ওজন বেশি তাদের পাইলস বা অর্শ রোগ হওয়ার সম্ভবনা বেশি। তাই, ওজন বেশি হলে কমিয়ে ফেলা উচিত। ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে জানুন।
  • প্রক্রিয়াজাত দানা শস্য এড়িয়ে চলুন
  • ধূমপান, মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।
  • মলত্যাগের সময় খুব জোরে চাপ দিবেন না।

আরো পড়ুন: পিরিয়ডের সময় কি কি খাওয়া যাবে না?

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রথমে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জীবনযাপন করার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। ভারী ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই, হাঁটাচলা এবং হালকা ব্যায়াম করলেই হবে। এরপর, বেশি বেশি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান তাহলে ধীরে ধীরে পাইলস চিরতরে ভালো হয়ে যাবে। এছাড়া, আপনি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। যদি ওজন বেশি হয়ে থাকে তাহলে একটু বেশি ব্যায়াম করুন।

আরো পড়ূনঃ চোখ ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায়

পাইলস এর ব্যায়াম

পাইলস এর জন্য সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম হলো সাইকেল চালানো, হাঁটাচলা করা, সাঁতার কাটা, দৌড়ানো ইত্যাদি। এই ধরনের হালকা ব্যায়াম করলে পাইলস বা অর্শ রোগ ভালো হয়ে যায়। এছাড়া, রোয়িং এবং সিট আপস এই ধরনের ব্যায়াম পাইলস রোগের জন্য অনেক কার্যকরী।

যাইহোক, আপনি চাইলে নিচে দেওয়া ভিডিওটি দেখে পাইলস এর ব্যায়াম শিখতে পারেন। অথবা ফেসবুকে দেখুন

পাইলস এর ঔষধের নাম

পায়খানার রাস্তায় জ্বালাপোড়া হলে এবং রক্ত গেলে নরমানাল ৫০০, এরিয়ান, পাইলেসটপ এই ঔষধ গুলো খাওয়া যেতে পারে।

সাবধান
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া পাইলস এর ঔষধ গুলো খেতে পারবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খেলে আপনি বিপদে পড়তে পারেন। অন্যথায় আমরা দায়ী থাকব না, ধন্যবাদ।

যেসব ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়া যাবে না

আইবুপ্রোফেন এবং ট্রামাডল এই দুটি ঔষধ পাইলস রোগী ব্যবহার করতে পারবে না। কারণ আইবুপ্রোফেন রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, ট্রামাডল এই ঔষধ ব্যবহারের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
  • অনবরত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে
  • ঘন ঘন পাইলস এর সমস্যা হলে
  • খুব অসুস্থ বোধ করলে
  • ব্যথা সহ্য করার মতো না হলে
  • পায়খানার রং পরিবর্তন হলে
  • চিকিৎসা নেওয়ার পরেও ৭ দিনের মধ্যে উন্নতি না হলে

FAQ

পাইলস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে?

পাইলস বা অর্শ রোগীদের ডিম খাওয়া উচিত না। কারণ, ডিম হলো আমিষ জাতীয় খাবার। যা সহজে হজম হয় না, হজম হতে অনেক সময় লাগে। এছাড়া দিকে ফাইবার কম থাকে তাই এই সময় ডিম না খাওয়া ভালো।

পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয়?

পাইলস হলে পায়ুপথে ব্যথা হবে, মলদ্বারের এলাকায় চুলকানি হবে, মলদ্বারের চারপাশে ফুলে যাবে এবং কোন রকম ব্যথা ছাড়া মল ত্যাগ করার সময় রক্তপাত হবে। এছাড়া, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাও হতে পারে।

পাইলস কি ভালো হয়?

পাইলস বা অর্শ রোগ যদি প্রাথমিক অবস্থায় থাকে তাহলে এটি নিজে নিজে ভালো হয় যায়। আবার কখনো কখনো সঠিক জীবনযাপন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে পাইলস ভালো হয়ে যায়। তাই, পাইলস ভালো করার জন্য খাদ্য তালিকায় এবং জীবন যাপনের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে।

পাইলস হলে কি মানুষ মারা যায়?

পাইলস হলে মানুষ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, যদি না সেটি খুব মারাত্মক পর্যায়ে চলে না যায়।

পাইলসের জন্য কোন পানীয় ভালো?

পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং তরল জাতীয় ফলের রস খাওয়া উচিত। এছাড়া, স্যুপ জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়া উচিত। নাশপাতি, স্ট্রবেরি, কলা ইত্যাদি ফলের রসে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে।

পাইলস হলে মুরগি খাওয়া যাবে?

পাইলস হলে প্রক্রিয়াজাত মাংস (লাল মাংস, গরুর মাংস, মুরগির মাংস) এড়িয়ে চলতে হবে। এই সকল খাবারে ফাইবার বা আঁশ কম থাকে। এছাড়া, মাংস হজম করা কঠিন।

শেষ কথা

পাইলস হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা করানো উচিত। সঠিক সময়ের মধ্যে চিকিৎসা গ্রহন করলে অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। দেরি হয়ে গেলে অনেক সময় অপারেশনের প্রয়োজন হয়। তাই, ব্যাথা মুক্ত জীবনযাপন করতে চাইলে বেশি বেশি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান, পানি পান করুন, ব্যায়াম করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আমি “Health Bissoy” ও বাংলাদেশের অনেক ওয়েবসাইটে সহকারী কন্টেন্ট স্ট্রাটেজিস্ট হিসাবে কাজ করি। পড়াশোনার পাশাপাশি আমি একজন এসইও এক্সপার্ট এবং জুনিয়র ওয়েব ডেভেলপার। ২০২৩ সাল থেকে আমি বাংলাদেশের অনেক ওয়েব সাইটে কন্টেন্ট স্ট্রাটেজিস্ট ও ডিজাইনার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।

Leave a Comment

error: Content is protected !!