ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

প্রতিটির মানুষের ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে জানা উচিত। কারণ বেশির ভাগই মানুষের মধ্যে এই রোগ ধরা পরে এবং এর ফলে রোগীদের অনেক কষ্ঠ সহ্য করতে হয়। সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ডায়াবেটিস আমাদের শরীরের চোখ, লিভার, কিডনি, হার্ট ইত্যাদি অঙ্গের ক্ষতি করে এবং এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। তাই, ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে জেনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যা সারাজীবন শরীরের মধ্যে থেকে যায়। গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১০% মৃত্যু ডায়াবেটিসের কারণে হয়ে থাকে। সারাবিশ্বে, ডায়াবেটিসের কারণে প্রতিবছর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ডায়াবেটিসের কারণে মানুষের স্ট্রোক এবং হার্ট এটাক পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও জানা যায় এর ফলে মানুষের কিডনি নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে মানুষ অন্ধ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। তাই, ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা করতে হয়। এরপরেও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যদি কারো টাইপ টু ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তাহলে সে ঔষুধ ছাড়াই চিরতরে মুক্তি পেতে পারে।

একটি গবেষণায় বলা হয়েছে ৪২.২ কোটি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির মধ্যে টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ। গবেষণায় ওষুধ ছাড়া টাইপ টু ডায়াবেটিস থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার কথা বলা হলেও এই বিষয়ে আরো অনেক গবেষণার প্রয়োজন। তবে ভালো খবর হলো ডায়াবেটিসকে মহামারী হিসেবে বলা হলেও সঠিক খাদ্য এবং সঠিক জীবনযাপন করার মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায়।

ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ডায়াবেটিস হওয়ার অন্যতম কারণ খাদ্য। খাদ্য তালিকায় অনিয়মিত হওয়ার কারণে ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই, ঔষধ ছাড়া ডায়াবেটিস কমাতে অবশ্যই সবুজ শাকসবজি, ডিম, চর্বিযুক্ত মাছ, ভিটামিন সি, মটরশুঁটি, আমের পাতা, করলা, টকদই, চিয়া সিডস, মেথি, সুষম খাবার, ফাইবার জাতীয় খাবার ইত্যাদি বেশি বেশি খেতে হবে।

গবেষকদের মতে, ঔষধ ছাড়া টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব যদি নিয়মিত ব্যায়াম করা হয়, ওজন কমানো হয়, অস্বাস্থকর খাদ্য ত্যাগ করা যায় এবং নিয়মিত ডায়াবেটিস রোগ পরীক্ষা করা হয়। প্রায় বেশিরভাগই রোগী এই নিয়ম গুলো অনুসরণ কর ওষুধ ছাড়াই চিরতরে ডায়াবেটিস রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছে।

আমাদের দেশের প্রায় ৯৭ শতাংশ টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। যদি সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাহলে খুব সহজ এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিশেজ্ঞরা বলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগের জন্য বেশি চিন্তা এবং ঔষধের প্রয়োজন নেই। উপরের উল্লেখিত এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে এর থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

আপনি যদি ঔষধ ছাড়া আপনার ডায়াবেটিস কমাতে চান তাহলে আপনাকে আপনার খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর জন্য যেসকল খাবার খেতে হবে সেগুলো হলোঃ

ফলমূল ও শাকসবজি

শাক সবজি আমাদের শরীরের সকল ধরনের রোগের ক্ষেত্রে কার্যকরী। চিকিৎসকরা, প্রতিদিন সবুজ শাকসবজি খাওয়ার নির্দেশ দেয়। মাছ, মাংসের সমপরিমাণ শাকসবজি খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। সবুজ শাকসবজি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এক কথায় শরীর সুস্থ রাখতে শাক সবজির কোন বিকল্প নেই।

ডায়াবেটিস রোগীরা মনে করে ফলমূল এবং শাকসবজি খেতে পারবে না। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফলমূল এবং শাকসবজি উভয় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই সকল খাবারে থাকে ফাইবার, খনিজ পদার্থ এবং প্রচুর পরিমানে ভিটামিন। এছাড়া, শাকসবজি ও ফলমূলে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। তবে, এখানে ফলমূল খাওয়ার কথা বলা হলেও ফলমূলের রস খাওয়া উচিত না।

ফলমূল এবং শাকসবজি শরীরে আরো যে সকল রোগ থেকে সুরিক্ষিত রাখে সেগুলো হলো; স্ট্রোক, হার্টের বিভিন্ন সমস্যা, ক্যান্সার ইত্যাদি। এছাড়া, এগুলো পরিপাকতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।

এক নজরে ফলমূল ও শাকসবজি ডায়াবেটিস রোগীর যে সকল ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত সেগুলো হলোঃ
  • জাম্বুরা
  • যেকোনো ধরনের মৌসুমি ফল
  • মটরশুঁটি
  • খেজুর
  • পাস্তা
  • শিম
  • বরবটি
  • গাজর
  • খিচুড়ি
  • পালংশাক
  • লেটুস
  • শশা
  • ফুলকপি
  • বাঁধাকপি
  • ব্রকলি
  • তরমুজ
  • বরই
  • মাশরুম

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দুধ ও দুগ্ধখাবার খাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন প্রয়োজন, আর এই সকল পুষ্টি গুনাগুন দুধ, টক দই, পনির ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। হাড়, দাঁত ও পেশীর গঠনের কাজে এইসকল খাবার সাহায্য করে থাকে। তাই চিকিৎসকরা ডায়াবেটিস রোগীদের দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার পরামশ দেওয়া হয়। কিন্তু, এমন কিছু দুগ্ধজাত খাবার রয়েছে যেগুলোতে প্রচুর পরিমানে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, চর্বি থাকে যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই, অতিরিক্ত চর্বি রয়েছে এমন দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

এক নজরে উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম:
  • পেশীকে সুস্থ রাখে
  • দাঁত ও হাড় গঠনের জন্য উপকারী।
  • প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সমপরিমাণ দুধ খেতে হবে।
  • অনেকে দুধের গন্ধ সহ্য করতে পারে না, সেক্ষেত্রে দুধের সাথে অল্প পরিমানে দারুচিনি দিয়ে খেতে পারেন।
  • বিভিন্ন ধরণের তরকারি ও ফলমূলের সাথে ত্বক দই মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • নাস্তা হিসেবে গাজর ও শশা খাওয়া উচিত। গাজর ও শশা পনির খেতে পারেন এতে শরীরের ওজন কমে।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

শাকসবজির পাশাপাশি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার শরীরের সাস্থের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে আপনি শিম, ডিম, বাদাম, মাছ, মাংস, ডাল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের কোন বিকল্প নেই। তবে, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা থেকে লাল মাংস (গরু, খাসি, ভেড়ার মাংসের) পরিমান কমিয়ে দিতে হবে। কারণ, গবেষণা অনুযায়ী এই সকল খাবারের সাথে ক্যান্সার ও হার্টের রোগের সম্পর্ক রয়েছে।

ওমেগা-৩ থাকে এমন মাছ বেছে বেছে খেতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন তৈলাক্ত মাছ বা সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমানে ওমেগা – ৩ পাওয়া যায়, তাই আপনাকে এই ধরণের মাছ খেতে হবে। ওমেগা -৩ জাতীয় মাছ হার্টকে সুরক্ষিত রাখে। হার্ট এবং পেশির সাস্থের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের কোন বিকল্প নেই। তাই বলে প্রতিদিন মাছ মাংস খাওয়া উচিত না। সপ্তাহে ২ বা ৩ দিন পর পর করে মাছ মাংস খেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ লিভার ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা

শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় রয়েছে লাল আটার রুটি বা পাউরুটি, বাদামী বা লাল চালের ভাত। এছাড়া, পাস্তা এবং কাঁচকলা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক কার্যকরী। কিন্তু, উপকারিতার পরেও এই শ্বেতসার খাবারের অনেক গুলো অপকারিতা রয়েছে। যেমন; এই সকল খাবার রক্ত গ্লোকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখা আরো বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে থাকে।

অনেকে মনে করে ডায়াবেটিস হলে ভাত খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ভাতের এর বদলে অনেকে রুটি খেয়ে থাকে। কিন্তু, খেয়াল রাখতে হবে ভাত না খেয়ে ৩-১০ টি রুটি খেলেও কোন কাজ হবে না। বরং আরো বিপরীত হবে। তাই, শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে অল্প পরিমান লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, পাউরুটি ইত্যাদি খাওয়া উচিত। সাদা চাল এবং ময়দার পরিবর্তে লাল চাল এবং লাল আটা ডায়াবেটিসের জন্য ভালো।

আরো পড়ূনঃ হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

চর্বি ও বিভিন্ন ধরনের তেল

অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত খাবার সাস্থের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। তবে, ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন অল্প পরিমানে চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট-যুক্ত তেল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এই সকল খাবার রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে, স্ট্রোক এবং হার্টের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থাকে। ডায়াবেটিস রোগীরা অলিভ অয়েল দিয়ে সালাত তৈরি করে খেতে পারেন।

ডায়াবেটিস কয় ধরনের

ডায়াবেটিস সাধারণত ৩ প্রকার যেমন; টাইপ ১, টাইপ ২ এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। এই ৩ ধরনের ডায়াবেটিসের মধ্য থেকে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগ থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়। এর জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে। একটি গবেষনায় জানা যায় ৯৭% মানুষ টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং দেশের ১০% মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মারা যায়।

  • টাইপ ১ ডায়াবেটিস: টাইপ ১ ডায়াবেটিস অনেকটা অপ্রাপ্তবয়স্ক বা বাচ্চাদের ডায়াবেটিস নামেও পরিচিত। এই প্রতিক্রিয়ায় শরীর ইনসুলিন তৈরি করা বন্ধ হয়ে যায়। এই ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত খুব দ্রুত প্রকাশ পায় এবং যেকোন বয়সী ব্যক্তির হতে পারে। মানুষের শরীরে ইনসুলিন নামক একটি হরমোন উৎপাদন হয়ে থাকে, যা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রন রাখে। টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির এই ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তাই, ইনজেকশনের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয়। এই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব হলেও, এখন পর্যন্ত এই প্রতিরোধের কোনো উপায় আমাদের জানা নেই।
  • টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এই ডায়াবেটিসে রোগীর দেহের কোষগুলো ভালোভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না বলে রক্তে গ্লুকোজ স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে না। প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ মানুষ টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই ডায়াবেটিসের লক্ষণ সহজে প্রকাশ পায় না অনেকটা সময় লাগে। এছাড়া, বয়স্ক ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে এই ডায়াবেটিস বেশি দেখা যায়। ঔষধ এবং ঔষধ ছাড়াই টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন রাখা সম্ভব।
  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: হবু মায়ের যদি আগে থেকে ডায়াবেটিস না থাকে কিন্তু গর্ভাবস্থার প্রথমে দিকে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তাহলে সেটিকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হিসেবে ধরা হয়। এই সময় শিশুর স্বাস্থের কিছুটা ঝুঁকি থাকে এবং ভবিষ্যতে মা ও সন্তান উভয় টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে।

নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া, প্রয়োজন হলে ইনসুলিন বা ঔষধ গ্রহন করা, ওজন কমিয়ে আনা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব। এই ছাড়া এখন পর্যন্ত অন্য কোন উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তাই, সঠিক জীবনযাপন করা বাধ্যতামূলক। এছাড়া, ডায়াবেটিসের জন্য ব্যায়াম কার্যকরী একটি ঔষধ।

আরো পড়ূনঃ আঁচিল দূর করার ক্রিমের নাম ও ঘরোয়া উপায়

ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে এই ১০টি উপায়ে

  1. অস্বাস্থ্যকর খাদ্য সবসময়ের জন্য এড়িয়ে যেতে হবে। বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের, দোকানের বা ঘরের কোন অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া যাবে না।
  2. লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ডায়াবেটিস হলে লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার কমিয়ে প্রতিদিন শাকসবজি, ফলমূল খেতে পারেন।
  3. প্রতিদিন নিয়মিত খাবার খেতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খেতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী খাবার না খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না।
  4. ধূমপান, অ্যালকোহল জাতীয় খাবার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।
  5. কোমল পানীয় এবং ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন এবং বিশুদ্ধ আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করতে হবে।
  6. বিরতি দিয়ে কাজ করুন। একটানা এক জায়গায় বসে অনেকক্ষণ ধরে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। কিছুক্ষণ পর পর উঠে দাঁড়ান এবং হাঁটুন। চিপস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, গেমে আসক্ত থাকলে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। কাজ করতে করতে যদি আপনার ক্ষুধা লাগে তাহলে শসা খান।
  7. খাবার খাওয়ার সময় একসাথে একেবারে সব না খেয়ে, অল্প অল্প করে খান। অনেক ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসকরা ভাত না খেয়ে রুটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিন্তু, রোগীরা ভাত না খেয়ে বড় বড় কয়েকটি রুটি খেয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে কোন কাজ করবে না, তাই অল্প অল্প করে এবং কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
  8. নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীরকে সচল রাখুন। হাঁটার মাধ্যমে এই কাজটি করা যেতে পারে।
  9. ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহন করতে হবে।
  10. নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।

আরো পড়ূনঃ ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায়

তাড়াতাড়ি ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়

প্রাকৃতিক উপায়ে তাড়াতাড়ি ডায়াবেটিস কমানোর জন্য অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই। ব্যায়ামের পর অবশ্যই খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে এমন কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য রয়েছে যা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে, যেমন; পেঁয়াজ, করলা, আম পাতা, ডুমুর, দারচিনি, পানি ইত্যাদি। এই সকল খাবার খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

প্রাকৃতিক উপায়ে যদি আপনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে উপরের উল্লেখিত ১০টি উপায় আপনাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এক কথায় বললে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারলে প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমে যাবে।

ডায়াবেটিস রোগীর ব্যায়াম

  • একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত হাটাহাটি করা। আপনি চাইলে ঘরে বা বাহিরে হাঁটতে পারেন। অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটবেন।
  • প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। যদি একসাথে সম্ভব না হয় তাহলে ১০ মিনিট করে ৩ বার হাঁটুন।
  • আপনার যদি সাইকেল চালানোর অভ্যাস থাকে তাহলে প্রতিদিন ২০ মিনিট সাইকেল চালানো।
  • সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করা।
  • দড়ি লাফ খেলাটি খেলতে পারেন।
  • প্রতিদিন একই সময়ে এবং একই নিয়মে ব্যায়াম করতে হবে। মিস না দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। যদি জ্বর বা ডায়রিয়া হয় তাহলে ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই।

খালি পেটে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

  • খালি পেটে মেথি জল খাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। সে জন্য আপনি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ১ চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখুন। এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে মেথি থেকে পানি গুলো বের করে পান করুন। মেথি ও সাথে খেতে পারেন সমস্যা নেই।
  • রাতে ঘুমানোর আগে কয়েকটি আমন্ড বাদাম ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে উঠে সেগুলো খেয়ে ফেলুন।
  • সকালে খালি পেটে ঘি এবং হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে একসাথে খেলে ডায়াবেটিস কমে যায়।
  • সকালে খালি পেটে চায়ের সঙ্গে দারুচিনি জল মিশিয়ে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে। চাইলে শুধু দারুচিনি জল খেতে পারেন।

আরো পড়ূনঃ চোখ উঠলে ঘরোয়া চিকিৎসা

FAQ

ডায়াবেটিস হলে কিভাবে বুঝব?

ডায়াবেটিস হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ গুলো হলো; প্রচন্ড ক্ষদা লাগা, খুব ক্লান্ত লাগা, ওজন কমে যেতে পারে, চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া, বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত প্রস্রাবের প্রবণতা, যৌনাঙ্গে সংক্রমণ, শরীরের কাটা স্থান বা ঘা হলে ধীরে ধীরে নিরাময় হয়, স্বাভাবিকের চেয়ে সংক্রমণের হার বাড়ে।

ডায়াবেটিসে স্বাস্থ্য জটিলতা গুলো কি কি?

ডায়াবেটিস হলে শরীরের যেসকল ক্ষতি হতে পারে সেগুলো হলো; চোখের ক্ষতি, হৃদরোগের ঝুঁকি, স্নায়ু রোগের ঝুঁকি, ব্রেইন স্ট্রোক, স্পর্শ ও ব্যথার অনুভূতি কমে যাওয়া, কিডনির সমস্যা, গর্ভপাত, যৌন সমস্যা ইত্যাদি।

ডায়াবেটিসের চারটি প্রধান জটিলতা কি কি?

ডায়াবেটিসের চারটি প্রধান জটিলতা গুলো হলো; ১: স্নায়ুর ক্ষতি, ২: দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, ৩: হৃদরোগ, ৪: যৌন সমস্যা (ইরেকশনের সমস্যা অর্থাৎ লিঙ্গ শক্ত না হওয়া)।

টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর মধ্যে পার্থক্য কি?

টাইপ ১ ডায়াবেটিস অগ্নাশয় ইনসুলিন তৈরি করে না, অপ্রাপ্তবয়স্ক বা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়, প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয়। অন্যদিকে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস অগ্ন্যাশয় আগের তুলনায় কম ইনসুলিন তৈরি করে, বেশির ভাগ সময় বয়স্ক ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে এটি ধরা পড়ে, ৯০-৯৫ শতাংশ মানুষ টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়?

ডায়াবেটিসের মাত্রা ১৬.৭ মিলি উপরে চলে গেলে, তখন ডায়াবেটিস রোগীকে ইনসুলিন নিতে হয়। চিকিৎসকের মতে, ডায়াবেটিস ৮ মিলি এর কাছাকাছি থাকলে সেক্ষেত্রে ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

শেষ কথা

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা, মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা, ঔষধ গ্রহণ করা, নিয়মিত চিকিৎসা নেওয়া এবং ব্যায়াম করার মাধ্যমে ঔষধ ছাড়া ডায়াবেটিস কমানো সম্ভব। আপনি ঔষধ ছাড়া আপনার ডায়াবেটিস কমাতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই উপরের উল্লিখিত নিয়ম এবং পরামর্শ গুলো গ্রহণ করতে হবে। আশা করি আপনি এই আর্টিকেলটি অশেষ পর্যন্ত পড়েছেন।

Leave a Comment

error: Content is protected !!