বর্তমানে এখন পর্যন্ত লিভার ক্যান্সার রোগীদের জন্য আলাদা ভাবে কোন খাবার সুপারিশ করা হয় না। এমন কোন খাবার নির্দিষ্ট করা নাই যে লিভার ক্যান্সার রোগীর জন্য সেটি ভালো। তবে চিকিৎসকরা লিভার ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকায় বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার, চর্বিহীন প্রোটিন, মাছ, ডিম, মুরগি, দুধের তৈরি খাবার, বাদাম এবং বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি রাখার পরামর্শ দেয়। মূলত, লিভার সুস্থ রাখার জন্য এই সকল খাবার খেতে হয়।
লিভার ক্যান্সারের সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, ক্ষুধা কমে যাওয়া ইত্যাদি। সাধারণত, লিভার ক্যান্সার ধরা পড়লে ক্ষুধা কমে যায়। কিন্তু, এই মারাত্বক ক্যান্সারের সাথে লড়াই করার জন্য আপনাকে সুস্থ এবং শক্ত হতে হবে। এর জন্য খাবারের তালিকায় কিছুটা পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। তাই, নিচে লিভার রোগীর খাদ্য তালিকা এবং কোন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
লিভার ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা
লিভার ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা সমূহ নিচে দেওয়া হলো:
চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
লিভার সুস্থ রাখার জন্য চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন; মাছ, মাংস, মুরগি, ডিম, বাদাম, টার্কি, এবং কম চর্বিযুক্ত দুধের তৈরি খাবার ইত্যাদি খাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। চর্বিহীন জাতীয় খাবার লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এগুলো আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
স্বাস্থ্যকর চর্বি খাবার
কিছু কিছু খাবার যেমন; অ্যাভোকাডো, মাছের তেল, বীজ এবং বাদামে পাওয়া চর্বি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষন করতে সাহায্য করে।
সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল
সবুজ ফলমূল এবং সবুজ শাকসবজি স্বাস্থ্যের জন্য সবসময় ভালো। শাকসবজি ও ফলমূল যেমন; পালং শাক, ভিটামিন সি, এ, কে সমৃদ্ধ খাবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, গাজর, ব্রকলি, আপেল, বেরি, কমলা ইত্যাদি লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
পানি
সুস্থ স্বাস্থ্যের জন্য পানির কোনো বিকল্প নেই। শুধু লিভার নয় শরীরের প্রতিটি অঙ্গের স্বাস্থের জন্য পানি গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের খাবারকে হজম করতে পানি সাহায্য করে। চিকিৎসকের মতে, প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস যা ২ লিটার সমান পানি পান করা উচিত।
আদা
লিভার ক্যান্সারের একটি প্রধান লক্ষণ হলো বমি বমি ভাব। আদা বমি বমি ভাব দূর করতে অনেক সাহায্য করে থাকে। তাই, আপনি চাইলে আদার চা খেতে পারেন।
কফি
লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য চায়ের বদলে কফি খেতে পারেন। কপি লিভারের জন্য অনেক ভালো কাজ করে। বিশেষ করে ব্ল্যাক কপি চর্বি এবং কোলাজেন উৎপাদনে বাধা দিয়ে থাকে, যা লিভারকে সাহায্য করে।
শস্য জাতীয় খাবার
বিভিন্ন মসুর ডাল, মটরশুঁটি ইত্যাদিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। লিভার এবং হার্টের জন্য এগুলো অনেক উপকারী। এছাড়া, গমের রুটি এবং পাস্তা হলো ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, যা ক্যান্সার রোগীদের খাবার হজমে সাহায্য করে।
গাজর
এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি খাবার। এছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। গাজরে থাকা ফাইবার আমাদের কোলন বা মলাশয় পরিষ্কার করে। গাজর কিডনির জন্য ঔষধের মতো কাজ করে। লিভার থেকে টক্সিন এবং ফ্যাটি অ্যাসিড বের করে দিতে প্রতিদিন এক গ্লাস গাজরের রস খাওয়া উচিত। লিভার ক্যান্সার রোগীদের জন্যও গাজর খুবই কার্যকরী।
বাদাম
এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টি উপাদান যা লিভার ক্যান্সারের জন্য খুবই কার্যকরী। এটি স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ একটি খাবার যা আমাদের প্রতিদিন কমপক্ষে ২ টি হলেও খাওয়া উচিত। লিভারের রোগ প্রতিরোধে বাদাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপেল
এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। অনেকের মতে, প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে আর যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। আপনি যদি প্রতিদিন একটি করে আপেল খান তাহলে লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যাবে।
লিভার অনেক মারাত্বক একটি রোগ, ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগই মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকে। তাই, খাবারের পাশাপাশি ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা অনুযায়ী, একজন লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির সর্বনিম্ন ৫ বছর বেঁচে থাকার হার মাত্র ৬ শতাংশ। এই রোগ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে না, যায় ফলে শেষ স্টেজে গিয়ে এটি ধরা পড়লেও লাভ হয় না।
আরো পড়ুনঃ ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে জেনে নিন।
লিভার ক্যান্সার রোগীরা যেসব খাবার খাবেন না
লিভার ক্যান্সার রোগীরা যেসব খাবার খেতে পারবে না সেগুলো হলো:
মিষ্টি বা চিনি যুক্ত খাবার
লিভার ক্যান্সার রোগীদের অবশ্যই মিষ্টি বা চিনি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চিনিযুক্ত খাবার যেমন; চিনি, চকলেট, ক্যান্ডি, কেক, মিষ্টি দই, মিষ্টি, মধু, ইত্যাদি।
অতিরিক্ত লবণ যুক্ত খাবার
লিভার ক্যান্সার রোগীরা উচ্চ লবণ যুক্ত খাবার খেতে পারবে না। লবনযুক্ত খাবার লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো আগের চাইতে বেশি খারাপ করে দেই। তাই, লবণ যুক্ত খাবার এখন থেকে এড়িয়ে চলুন।
অ্যালকোহল জাতীয় খাবার
অ্যালকোহল জাতীয় খাবার লিভারের চাপ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া, অ্যালকোহল জাতীয় খাবার শরীরের অনেক ক্ষতি করে দেয়।
লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই একজন লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে এই খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। চিকিৎসক থেকে জেনে নিতে হবে আপনি কি খেতে পারবেন আর কি খেতে পারবেন না।
আরো পড়ুন: ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ।
লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ
লিভার ক্যান্সার লক্ষণ সমূহ গুলো হলো:
- দুর্বল এবং ক্লান্তি।
- খাবার খাওয়ার সময় বমি বমি ভাব হওয়া।
- হঠাৎ ওজন হ্রাস পাওয়া।
- হালকা জ্বর জ্বর ভাব থাকা।
- ঘুমের সমস্যা।
- মাথা ব্যাথা।
- মুখে দুর্গন্ধ।
- ডান কাঁধে ব্যথা।
- জন্ডিস এর সমস্যা।
- পেট ফুলে যাওয়া।
- ক্ষুধা কমে যাওয়া।
লিভার ক্যান্সারের কারণ
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস
- তামাক, ধূমপান পান করা
- অ্যালকোহল সেবন
- হেপাটাইটিস বি বা সি
- হেমোক্রোমাটোসিস
অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণা অনুযায়ী, লিভার ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণ হলো হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাস যা দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ। তাই, এই রোগে চিকিৎসা নেওয়া গুরুত্বপূর্ন।
লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা
লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেক গুলো চিকিৎসা পদ্ধতি মাধ্যমে করা যেতে পারে যেমন; সার্জারি, টিউমার অ্যাবলেশন, কেমোথেরাপি, জৈবিক থেরাপি, রেডিয়েশন।
এছাড়া, লিভার ক্যান্সার রোগীর রক্ত পরীক্ষা, এমআরআই স্ক্যান, পিইটি -সিটি স্ক্যান, বায়োপসি এবং অন্যান্য পরীক্ষা করতে হয়। কিভাবে ভালোভাবে কাজ করছে নাকি বা কতটা কাজ করছে তার জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। লিভারে অস্বাভাবিক টিস্যুর আকার এবং অবস্থান দেখার জন্য সবচেয়ে বেশি আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। লিভার ক্যান্সারের জন্য এই পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আরো পড়ূনঃ কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার।
ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ
- ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা শেষ পর্যায়ে প্রায়ই চোখের পাতা বন্ধ করতে পারে না।
- মাথা সামনের দিকে নুয়ে আসে।
- দৃষ্টিশক্তি কমে আসে।
- চোখের পিউপিল কোন প্রতিক্রিয়া করে না। অর্থাৎ, যখন ক্যান্সার রোগীর সামনে আলো বাড়ানো বা কমানো হবে তখন তার চোখের উপর কোন প্রভাব পড়বে না।
- কণ্ঠনালী থেকে গর গর আওয়াজ আসে।
- রোগীরা কথা বলার সময় তাদের মুখ-জিহ্বার প্রতিক্রিয়া কমে যায়।
‘ক্যান্সার’ জার্নালে একটি গবেষনায় বলা হয়েছে তারা প্রায় ৩৫৭ জন ক্যান্সার রোগীর পরীক্ষা করেছে, তার মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ রোগী মারা যায় উপরের এই লক্ষণ গুলোর কারণে। আরো জানা যায়, এই সকল রোগী ৩ দিনের মধ্যে মারা গেছে।
আরো পড়ূনঃ আঁচিল দূর করার ক্রিমের নাম ও ঘরোয়া উপায়।
লিভার রোগের লক্ষণ
- মুখে দুর্গন্ধ হওয়া
- বমি ভাব হওয়া
- হঠাৎ করে ওজন কমে যাবে বা ওজন বৃদ্ধি পাবে
- ঘুমের সমস্যা হবে
- মাথা ব্যথা
- অতিরিক্ত ক্লান্তি লাগে
- জন্ডিস
- প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাওয়া
- চুলকানি
FAQ
লিভার ক্যান্সার কি ভাল হয়?
এখন পর্যন্ত যাদের লিভার ক্যান্সার হয়েছে তাদের মধ্যে অনেক মানুষ এখনো বেঁচে আছে। কোন ব্যক্তি যদি প্রাথমিক পর্যায়ে যদি লিভার ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং সঠিক সময়ের মধ্যে উন্নত চিকিৎসা গ্রহন করা যায় তাহলে সে আরো ৫-২০ বছর পর্যন্ত খুব ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবে। কিন্তু, প্রাথমিক পর্যায়ে যদি এই রোগ ধরা না পড়ে তাহলে এই রোগ খুব ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
লিভার ক্যান্সারের সেরা চিকিৎসা কি?
অনেক গুলো কারণে লিভার ক্যান্সার হতে পারে। ডাক্তার লিভার ক্যান্সারের কারণ এর উপর নির্ভর করে সঠিক চিকিৎসা প্রধান করে। তবে সাধারণত লিভার ক্যান্সারের জন্য সার্জারি, টিউমার অ্যাবলেশন, রেডিয়েশন, কেমোথেরাপি, জৈবিক থেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
ক্যান্সার হলে কি কি খেতে হয়?
ক্যান্সার হলে পানি, মাছ, মাংস, বাদাম, ডিম, ফলমূল, সবুজ শাকসবজি, গাজর, আপেল, ডালিম, তৈলাক্ত মাছ, মসুর ডাল, মটরশুঁটি, গোটা শস্য, তরমুজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার ও স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবার খেতে হবে।
লিভারের জন্য ক্ষতিকর খাবার?
লিভারের জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলো হলো: চিনিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত লবন যুক্ত খাবার, অ্যালকোহল, মিষ্টি জাতীয় খাবার, মদ, ফাস্টফুড, ভাজা ইত্যাদি।
শেষ কথা
আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পেরেছেন লিভার ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে। এছাড়া, লিভার ক্যান্সার ব্যক্তি কি কি খেতে পারবে না, ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা, লিভার ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ ইত্যাদি সকল কিছু এই একটি আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটা আপনাকে উপকার করেছে, ধন্যবাদ।