অতিরিক্ত ঘুম দূর করার উপায়: ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের দিনে ৮-১০ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন এবং একজন প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে ৬-৯ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। আপনি যদি একজন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকেন এবং দিনে ৯ ঘন্টার বেশি ঘুমান তবে এটি অতিরিক্ত ঘুম হিসাবে বিবেচিত হয়।
এবং, আপনি যদি দিনে ৬-৯ ঘন্টা ঘুমান তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। সুস্বাস্থ্যের জন্য একজন ব্যক্তির দিনে ৬ ঘন্টার বেশি এবং ৯ ঘন্টার কম ঘুমানো উচিত। আপনি যদি দিনে ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান তবে আপনি নিজেই আপনার নিজের বিপদ ডেকে আনছেন।
অতিরিক্ত ঘুমের পেছনে অনেক গুলো কারণ থাকতে পারে। আপনি হয়তো অসুস্থ সে কারণে আপনার অতিরিক্ত ঘুম হচ্ছে। ডাক্তার হয়তো আপনাকে ঘুমের ঔষধ বা ঘুম আসে এমন কোন ঔষধ খেতে দিয়েছে, সেক্ষেত্রেও আপনার অতিরিক্ত ঘুম হওয়াটা স্বাভাবিক। এছাড়া বিভিন্ন রোগের কারণে অতিরিক্ত ঘুম হতে পারে।
অসুস্থতার কারণে যদি আপনার অতিরিক্ত ঘুম হয় তাহলে আপনাকে একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। যদি আপনার অতিরিক্ত ঘুমানো একটি অভ্যাস হয়ে থাকে এবং আপনি খুব অলস হন তাহলে অতিরিক্ত ঘুম দূর করার উপায় সম্পর্কে এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন।
Table of Contents
অতিরিক্ত ঘুম দূর করার উপায়
অতিরিক্ত ঘুম দূর করার জন্য প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। গরম চা-কফি পান করুন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অ্যালার্ম সেট করুন। আপনার শোয়ার রুম শান্ত এবং ঠান্ডা রাখুন। সম্ভব হলে দিনের বেলায় ১০-৩০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করুন।
ঘুম কমানোর জন্য কোন ধরনের ঔষধ সেবন করা যাবে না। অতিরিক্ত ঘুম পেলে চোখে-মুখে পানি দেন, তাহলে ঘুম এবং অলসতা কেটে যাবে। ঘুম কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ঘুমানোর ১ ঘণ্টা আগে মোবাইল, ল্যাপটপ ব্যবহার না করা এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অ্যালার্ম সেট করা।
অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়
ঘুম কমানোর উপায় বা অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায় সমূহ গুলো নিচে দেওয়া হলো:
১. ঘুমের রুটিন তৈরি করুন
অতিরিক্ত ঘুম দূর করার জন্য একটি ঘুমের রুটিন তৈরি করুন। সপ্তাহের ছুটির দিনেও এই রুটিন একই থাকতে হবে।
ঘুমানোর সঠিক সময় রাত ১০:৩০ থেকে সকাল ৬:০০ বা রাত ১০:০০ থেকে সকাল ৫:০০। এক কথায়, আপনার রাতে ১০ টা থেকে ১১টার মধ্যে ঘুমাতে যাওয়া উচিত। প্রতিদিন নামাজের নিয়তে ঘুমালে অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
অনেকে রুটিন তৈরি করার পরেও যেটি করে সেটি হলো। ছুটির দিন রুটিন অনুযায়ী না ঘুমানো। অনেকের রাতে যদি ঘুম কম হয় সেটি দুপুরে পুরন করে দেওয়া। যার ফলে ঘুমের নিয়ম এলোমেলো হয়ে যায় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম হয় না। তাই, এই ধরনের ছোট ভুল করা যাবে না।
আরো পড়ুন: রাতে ঘুম না আসলে করণীয় কি?
২. এলার্ম সেট করুন
সকালে নিজে নিজে ঘুম থেকে উঠা অনেক কষ্ট। আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠার জন্য একটি এলার্ম সেট করে রাখুন। আপনি মোবাইল, কম্পিউটার, ঘড়িতে ৬-৮ ঘণ্টার জন্য একটি এলার্ম সেট করতে পারেন।
এছাড়া, আপনি আপনার পরিবারকে অথবা আপনি যার সাথে ঘুমান তাকে নির্দিষ্ট সময়ের ১ ঘণ্টা আগে থেকে মনে করিয়ে দিতে বলুন। ঘুমানোর সময় পাশে ইলেকট্রনিক ডিভাইস না রাখা ভালো।
৩. হালকা ব্যায়াম করুন
হালকা ব্যায়াম করলে দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব দূর হয়। অনেকে আছেন দিনের বেলায় ২-৩ ঘণ্টার জন্য ঘুমান। তারা যদি দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুম দূর করতে চাই তাহলে হালকা ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করলে ওজন কমবে এবং ঘুম ঘুম ভাব দূর হবে।
আরো পড়ুন: ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর ১০টি উপায়।
৪. স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন
ঘুম দূর করার জন্য স্বাস্থ্যকর পুষ্টি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। খাদ্য তালিকায় ফলমূল এবং সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে।
ঘুম ঘুম ভাব দূর করার উপায়
- পানি পান করুন: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে ঘুম ঘুম ভাব দূর হয়ে যাবে। ঘুম ঘুম ভাব দূর করার জন্য পানি ঔষধের মতো কাজ করে। পানি পান করার ফলে আমাদের শরীরের কোষগুলো নতুন ভাবে উজ্জীবিত হয়, যার ফলে দেখবেন ঝিম ঝিম ঘুম বা ঘুম ঘুম ভাব দূর হয়ে গেছে।
- চোখে মুখে পানি দিন: ঘুম ঘুম ভাব দূর করার আরেকটি সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো চোখে মুখে পানি দেওয়া। আপনার যখন ঘুম ঘুম ভাব হবে তখন চোখে পানি দিন দেখবেন কিছুক্ষণের জন্য আপনার ঘুম দূর হয়ে গেছে।
- আরাম করে না বসা: আপনি কোন কাজ করার সময় আরাম করে বসতে পারবেন না। আরাম করে বসার কারণে ঘুম ঘুম ভাব আসতে পারে। যেমন; আপনি পড়াশোনা বা কাজ করার সময় বিছানায় বা ঘুমানোর যায়গা বসতে পারবেন না। এতে আপনার মস্তিষ্ক ঘুমের প্রতি ফোকাস বেশি দিবে। পড়াশোনা করার সময় অথবা কাজ করার সময় টেবিলে সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করুন।
- চুইংগাম বা চকলেট খান: যদিও, আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য চুইংগাম ও চকলেট দুটি ক্ষতিকর। তবে মাঝে মাঝে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব হলে চুইংগাম চাবাতে পারেন।
- হাঁটাহাঁটি করুন: বসে থাকলে শরীরে ঘুম ঘুম ভাব বেড়ে যায়। তাই, যখন ঘুম ঘুম ভাব হবে তখন ৫-১০ মিনিট হাঁটুন। হাঁটার সময় পডকাস্ট শুনতে পারেন। দুটি একসাথে কাজ করবে।
- চা- কফি পান করুন: ঘুম ঘুম ভাব হলে চা বা কফি খান, এটি ঔষধের মতো কাজ করে। চা – কফি খেলে ঘুম কম হয়। এই উপায়টি অনেকে অনুসরণ করে। কারণ, এতে থাকা ক্যাফেইন মস্তিষ্ক সজাগ রাখতে অনেক কার্যকরী।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয়?
অতিরিক্ত ঘুমের কারণ
অতিরিক্ত ঘুমের কারণ সমূহ গুলো হলো:
- কিডনি বা লিভার জনিত সমস্যা।
- ক্যান্সার ও হার্টের রোগ থেকে অতিরিক্ত ঘুম হতে পারে।
- মানসিক চাপ ঘুম ঘুম ভাবের অন্যতম কারণ। তবে কিছু মানসিক চাপ ঘুমকে নষ্ট করতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা।
- ডায়াবেটিসের কারণে অতিরিক্ত ঘুম আসতে পারে।
- ভিটামিন ডি, আয়রন ইত্যাদির অভাবে অতিরিক্ত ঘুম হতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিশ্রম।
- ঘুমানোর আগে অ্যালকোহল / মদ পান করলে।
- বিভিন্ন রোগ।
ঘুমানোর সঠিক সময়
- নবজাতক শিশু দিনে ১১ থেকে ১৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।
- ৪ থেকে ১১ মাস শিশুদের ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
- ১-২ বছর শিশুদের ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
- ৩-৫ বছর শিশুদের ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।
- ৬-১৩ বছর শিশুদের ৯-১১ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।
- ১৪-১৭ বছর বয়সীদের ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।
- প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে ৬-৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন ব্যক্তি না ঘুমিয়ে ১০ দিনের বেশি বাঁচতে পারে না। আবার নিয়মিত ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমালে বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করুন। না হয় ঘুম আপনার বিপদ ডেকে আনতে পারে।
FAQ
অতিরিক্ত ঘুম কেন হয়?
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, প্ৰতিদিন এক নিয়মে না ঘুমানো, কাজের প্রতি অমনোযোগী, অতিরিক্ত পরিশ্রম, ঘুমের ঔষধ, মানসিক সমস্যা, ডায়াবেটিস, মাথায় আঘাত এবং বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে অতিরিক্ত ঘুম হয়।
অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ?
অতিরিক্ত ঘুম ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি, ঘুমের ঘুমের ব্যাধি, হার্ট, ক্যান্সার ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের লক্ষণ।
বেশি ঘুমালে কি হয়?
বেশি ঘুমালে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, স্ট্রোক, কোলেস্টেরলের, ডায়াবেটিস, কোমর ব্যাথা, মাইগ্রেন জনিত সমস্যা, রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া, প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
কিভাবে ঘুম কমানো যায়?
ঘুম কমানোর জন্য নিজেকে সবসময় কাজে ব্যস্ত রাখুন। ঘুম ঘুম ভাব হলে চা, কফি পান করুন এবং চোখে মুখে পানি দিন। এছাড়া, বেশি বেশি পান করুন এবং দিনে ২০ থেকে ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করুন।
৬ ঘন্টা ঘুম কি যথেষ্ট?
১ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের রাতে ৬ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট নয়। তবে, প্রাপ্তবয়স্কদের রাতে ৬ ঘন্টা ঘুম যথেষ্ট।
রাতে কখন ঘুমানো উচিত?
গবেষকদের মতে, রাতে ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে ঘুমানো উচিত। এই সময়টা ঘুমের জন্য আদর্শ সময় হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া, রাতে ১১ টার মধ্যে ঘুমালে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
শেষ কথা
অতিরিক্ত ঘুম দূর করার জন্য অনেকে ঔষধ খেয়ে থাকে। ঘুম দূর করার জন্য এই কাজটি ভুলেও করা যাবে না। ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে ঔষধ সেবন করতে পারেন সমস্যা নেই। তবে, আপনি যদি সঠিক নিয়মে জীবন যাপন করেন তাহলে ওষুধের কোন প্রয়োজন নেই।
খেয়াল রাখবেন আপনার যদি দিনে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম হয় তাহলে এটা স্বাভাবিক। এতে আপনার চিন্তা করার কোন কারণ নেই। যদি ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান এবং সেটি যদি নিয়মিত হয় তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন এবং ঘুম কমানোর উপায় গুলো মেনে চলুন।