কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা

সবাই বেশি পাকা কলা খেতে পছন্দ করে, খুব কম সংখ্যক মানুষ রয়েছে যারা কাঁচা কলা খায়। কিন্তু কাঁচা কলার উপকারিতা যে এত বেশি তা অনেকেই জানেন না। কিন্তু, সব কিছুর উপকারিতার সাথে অপকারিতা ও থাকে। একইভাবে, কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটি রয়েছে।

শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বেই কলার অনেক চাহিদা রয়েছে। কলা এমন একটি ফল যা সারা বছর পাওয়া যায়। কলা খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি কলার অনেক উপকারিতা অনেক। আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল গুলোর মধ্যে কলা অন্যতম।

শুধু আমাদের দেশেই নয় সারা বিশ্বেই কলার চাহিদা রয়েছে। কলা এমন একটি ফল যা সারা বছর পাওয়া যায়। কলা যেমন খেতে সুস্বাদু তেমনি কলার অনেক উপকারিতা রয়েছে। কলা আমাদের দেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ফল।

এই আর্টিকেলে কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে প্রায় কয়েকটি তথ্য আলোচনা করা হয়েছে, যা নিচে দেওয়া হলো।

কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা

উপকারিতা: কাঁচা কলাতে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং বিভিন্ন পুষ্টি গুণাগুণ আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কাঁচা কলা বদহজম সমস্যা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়া, এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং হাড়, চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে।

অপকারিতা: প্রচুর পরিমাণে কাঁচা কলা খেলে বমি, ফোলা ভাব, ক্র্যাম্পিং, এলার্জি, পেটে সমস্যা ও গ্যাস হতে পারে। যাদের আগে থেকে এলার্জি রয়েছে তাদের এলার্জি আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। এছাড়া, সবুজ কলা অতিরিক্ত খেলে দাঁত ও ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

এই কয়েকটি সমস্যা ছাড়া সবুজ কলার তেমন খারাপ দিক নেই। তাই, আপনি যদি প্রতিদিন ১ টি করে কাঁচা কলা খান তাহলে আপনার স্বাস্থ্যের অনেক উন্নতি হবে এবং আপনার শরীরের রোগ কম হবে। অনেকে কাঁচা কলা রান্না করে খেয়ে থাকে। আপনিও চাইলে এভাবে খেতে পারেন।

যাইহোক, কলা বেশি খাবেন না। অতিরিক্ত কলা খাওয়ার ফলে মারাত্বক এলার্জি তৈরি হবে যার ফলে আপনি অনেক কষ্ট পাবেন। এছাড়া, আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত কাঁচা কলা খান, তাহলে এটি বিপরীত হতে পারে। ফলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে।

আরো পড়ুন: সকালে খালি পেটে কি খেলে মোটা হওয়া যায়

কাঁচা কলার উপকারিতা

কাঁচা কলার উপকারিতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নিন।

ওজন কমে

আপনি যদি আপনার ওজন কমাতে চান তাহলে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ১-২ টি করে সবুজ কাঁচা কলা রাখুন। কাঁচা কলা হলো এক ধরনের ফাইবার জাতীয় খাবার। ফাইবার দীর্ঘক্ষণ সময় পেট ভরিয়ে রাখে। এর ফলে পেটের ক্ষুধা কমার কারণে আমরা অনেকটা সময় না খেয়ে থাকতে পারি, ফলে ধীরে ধীরে ওজন ও মেদ কমতে থাকে।

বদ হজম সমস্যা দূর হয়

কাঁচা কলা পেটের খারাপ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। কাঁচা কলায় ফাইবার থাকার কারণে এটি পেটের সমস্যা দূর করতে ও শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত কলা খেলে পেটের সমস্যা ও এলার্জি আর বৃদ্ধি পাবে।

ডায়রিয়া ভালো হয়

পুষ্টি গুণাগুণ সমৃদ্ধ সবুজ কাঁচা কলা ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এছাড়া পেটের নানা সংক্রমণ / ইনফেকশন, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথা ও ক্লান্তি দুর করতে সাহায্য করে। কাঁচা কলা ডায়াবেটিসের সাথে সম্পর্কিত লিভার ও কিডনির সমস্যাও কমাতে সাহায্য করে।

হাড়, চুল এবং ত্বকের জন্য উপকারী

কাঁচা কলাতে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন B6 হাড়কে মজবুত করে এবং ত্বক ও চুলের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই ফলটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমে

কাঁচা কলাতে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম থাকার কারণে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীরের রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ থাকে।

কিডনির ঝুঁকি কমে

নিয়মিত কাঁচা কলা খেলে কিডনির ক্যান্সার এবং কিডনির নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুন: কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

সবুজ কাঁচা কলাতে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন B6 রয়েছে, যার ফলে এটি টাইপ-টু ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অনেক গুরুত্বপূরণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, এতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার বা আঁশ থাকার কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে

কাঁচা কলা রক্তনালী ও ধমনীর উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ডাক্তার কি বলে
  • কাঁচা কলাতে প্রচুর আয়রন থাকে ফলে যাদের হজম শক্তি কম এবং রক্ত স্বল্পতায় ভুগেন তারা কাঁচা কলা বা কাঁচা কলার ভর্তা খেতে পারেন। এছাড়া, যাদের ডায়রিয়া বা আমাশয়ের কারণে পায়খানা হয় এবং আইবিএস রোগ হয় তখন প্রাপ্ত বয়স্ক বা বাচ্চাদের কাঁচা কলা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
— ডাঃ আয়েশা সিদ্দিকা, পুষ্টিবিদ।

কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ

নিচে একটি ১০০ গ্রাম কাঁচা কলার পুষ্টিগুন দেওয়া হলো:

  • চর্বি ০.৩৩ গ্রাম
  • পটাসিয়াম ৩.৫৮ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম ১ মি.গ্রা
  • কার্বোহাইড্রেট ২২.৮৪ গ্রাম
  • ফাইবার ২.৬ গ্রাম
  • প্রোটিন ১.০৯ গ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম
  • আয়রন ০.২৬ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস ২২ মিলিগ্রাম
  • চিনি ১২.৩৩ গ্রাম
  • ভিটামিন সি ৮.৭ মিলিগ্রাম
  • জিঙ্ক ০.১৫ মিলিগ্রাম
  • রিবোফ্লাভিন (B2) ০.০৭৩ মিগ্রা
  • থায়ামিন (B1) ০.০৩১ মিগ্রা
  • ম্যাঙ্গানিজ ০.২৭ মিলিগ্রাম
  • প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (B5) ০.৩৩৪ মিগ্রা
  • নিয়াসিন (বি৩) ০.৬৬৫ মিগ্রা

আরো পড়ুন: আঁশ জাতীয় খাবার কি কি?

গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় মহিলারা কাঁচা কলা খেতে পারবে না। এই সময় কলা খেলে মা ও শিশুর উভয়ের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কলা খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে, হজমের সমস্যা হবে, এলার্জি বৃদ্ধি পাবে এবং বিভিন্ন রোগ হতে পারে।

  • হজমের সমস্যা: যদিও কাঁচা কলা বদ হজম থেকে রক্ষা করে। তবে, যাদের আগে থেকে হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের কাঁচা কলা এড়িয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে গর্বভতী মহিলারা এই খাবার এড়িয়ে যাবেন। এই সময় কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হতে পারে। তবে, সাধারণ মানুষরা চাইলে কলা খেতে পারে।
  • ওজন বৃদ্ধি পাবে: সাধারণত, কাঁচা কলায় তেমন মিষ্টি থাকে না। এরপরেও, কিছু কিছু কাঁচা কলা মিষ্টি হতে পারে। মিষ্টি জাতীয় কলাতে ক্যালোরি ও চিনির পরিমান অনেক বেশি থাকে, ফলে এটি ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় এমনিতে ওজন বৃদ্ধি পাই, তাই কলা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
  • অ্যালার্জি: অতিরিক্ত কাঁচা কলা খেলে মারাত্মক এলার্জি হতে পারে। তাই, গর্ভাবস্থায় কলা না খাওয়া ভালো। অন্যথায়, মা ও সন্তান উভয়ের ক্ষতি হতে পারে।
  • ঘুম বৃদ্ধি পাবে: কলাতে থাকা ভিটামিন বি 6 এর কারণে অতিরিক্ত ঘুম হতে পারে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি, তাই এই সময় কলা এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ।

এরপরে, যদি খুব বেশি কলা খেতে ইচ্ছা করে তাহলে গর্ভাবস্থায় সপ্তাহে ২টির বেশি কলা খাবেন না।

কলার বিশেষ গুনাগুন রয়েছে, তাই যেকোন সময় আমাদের সবার কলা খাওয়া উচিত। কিন্তু, পুষ্টি গুনাগুনের মধ্যে আবার এর ক্ষতিকর দিকও রয়েছে যার ফলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। তাই, চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় কলা এড়িয়ে যাওয়ার পরামশ দিয়ে থাকে। আর যাদের এলার্জি ও ডায়াবেটিস রয়েছে তাদেরও এটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

আরো পড়ুন: কিসমিস খেলে কি ওজন বাড়ে

FAQ

আমি কি প্রতিদিন কাঁচা কলা খেতে পারি?

হ্যাঁ, আপনি প্রতিদিন একটি করে কাঁচা কলা খেতে পারেন। আপনি প্রতিদিন একটি করে কাঁচা কলা খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এছাড়া, কাঁচা কলা ওজন কমাতে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়।

কাঁচা কলা কি আয়রন সমৃদ্ধ?

কাঁচা কলায় কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকলেও এতে আয়রন কম থাকে। একটি ১০০ গ্রাম ওজন কলাতে ০.২৬ মিলিগ্রাম থেকে ০.৪০ গ্রাম পর্যন্ত আয়রন থাকে।

কাঁচা কলা কি লিভারের জন্য ভালো?

হ্যাঁ, কাঁচা কলা লিভারের জন্য ভালো। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসের সাথে যুক্ত কিডনি ও লিভারের জন্য কাঁচা কলা ভালো এবং এটি ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা উন্নত করে।

কাঁচা কলা কি ফ্রিজে রাখা যাবে?

হ্যাঁ, কাঁচা কলা ফ্রিজে রাখা যাবে। কাঁচা কলা ফ্রিজে রাখলে সেটি সহজে পাকে না। যেরকম কলা সেই রকমই থাকে। তবে, আপনি যদি কাঁচা কলা পাকাতে চান তাহলে ফ্রিজে কলা রাখা থেকে বিরত থাকুন।

শেষ কথা

আশা করি আপনি কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনি যদি আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পরে থাকেন, তাহলে জানতে পেরেছেন কাঁচা কলা খাওয়ার অনেক গুলো উপকারিত রয়েছে। কিন্তু, এই সকল উপকারিতার কথা চিন্তা করে যদি আপনি অতিরিক্ত কল খান তাহলে আপনার মারাত্মক বিপদ হতে পারে।

প্রতিদিন ১টি কলা খেলে আপনি সবসময় সুস্থ্য থাকতে পারবেন। তাই ১টি বেশি কলা খাওয়া উচিত না। অতিরিক্ত কলা খেলে এলার্জি মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। আশা করি এই আর্টিকেল থেকে জানতে পেরেছেন কলা খাওয়ার উপকারিত ও প্রতিদিন কয়টি কলা খাওয়া উচিত।

Leave a Comment

error: Content is protected !!