কিসমিস খেলে কি ওজন বাড়ে

অনেকেই জানতে চাই কিসমিস খেলে কি ওজন বাড়ে। অনেকেই বলে কিসমিস খেলে ওজন কমতে পারে আবার ওজন বাড়তেও পারে। এক কথায় বললে কিসমিস খেলে আপনি মোটা হতে পারবেন, যদি সেটা স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে খান। শুকনো অঙ্গুরকে কিসমিস বলা হয়, এটি এক ধরনের শুকনো ফল। এই খাবারের অনেক পুষ্টি গুণাগুণ রয়েছে।

আপনি যদি মোটা হতে চান, তাহলে আজকে থেকে কিসমিস খান। মোটা হওয়ার জন্য কিভাবে কিসমিস খেতে হবে, কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা, কিসমিস খাওয়ার নিয়ম, কিসমিস খেলে কি ওজন কমে, কিসমিস সকালে নাকি রাতে খাওয়া উচিত, ইত্যাদি সকল কিছু প্রশ্নের উত্তর এই আর্টিকেলে দেওয়া হয়েছে।

তাহলে জেনে নিন, কিসমিস খেলে কি ওজন বাড়ে বা কিসমিস খেলে কি মোটা হয়?

কিসমিস খেলে কি ওজন বাড়ে

প্রতিদিন এক মুঠো কিসমিস খেলে ওজন বাড়তে পারে, কারণ কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং ক্যালরি থাকে, যা খুব দ্রুত ওজন বাড়াতে পারে। কেউ যদি নিয়মিত এক মুঠো কিসমিস খায় তাহলে তার শরীরের ওজন কমানো কঠিন হয়ে পড়ে।

ওজন বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত ৩০০ – ৫০০ ক্যালরি গ্রহন করা উচিত, যা ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে পাওয়া যায়। মাত্র ১০০ গ্রাম কিসমিসে ২৯৯ গ্রাম পরিমাণ ক্যালোরি থাকে। এর থেকে বুঝা যায়, ওজন বাড়ানোর জন্য কিসমিস খাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ন।

আপনি যদি প্রতিদিন ১০০ গ্রাম কিসমিস খেতে না পারেন, তাহলে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ গ্রাম পরিমাণ কিসমিস গ্রহন করুন তাহলে ধীরে ধীরে আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাবে। তবে, যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের কিসমিস এড়িয়ে চলা উচিত।

কিসমিসে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। এছাড়া, যাদের চিনি খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় বা ডাক্তার চিনি এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে তাদের কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। ওজন বাড়ানোর জন্য অনেক খাবার রয়েছে, যেগুলো আপনি খেতে পারেন।

আপনি চাইলে নিচের আর্টিকেল গুলো দেখে আসতে পারেন, এখানে আলোচনা করা হয়েছে ওজন বাড়ানোর জন্য বা মোটা হওয়ার জন্য কোন খাবার গুলো খেতে হবে।

কিসমিসের অনেক গুলো সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। নিচে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনার উপকার হবে। এছাড়া, আপনি জানতে পারবেন আপনার কিসমিস খাওয়া উচিত নাকি কিসমিস না খাওয়া উচিত।

কিসমিস খাওয়ার নিয়ম

প্রতিদিন ঘুমানোর আগে রাতে এক গ্লাস পানিতে এক মুঠো কিসমিস ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর, সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে কিসমিস গুলো খেতে হবে। এভাবে প্রতিদিন কিসমিস খেলে হজমশক্তি ও ওজন বাড়তে পারে।

কিসমিস খাওয়ার পর এবার পানি গুলোও খেতে হবে। কারণ, কিসমিসের পানি লিভার পরিষ্কার রাখে ও কিডনি সুস্থ্য থাকে। তাই, কিসমিস খাওয়ার পর কিসমিসের পানিও খাওয়া উচিত।

শরীরের ভালো স্বাস্থ্য ও কিসমিসের সম্পূর্ণ পুষ্টি পাওয়ার জন্য রাতে এক কাপ চর্বিযুক্ত দুধে কিসমিস ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর, কিসমিস গুলো সকালে ঘুম থেকে উঠে খেতে হবে। কিসমিস খাওয়ার পর দুধ গুলোও খেতে হবে। দুধের সাথে কিসমিস মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।

আপনার যদি পানি এবং দুধের সাথে কিসমিস খেতে ইচ্ছা না করে তাহলে আপনি সকালের নাস্তার সাথে কয়েকটি কিসমিস খেতে পারেন। কমপক্ষে ১০-১৫ গ্রাম কিসমিস নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

মিষ্টি জাতীয় নাস্তা যেমন; দই, পায়েস ইত্যাদির উপর কয়েকটি কিসমিস দিয়েও খাওয়া যায়। আপনি আপনার বিকালের নাস্তার সাথে কিসমিস যুক্ত করতে পারেন।

আরো পড়ুন: ফুসফুসের ইনফেকশন দূর করার উপায়

কিসমিস এর উপকারিতা

কিচমিচ খাওয়ার অনেক গুলো উপকারিতা রয়েছে, আসুন জেনে নিন সেগুলো কি কি?

  • ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে
  • উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার
  • হজমশক্তি বাড়ায়
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
  • ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
  • রক্ত শূন্যতা কমায়
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে
  • যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পাবে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে
  • শরীরকে দূষণমুক্ত রাখে
  • দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়
  • বায়ুর সমস্যা দূর হয়

কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে উপরের এই সকল সুবিধা গুলো পাওয়া যাবে, আপনি যদি এই সুবিধা গুলো পেতে চান তাহলে কিসমিস গ্রহণ করুন।

কিশমিশে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বেশি থাকার কারণে এটি রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। এছাড়া, কিসমিসে রয়েছে উচ্চ ক্যালোরি যা আপনার ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

কিসমিসে পর্যাপ্ত পরিমানে ফাইবার ও পটাশিয়াম থাকার কারণে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে আপনি নিয়মিত কিসমিস খেতে পারেন।

আপনি যদি এই সকল সুবিধা ভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে প্রতিদিন রাতে কিসমিস ভিজিয়ে রাখতে এবং সকালে উঠে পানিসহ কিসমিস খেতে হবে। আশা করি, নিয়মিত ৭ দিন খেলে ফলাফল পাওয়া যাবে।

কিসমিস খেলে কি ওজন কমে

কিসমিস খেলে পেট ভরে যায়, এর ফলে সারাদিনে অন্যান্য খাবার কম খাওয়া হয়। যদি আপনার ক্ষেত্রে এই রকম হয় তাহলে আপনার ওজন কমতে পারে। কিন্তু, আপনি যখন কিসমিসের সাথে বাকি খাবার গুলো সঠিক ভাবে খাবেন তখন আপনার ওজন কমবে না বরং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

সাধারণত, রাতে ভিজিয়ে রাখা কিসমিস গুলো সকালে খালি পেটে খাওয়া হয়। এর ফলে পেট সহজে ভরে যায়। স্বাভাবিক ভাবে পেট ভরে গেলে অন্যান্য খাবার গুলো আর খাওয়ার ইচ্ছা থাকে না, তখন ওজন কমে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। সেক্ষত্রে আপনি চাইলে পানি ছাড়া শুধুমাত্র কিসমিস গুলো খেতে পারেন।

সর্বশেষ, কিসমিস খেলে ওজন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। কারণ এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার ও উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার।

আপনি জেনে নিতে পারেন: ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর সেরা ১০ টি উপায় সম্পর্কে

FAQ

শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়?

শুকনো কিসমিস শরীরের জন্য কোন ক্ষতি নয়। কিসমিস আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে রয়েছে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে, উচ্চ ক্যালোরি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে, হজমশক্তি বাড়ায়, যৌন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কিসমিস খেলে কি মোটা হওয়া যায়?

কিসমিস খেলে মোটা হওয়া সম্ভব। কারণ, ১০০ গ্রাম কিসমিসে প্রায় ২৯৯ গ্রাম ক্যালোরি থাকে যা মোটা হতে সাহায্য করে। মোটা হওয়ার জন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত সর্বনিম্ন ৩০০ গ্রাম ক্যালোরি গ্রহণ করতে হয়। আপনি যদি দিনে ১০০ গ্রাম কিসমিস খান তাহলে আপনি ৩০০ গ্রামের কাছাকাছি ক্যালোরি পাবেন যা আপনাকে মোটা হতে সাহায্য করবে।

অতিরিক্ত কিসমিস খেলে কি হয়?

ওজন বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া উচিত না। অতিরিক্ত কিসমিস খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে, পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা হবে, ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যাবে। ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত কিশমিশ খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয়?

কিসমিস শরীরের ত্বক ফর্সা না করলেও, কিসমিস ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে ভিটামিন, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালরি থাকার কারণে এটি শরীরের ত্বক ও স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি হয়?

কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কিসমিসের সম্পূর্ণ পুষ্টি গুনাগুন পাওয়া যায়। রাতে কিসমিস ভিজিয়ে সকালে উঠে খেলে শরীরের অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন; ক্যান্সার, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ইত্যাদি।

প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত?

চিকিসকদের মতে, প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া যেতে পারে।

রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়?

রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে চোখ ভাল থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হাড় মজবুত করে, অনিদ্রা সমস্যা হয় না, রাতে ভালো ঘুম হয়।

সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয়?

সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অনেক। পুষ্টিবিদরা বলে, রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রেখে, সকালে খালি পেটে ঘুম থেকে উঠে খেলে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমে, ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, হজম শক্ত বৃদ্ধি পায়।

আমি কি দিনে ১০০ গ্রাম কিসমিস খেতে পারি?

দিনে ১০০ গ্রাম কিসমিস না খাওয়া ভালো। কারণ, কিসমিস উচ্চ ক্যালোরি ও চিনি জাতীয় খাবার, যা সহজে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। আপনি চাইলে দিনে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম কিসমিস খেতে পারেন। তবে বেশি না খাওয়া ভালো।

কিশমিশ কালো দাগ দূর করতে পারে?

কিসমিস আপনার ত্বকের কালো দাগ কিছুটা দূর করতে সাহায্য করতে পারে। ব্রণের সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই, প্রতিদিন কিসমিসের পানি দিয়ে মুখ ধুয়া উচিত। এতে থাকা ভিটামিন ই ত্বকের জন্য বেশ উপকারী।

কোন ধরনের কিসমিস ভালো?

সবুজ কিসমিসের চাইতে কালো কিসমিস ভালো। এতে পটাশিয়াম এর, ফাইবার ইত্যাদির পরিমাণ বেশি থাকে।

শেষ কথা

কিসমিস খেলে ওজন বাড়ে এটা সত্য, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি ও চিনি রয়েছে। শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হয়। সেদিক দিয়ে কিসমিস খেলে শরীরের ওজন বাড়বে। তবে, এটি অতিরিক্ত খেলে শরীরের ক্ষতি হবে।

কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকার কারণে এটি শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের কিসমিস এড়িয়ে চলতে হবে। আপনি চাইলে সকালে ঘুম থেকে উঠে বা নাস্তার সাথে হালকা কিসমিস খেতে পারেন।

শুধুমাত্র কিসমিস খেলে যে ওজন বাড়ে বিষয়টি তেমন নয়। আরো অনেক ধরনের খাবার রয়েছে যা খেলে ওজন বাড়ে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আপনি চাইলে সে সকল খাবার খেতে পারেন। তাই, অতিরিক্ত কিসমিস খেয়ে নিজের শরীরের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকুন।

আমি “Health Bissoy” ও বাংলাদেশের অনেক ওয়েবসাইটে সহকারী কন্টেন্ট স্ট্রাটেজিস্ট হিসাবে কাজ করি। পড়াশোনার পাশাপাশি আমি একজন এসইও এক্সপার্ট এবং জুনিয়র ওয়েব ডেভেলপার। ২০২৩ সাল থেকে আমি বাংলাদেশের অনেক ওয়েব সাইটে কন্টেন্ট স্ট্রাটেজিস্ট ও ডিজাইনার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।

Leave a Comment

error: Content is protected !!