রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

রক্তশূন্যতা বা রক্তস্বল্পতা একটি সাধারণ রোগ। অনেকেই অ্যানিমিয়া এই রোগকে তেমন মারাত্মক রোগ মনে করে না। কিন্তু, এর থেকেই হতে পারে বড় ধরনের রোগ। শিশুদের থেকে শুরু করে যে কোন বয়সী মানুষের রক্তশূন্যতা বা রক্তস্বল্পতা হতে পারে। তবে, মহিলা ও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে রক্তশূন্যতা বেশি দেখা যায়। রক্তশূন্যতা শরীরের তেমন ক্ষতি করে না। কিন্তু, অবহেলা করা হলে এর ফল মারাত্মক হতে পারে। তাই, রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় বা অ্যানিমিয়া দূর করার উপায় সম্পর্কে আপনার জানা উচিত।

রক্তশূন্যতা দূর করার উপায় সম্পর্কে এই আর্টিকেলে অনেক তথ্য শেয়ার করা হয়েছে। শরীরে রক্ত কমে গেলে শরীরে রক্ত বৃদ্ধির উপায়, রক্তশূন্যতা হলে কি হয় এবং রক্তশূন্যতা বোঝার উপায় ইত্যাদি সম্পর্কেও জানতে পারবেন। অনেকে রক্তশূন্যতা দূর করার ঔষধের নাম সম্পর্কে জানতে চাই। আপনি যদি রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে চলেন তাহলে আপনার ঔষধের প্রয়োজন হবে না। তবে, চিকিৎসকরা রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া দূর করার করার জন্য আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেই।

রক্তশূন্যতা হলো শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত না থাকা। এই রোগ হলে স্বাভাবিকের চাইতে রক্তে লোহিত রক্ত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন কম থাকে অথবা রক্তে অক্সিজেনের বহন করার ক্ষমতা কমে যায়। রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীরা অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ করে, মাথা ব্যাথা হয়, শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় এবং ব্যায়াম করার মতো ক্ষমতা থাকে না।

একজন মহিলার শরীরে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১১.৫ থেকে ১৫.৫ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম। পুরুষের তুলনায় নারীরা অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত বেশি হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। শরীরে আয়রনের অভাবে এই সমস্যা হয়। তাই মেয়েদের বেশি বেশি আয়রন যুক্ত খাবার খেতে হয়। এছাড়া, শরীরের বিভিন্ন রোগ ও অন্যান্য কারণে নারী ও পুরুষ উভয়ের রক্তস্বল্পতা দেখা যায়।

Table of Contents

রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

ঘরোয়া উপায়ে রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য বেশি বেশি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। পালং শাক, কলিজা, খাসির মাংস, মাছ, আঙ্গুর, কমলা, আপেল, টমেটো, কলা, ডাল, দুধ, ডিম, বাদাম, খেজুর কিসমিস, আমলকি ইত্যাদি খেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।

শুধুমাত্র খাবার খাওয়ার মাধ্যমে রক্তস্বল্পতা দূর করা সম্ভব। এর জন্য কোন ধরনের ঔষধের প্রয়োজন হয় না। তবে, ডাক্তারের সাথে দেখা করা ভালো। যাইহোক, যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের বেশি বেশি ফলমূল, শাকসবজি, পুষ্টিকর খাবার এবং যেসব খাবারে বেশি আয়রন রয়েছে সে সকল খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

আরো পড়ুন: কিডনি ব্যথা দূর করার উপায়

রক্তস্বল্পতা দূর করার উপায় | অ্যানিমিয়া দূর করার উপায়

রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো নিচে দেওয়া হলো:

১. আয়রন যুক্ত ফলমূল খেতে হবে

বিভিন্ন ধরনের ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। কমলা, টমেটো, আপেল, বেদানা, আঙ্গুর, গাজর, ইত্যাদি ফলমূলে প্রচুর আয়রন থাকে। প্রতিদিন নিয়মিত ২ থেকে ৩টি ফল খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

২. নিয়মিত খেজুর খাওয়া উচিত

খেজুর পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। তাই, রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য বেশি বেশি খেজুর খাওয়া উচিত। প্রতিদিন সকালের নাস্তায় একটি বা দুটি খেজুর রাখা উচিত। গর্ভবতী নারীদের জন্যেও খেজুর অনেক উপকারী।

৩. দুধ খেতে হবে

অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য দুধ অনেক উপকারী। দুধে বেশি আয়রন না থাকলেও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রক্ত শূন্যতা দূর করার জন্য নিয়মিত দুধ খাওয়া উচিত।

৪. বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়া উচিত

আমাদের শরীরের সকল রোগের চিকিৎসায় শাকসবজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরনের শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যেমন; পালং শাক, কচু শাক, ধনিয়া পাতা, কচুর লতি, লেটুস, ব্রোকলি ইত্যাদি। বিশেষ করে রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য ব্রকলি অনেক উপকারী।

আরো পড়ুন: মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের নাম

৫. সামুদ্রিক মাছ খাওয়া উচিত

মাছে প্রচুর পরিমানে আয়রন আছে, তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় মাছ রাখা উচিত। এছাড়া, সামুদ্রিক চিংড়ি ও কাঁকড়া আয়রনের ভালো উৎস। মাছ আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল ও হার্টের জন্য ভালো। রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য আমাদের মাছ খাওয়া উচিত।

৬. মাংস খাওয়া উচিত

রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য আপনি খাসির মাংস, গরুর মাংস ও হাঁসের মাংস খেতে পারেন। মাংসে প্রচুর পরিমানে আয়রন রয়েছে, তাই আমাদের মাংস খাওয়া উচিত।

৭. সয়াবিন খাওয়া উচতি

রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকার জন্য আমাদের সয়াবিন খাওয়া উচিত। অন্ততপক্ষে সপ্তাহে তিনদিন হলেও আমাদের সয়াবিন খাওয়া উচিত। সয়াবিনে রয়েছে পুষ্টিগুণ, ভিটামিন, সাইট্রিক এসিড ও আয়রন যা রক্ত চলাচলে সাহায্য করে।

আরো পড়ুন: ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ

৮. কলিজা খাওয়া উচিত

প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও আয়রন পাওয়া যায় কলিজাতে । যারা অ্যানিমিয়া রোগে ভুগছেন তাদের বেশি বেশি কলিজা খাওয়া উচিত।

সাধারণত ভিটামিন ও আয়রনের অভাবের কারণে আমাদের রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার মতো রোগ দেখা যায়। তাই, রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য আমাদের বেশি বেশি ভিটামিন ও আয়রন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। যে সকল খাবারে বেশি বেশি ভিটামিন ও আয়রন রয়েছে খাদ্য তালিকায় সেগুলো রাখা উচিত। তাহলে, দ্রুত সময়ের মধ্যে রক্তস্বল্পতা দূর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শিশুর রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য তাদের বেশি বেশি আয়রনসমৃদ্ধ প্রাণিজ খাবারগুলো যেমন; মাংস, ডিম, কলিজা খাওয়াতে হবে। এছাড়া, ফলিক এসিড ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় ফলমূল ও শাকসবজি বেশি বেশি করে খাওয়াতে হবে।

রক্তশূন্যতা দূর করার ঔষধের নাম

Revofer Injection: যাদের রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত তাদের তাদের রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য Revofer Injection ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। এটি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি লিমিটেড কোম্পানির ঔষধ।

ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া Revofer Injection ব্যবহার করা করার অনুমতি দেওয়া হয় না। এর সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলো মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, ইত্যাদি।

রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ

  • নারীদের প্রতি লিটার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১২০ গ্রাম ও পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৩৫ গ্রামের কম হলে এটি রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার লক্ষণ।
  • রক্তশূন্যতা হলে খুব বেশি ক্লান্ত লাগে।
  • অতিরিক্ত চুল পড়ে।
  • হাত-পা ঠান্ডা হয়ে থাকতে পারে।
  • চোখ-মুখ ফ্যাকাশে মনে হতে পারে।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • মাথা ব্যাথা, মাথা ঘোরা।
  • মুখে-ঠোঁটে ঘা।
  • শ্বাসকষ্ট।
  • নারীদের মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।

গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দূর করার উপায়

গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দূর করার তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড ঔষধ বা ট্যাবলেট খেতে হবে। এছাড়া, রক্তে হিমোগ্লোবিন শতকরা ১০ গ্রামের নিচে হলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে দেখা করতে হবে। পাশাপাশি ভিটামিন ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

আরো পড়ুন: কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার

FAQ

রক্তশূন্যতা হলে কি খেতে হবে?

রক্তশূন্যতা হলে ভিটামিন ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি করে খেতে হবে। মাছ, মাংস, ফলমূল (কমলা, টমেটো, আপেল, বেদানা, আঙ্গুর, গাজর), শাকসবজি, কলিজা, ডিম ইত্যাদি খাবার গুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও আয়রন রয়েছে।

অ্যানিমিয়া কিসের অভাবে হয়?

আয়রন ও ভিটামিনের অভাবে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হয়। বিশেষ করে ভিটামিন B12 এর অভাবে রক্তস্বল্পতা দেখা যায়।

কোন সবজি খেলে রক্ত হয়?

কচুশাক, পালং শাক, কচুর লতি, ব্রোকলি, বিট, পুদিনা পাতা, আলু, লেটুস, ধনিয়া পাতা, কচু, ইত্যাদি শরীরে প্রচুর পরিমানে রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে।

কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে?

কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, বেদনা, খেজুর, আপেল, কিসমিস ইত্যাদি ফল গুলো শরীরের রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে।

রক্তশূন্যতা বোঝার উপায় কি?

রক্তশূন্যতা হলে ধীরে ধীরে শরীরের শক্তি কমে আসবে। এই সময় বেশি ক্লান্তি লাগবে, চোখ ঝাপসা দেখাবে, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যাথা ইত্যাদির মতো সমস্যা দেখা যাবে।

কোন মাছ খেলে শরীরে রক্ত হয়?

শিং মাছ খেলে শরীরে বেশি রক্ত উৎপন্ন হয়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ফলিক এসিড রয়েছে। এছাড়া, যেকোন সামুদ্রিক মাছ রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয়?

ভিটামিন B12 এর অভাবে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়?

সাধারণত, রক্তে হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে অতিরিক্ত কম হলে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যদি প্রতি ডেসিলিটারে ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রামের চাইতে অতিরিক্ত কম হয় এবং মেয়েদের ১১.৫ থেকে ১৫.৫ গ্রামের চাইতে অতিরিক্ত কম হয় তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত দিতে হবে।

শেষ কথা

আশা করি যাদের অ্যানিমিয়া রোগের সমস্যা রয়েছে তারা রক্তশূন্যতা দূর করার উপায় গুলো মেনে চললে খুব দ্রুত রক্তস্বল্পতা থেকে মুক্তি পাবেন। রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য ভিটামিন ও আয়রন যুক্ত খাবারের কোন বিকল্প নেই। তাই বেশি বেশি আয়রন ও ভিটামিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। যাইহোক, এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment

error: Content is protected !!