শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না

শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি এমন একটি রোগ এটি মাঝে মাঝে বা যেকোন সময় যে কারো হতে পারে। পৃথিবীতে শ্বাসকষ্ট রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্বাসকষ্ট এর কারণে অনেকে ঘেমে যায় এবং শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়। বিশেষজ্ঞরা এই সময় কিছু কিছু খাবার এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেই। তাই, যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় তাদের জানা উচিত শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না এবং শ্বাসকষ্ট হলে কি খেতে হবে। শ্বাসকষ্ট হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খেতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সময় কিছু কিছু খাবার খাওয়ার কারণে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই, হাঁপানি রোগীদের অবশ্যই খাবারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং চিকিৎসকের কাছ থেকে শ্বাসকষ্ট হলে কি খেলে ভালো হবে এবং এজমা হলে কি কি খাওয়া নিষেধ সেটি জেনে না নিতে হবে। যাইহোক, সাধারণত শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না তার কিছু তালিকা এখানে দেওয়া হলো।

শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না

শ্বাসকষ্ট বা এজমা হলে কি কি খাওয়া নিষেধ জেনে নিন।

  1. যেসব খাবার খেলে গ্যাস হয়: বাঁধাকপি, চর্বিযুক্ত খাবার, ফুলকপি, দুধের তৈরি খাবার, রসুন, আটার রুটি, ভাজা খাবার, কোমল পানীয়, মটরশুঁটি, বাদাম, পেঁয়াজ, আচার, বিনজাতীয় সবজি ইত্যাদি খেলে পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অন্ততপক্ষে এজমা বা শ্বাসকষ্ট হলে এই খাবার গুলো এড়িয়ে চলা উচিত। না হয় এই খাবার গুলো শ্বাসকষ্ট আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
  2. চা ও কফি: এই সকল খাবারে স্যালিসাইলেট নামক পদার্থ থাকে, যার ফলে এগুলো সহজে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে। তবে, চা ও কফি দেহের প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তারপরেও, শ্বাসকষ্ট রোগীদের চা ও কফি এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
  3. কৃত্রিম উপাদান খাবার: শ্বাসকষ্ট রোগীদের অবশ্যই কৃত্রিম উপাদান খাবার যেমন; ফাস্টফুড, ফুড ফ্লেবার, ফুড কালার, ইত্যাদি এড়িয়ে যেতে হৰে। এগুলো শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
  4. চীনাবাদাম: আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন সকালে একটি বা দুটি চীনাবাদাম খাওয়া উচিত। চীনাবাদাম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু, গবেষণায় দেখা গেছে যে চীনাবাদাম শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
  5. টক জাতীয় ফল: বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের এলার্জি ও হাঁপানির সমস্যা রয়েছে তাদের টক জাতীয় ফল খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন: লেবু, কমলা, মাল্টা, জলপাই ইত্যাদি টক জাতীয় খাবার হাঁপানি থাকা অবস্থায় এড়িয়ে যেতে হবে। যদিও, এই সকল খাবারে ভিটামিন-সি পরিপূর্ণ থাকে।
  6. সালফাইটস: এটি শ্বাসকষ্টের লক্ষণগুলো আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। বিভিন্ন ধরনের খাবারে সালফাইটস পাওয়া যায়, যেমন; শুকনো ফল, আচার যুক্ত খাবার, মদ, চিংড়ি, লেবুর জুস ইত্যাদি। রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য সালফাইটস জাতীয় খাবার এড়িয়ে যেতে হবে।
  7. লবণ এবং লবণ যুক্ত খাবার: অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে গলা ফুলে যেতে পারে, ফলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হবে। তাই, অতিরিক্ত লবন খাওয়া উচিত না।
  8. মরিচ-মসলাযুক্ত খাবার: হাঁপানি বা এজমা হলে মরিচ-মসলাযুক্ত খাবার কমিয়ে দিতে হবে। না হলে এটি শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
  9. চিংড়ি মাছ: এই মাছে প্রচুর পরিমাণে সালফাইট থাকে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট রোগীদের সমস্যা বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে শীতকালে চিংড়ি মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  10. মাছ ও ডিম: হাঁপানি রোগীদের কিছুদিন মাছ ও ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। যদিও, এই সকল খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তারপরেও, কিছু কিছু চিকিৎসকরা হাঁপানি রোগীদের ডিম ও মাছ খাওয়া এড়িয়ে যেতে বলে।
  11. ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: মাছে থাকে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা শ্বাসকষ্ট রোগীদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। যদিও, এটি আমাদের শরীরের জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। কিন্তু, চিকিৎসকদের মতে হাঁপানি রোগীদের ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

আরো পড়ুন: রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় | শ্বাসকষ্ট হলে ঘরোয়া চিকিৎসা

হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়ে। কারণ শ্বাসকষ্ট হলেই ফুসফুস ও হৃদরোগের জটিলতা দেখা দেয়, যার ফলে এই রোগকে অনেকে ভয় পায়। তাই জানা উচিত শ্বাসকষ্ট হলে কি খেলে ভালো হবে? এবং দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায়।

শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়:

  • শ্বাসকষ্ট হলে ধূমপান বন্ধ করতে হবে এবং ধূমপান করা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • হালকা সরিষা তেল গরম করে নিয়ে গলা থেকে শুরু করে বুকে ও পিঠে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে।
  • ঘুমানোর সময় পোষা প্রাণী যেমন; বিড়াল, কুকুর ইত্যাদি প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।
  • বায়ু দূষণ, অপরিষ্কার ও ময়লা আবর্জনা পরিবেশে বসবাস করা যাবে না। এগুলো থেকে বাঁচতে মুখে মাস্ক পড়তে হবে এবং বাড়ি ঘর সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • নিয়মিত শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে।
  • মাথার দিকটা উঁচু করে কাত হয়ে ঘুমালে শ্বাসকষ্ট অনেকটা কমে আসে।
  • খাবার খাওয়ার সময় ধীরে ধীরে ও চিবিয়ে খেতে হবে।

শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়াম

শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম: প্রথমে চেয়ারে কিংবা মেঝেতে যেকোন আরামদায়ক স্থানে পিঠ/মেরুদণ্ড, ঘাড় সোজা করে বসুন। এরপর, ধীরে ধীরে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন এবং আপনার পেটটি বাতাসের সাথে পূর্ণ করুন। তারপর, ৫ সেকেন্ড এর জন্য মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ফেলুন। এভাবে, কয়েকবার করুন তাহলে ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট দূর হয়ে যাবে।

আরো পড়ুন: মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের নাম

FAQ:

শ্বাসকষ্ট হলে কি খেলে ভালো হবে?

শ্বাসকষ্ট হলে গরম পানি খাওয়া উচিত। কারণ, গরম পানি শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। বেশি উপকার পাওয়ার জন্য আপনি গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া, প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খেতে হবে এবং সামুদ্রিক মাছ, মধু ইত্যাদি খেলে শ্বাসকষ্ট ভালো হয়।

শ্বাসকষ্ট হলে কি ওষুধ খেতে হয়?

শ্বাসকষ্ট হলে সেটি তাৎক্ষনিক ভালো করার জন্য বিশেষ কিছু ওষুধ রয়েছে। যেমন; সালবিউটামল, ফরমোটেরল, সালমেটেরল এই ঔষধ গুলো হাঁপানির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

শ্বাসকষ্ট কত প্রকার ও কি কি?

শ্বাসকষ্ট সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন; ১. অ্যাকিউট বা তীব্র ধরনের। ২. ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট। অ্যাকিউট এই ধরনের শ্বাসকষ্টে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। ক্রনিক এই ধরনের শ্বাসকষ্ট ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

শেষ কথা

শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না সেটা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি আপনি এই আর্টিকেল থেকে শ্বাসকষ্ট হলে কি খেতে হবে এবং এজমা হলে কি খাওয়া নিষেধ সকল কিছু জানতে পেরেছেন। শ্বাসকষ্ট খুব জটিল একটি রোগ, তাই এটিকে অবহেলা করলে হবে না। এই সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খেতে হবে।

আমি “Health Bissoy” ও বাংলাদেশের অনেক ওয়েবসাইটে সহকারী কন্টেন্ট স্ট্রাটেজিস্ট হিসাবে কাজ করি। পড়াশোনার পাশাপাশি আমি একজন এসইও এক্সপার্ট এবং জুনিয়র ওয়েব ডেভেলপার। ২০২৩ সাল থেকে আমি বাংলাদেশের অনেক ওয়েব সাইটে কন্টেন্ট স্ট্রাটেজিস্ট ও ডিজাইনার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।

Leave a Comment

error: Content is protected !!