গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে পেট ব্যথা – গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক। এই সময় নারীরা পেট ব্যথা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। কেন গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হয় সেটি আপনি এই আর্টিকেল থেকে সম্পূর্ণ জানতে পারবেন। তবে জেনে রাখুন এই সময় এগুলো সাধারণ বিষয় তাই চিন্তার কারণ নেই। প্রতিটি গর্ভবতী নারী এই সমস্যায় ভুগছেন।
আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে, গর্ভাবস্থায় পেট ব্যাথা কারণ এবং গর্ভাবস্থায় পেট ব্যাথা হলে করণীয়। আপনি যদি একজন গর্ভবতী মহিলা হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে এগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। কারণ, অনেকে এই সময় অতিরিক্ত চিন্তা করে থাকে এর ফলে বাচ্চার এবং মায়ের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হয়। তাই, গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে পেটে ব্যথা হলে কি করবেন জেনে নিন।
Table of Contents
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে পেট ব্যথা হওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস শিশু দ্রুত বড় হওয়ার কারণে জরায়ু চারপাশে চাপ অনুভব হবে। এর ফলে গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হওয়া এবং মাঝে মাঝে পেটে তীব্র ব্যথা লাগতে পারে। মূলত, জরায়ুর পেশিগুলো দীর্ঘায়িত ও প্রসারিত হওয়ার কারণে গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে পেট ব্যথা হয়। এই সময় পেটে ব্যথা হওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। তাই, অতিরিক্ত চিন্তা করার কোন কারণ নেই।
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে প্রায় আপনার পিরিয়ডের মতো অনেকটা ব্যথা অনুভব হতে পারে, যা খুবই সাধারণ একটি বিষয়। এই সময় আপনার হরমোনের পরিবর্তন হবে এবং ক্রমবর্ধমান গর্ভের কারণে আপনি গর্ভাবস্থায় পেটে ব্যথা পেতে পারেন। পেটের ব্যথা খুব অতিরিক্ত মাত্রায় না হওয়া পর্যন্ত এটা স্বাভাবিক, যদি ব্যথা আপনার ধৈর্যের বাইরে চলে যায় তাহলে চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় পেটের ব্যথা অনেক কারণে হয়ে থাকতে পারে। কিছু কিছু কারণ রয়েছে যেমন; হরমোনের পরিবর্তন হলে ব্যথা হবে। এভাবে আরো কিছু কারণ রয়েছে যা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু, এমন ও কিছু কারণ রয়েছে যার ফলে অতিরিক্ত মাত্রায় পেটে ব্যথা হয়। যেমন; পিত্তথলি সমস্যা, মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং কিডনিতে পাথর হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা করে কেন
গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হওয়ার অনেক গুলো কারণ রয়েছে তার মধ্যে বিশেষ কিছু কারণ হলো ক্র্যাম্পিং, লিগামেন্টের ব্যথা, ইমপ্ল্যান্টেশন, পেট ফাঁপা, পেটে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, যৌন উত্তেজনা, ইত্যাদি। এছাড়াও, জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ হলে, প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা খুব গুরুত্বর হয়ে থাকে। সাধারণত, গর্ভাবস্থায় শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে ও পেটের ব্যথা বাড়তে থাকে।
গর্ভাবস্থার প্রথম মাস থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত মহিলাদের শরীরের পরিবর্তন গঠতে দেখা যায়। বিশেষ করে মহিলাদের ১৮ থেকে ২৪ সপ্তাহ গর্ভকালীনের এই সময়ে জরায়ুর হাড়ের প্রসারন ঘটে। এর ফলে, গর্ভাবস্থায় তলপেটে অনেক বেশি ব্যথা হয়। কিছু কিছু মহিলাদের পেটের বাম পাশে অথবা পেটের ডান পাশে ব্যথা হয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেটের উভয় দিকে খুব যন্ত্রণা হয়।
পেট ব্যথা হওয়ার কারণ (Pregnancy)
- ক্র্যাম্পিং বা পেট কামড়ানো: সাধারণত, দিন যত যায় গর্ভের শিশু ও ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে জরায়ু প্রসারিত হতে থাকে। জরায়ু যখন প্রসারিত হয় তখন পেটের অন্যান্য অঙ্গের সাথে এটির চাপ পড়ে। এর ফলে, পেট ব্যথা হয়ে থাকে। হঠাৎ এই ব্যথা খুব তৃব্য আকারে হতে পারে। এই সময় হজমের ও সমস্যা হতে দেখা যায়, কারণ সন্তান বড় হওয়ার কারণে পরিপাক নালীর ওপর চাপ পড়ে এবং পেট ফাঁপা হয়ে থাকে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য: গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথার অন্যতম কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। গর্ভাবস্থায় মেয়েদের হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন হতে থাকে। যার ফলে খাবার হজম এবং মল তেগের করতে দেরি হয়। এই কারণে মহিলাদের গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দেয়।
- অর্গাজম: গর্ভাবস্থায় সহবাস করার সময় পেট ব্যথা হওয়া অথবা পেট কামড়ানো স্বাভাবিক বিষয়। এছাড়া, সহবাসের সময় কোমর ব্যথা হতে পারে। সহবাস করার সময় তলপেটের রক্ত প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে মূলত পেট ব্যথা হয়। বিশেষজ্ঞরা, প্রথম তিন মাস এবং শেষের দুই মাস সহবাস না করার নির্দেশ দেয়। যদি কারো থেকে খুব বেশি সহবাস করার ইচ্ছা হয় তাহলে সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। তবে সন্তানের ভালো চাইলে প্রথম তিন মাস এবং শেষের দুই মাস সহবাস না করা ভালো।
- এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি: জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণকে ডাক্তারি ভাষায় এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বলে। সাধারণত, স্বাভাবিক ভাবে ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মিলনের ফলে জরায়ুর ভেতরে ভ্রূণ সৃষ্টি হয়। অনেক সময় সেটি জরায়ুর বাইরে স্থাপিত হয়, এ অবস্থাকে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বলে। এর কারণে পেট ব্যথা হওয়ার পাশাপশি বাচ্চাকে বাঁচানো অনেকটা অসম্ভব হয়ে যায়। তাই, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি ট্রিটমেন্ট নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ন।
- প্রস্রাবের ইনফেকশন: সাধারণত গর্ভবতী মেয়েরা সবচেয়ে বেশি যে ঝুঁকিতে থাকে সেটি হলো প্রস্রাবের ইনফেকশন। এর ফলে, পেট ব্যথা থেকে শুরু করে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, রক্ত যাওয়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে।
- কিডনির পাথর: গর্ভাবস্থায় কিডনিতে পাথর হলে পেটের যেকোনো এক পাশে খুব বেশি ব্যথা হতে পারে এবং পাশাপাশি বমি বমি ভাব হয়। অ্যাপেন্ডিসাইটিস ব্যথা হলেও একই সমস্যা হতে পারে।
- গর্ভপাত: গর্ভের শিশুর মৃত্যুকে গর্ভপাত বলে। এই সময় পেট কামড়ানো এবং পেট ব্যথা হতে পারে। এছাড়া, আরো যে লক্ষণ গুলো রয়েছে সেগুলো হলো জ্বর, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি।
- লিগামেন্ট স্ট্রেন: গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে শিশু ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন শিশু বৃদ্ধির সাথে সাথে তলপেটে অতিরিক্ত ওজন হয়ে যায়। যা তলপেটের লিগামেন্ট বা পেশীগুলো চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফলে তখন পেটে ব্যথা অনুভূতি হয়।
গর্ভাবস্থায় পেট ব্যাথা হলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় পেট ব্যাথা হলে বেশি বেশি বিশ্রাম নিতে হবে। যতটুকু সম্ভব হাঁটার চেষ্টা করেন। বেশিক্ষণ এক পাশ হয়ে শুয়ে থাকা যাবে না। গর্ভাবস্থায় কিছু মৃদু ব্যায়াম করলে ব্যথা অনেকটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনি চাইলে যোগব্যায়াম করতে পারেন বা হাঁটতে পারেন, যা আপনার পেশীকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করবে। প্রেগন্যান্সি সাপোর্ট বেল্ট পেট ব্যাথার জন্য অনেক কার্যকরী।
গর্ভাবস্থায় পেট ব্যাথা যদি গ্যাস বা পেট ফাঁপার কারণে হয়ে থাকে তাহলে বেশি বেশি পানি পান করুন এবং অল্প অল্প করে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর প্রতিদিন ৮–১২ গ্লাস পানি পান করা উচিত। পানি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেক উপকারী। ভাজা, চর্বিযুক্ত খাবার এবং নেশা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। সম্ভব হলে হালকা হালকা ব্যায়াম করুন, গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম অনেক কার্যকরী।
গর্ভাবস্থায় ব্র্যাক্সটন হিক্স সংকোচন হলে সাথে সাথে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। যদি আপনার ব্র্যাক্সটন হিক্স সংকোচন হয় তাহলে আপনি দাড়িয়ে থাকলে শুয়ে পড়বেন এবং শুয়ে থাকলে বসে যাবেন। আপনি যদি মনে করেন আপনার পেটের ব্যাথা রাউন্ড লিগামেন্ট অথবা ইমপ্লান্টেশন এর কারণে হচ্ছে তাহলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে। এমনিতে এই সময় অনেক বিশ্রামের প্রয়োজন, তবে ব্যায়াম করতে ভুলবেন না।
গর্ভাবস্থায় পেট ব্যাথা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, পেট ব্যথা যদি অতিরিক্ত হয়ে থাকে, যোনিতে রক্তপাত, কিছুক্ষণ পর পর ব্যথা, কোমর ব্যথা, প্রস্রাবের সমস্যা, জ্বর, বমি বমি ভাব, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। সাধারণত যে সকল পেট ব্যথা স্বাভাবিক হয়ে থাকে সেগুলো ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে ভালো হয়ে যায়, যদি এর মধ্যে ভালো না হয় তাহলে ডাক্তার দেখানো বাধ্যতামূলক। অন্যতায় মা এবং শিশুর বড় ক্ষতি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পেট ব্যাথা স্বাভাবিক বিষয়। হয়তো কারো ক্ষেত্রে একটু বেশি বা একটু কম হতে পারে। তবে, স্বাভাবিক ভাবে প্রায় গর্ভবতী মহিলাদের পেট ব্যথা হতে পারে। এই পেট ব্যথা থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়ার জন্য অবশ্যই এই কয়েকটি বিষয় মেনে চলতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার।
গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন
গর্ভাবস্থায় জরায়ু বড় হওয়ার সাথে সাথে প্রথম এবং দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে স্বাভাবিক ভাবে পেট শক্ত হতে থাকে। এছাড়া, প্রসবের কারণে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে পেট শক্ত হওয়ার অনুভূতি হতে পারে। তবে, শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে আপনি পেটে টান টান অনুভব করবেন তাই আপনার মনে হবে আপনার পেট শক্ত হয়ে আছে। অনেক সময় সিজারের পর পেট শক্ত হয়ে থাকে, তাই এই সময় চিন্তার কারণ নেই।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রথম ত্রৈমাসিকে পেট শক্ত হওয়া অনেকটা গর্ভপাতের লক্ষণ। যদিও এটি কোন নির্দিষ্ট লক্ষণ নয়। তবে, এই সময় নিয়মিত প্রেগনেন্সি ট্রিটমেন্ট করানো উচিত। বাচ্চা এবং মায়ের সুস্থতার জন্য চিকিৎসা অনেক প্রয়োজনীয়। যাইহোক, গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হবেই এটিই স্বাভাবিক তাই চিন্তার কারণ নেই।
গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় যদি আপনার পেট শক্ত হয়ে যায়, তাহলে ঘরোয়া উপায় গুলো অনুসরণ করুন:
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন: পানির অভাবে পেটে টান টান বা পেট ব্যথা হতে পারে এবং পানির অভাবে পানিশূন্যতাও দেখা দিতে পারে। তাই, দিনে কমপক্ষে ৭-৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। কিন্তু, এই বিষয়ে যদি আপনার ডাক্তার আপনাকে কোন পরামর্শ দিয়ে থাকে তাহলে সেটি পালন করবেন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: গর্ভাবস্থায় নানা রকম জটিলতা থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করা অনেক গুরুত্বপূর্ন। গবেষনায় দেখা গেছে, যারা গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করে তাদের নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এছাড়া খাবার হজমে সাহায্য করে এবং পেট ব্যথা কমিয়ে দেই। গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক ভাবে ওজন বেড়ে যায়, তাই এখান থেকে ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে জেনে নিন। যদি আপনার ডাক্তার ব্যায়াম করার জন্য নিষেধ করে তাহলে দরকার নেই।
- পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন: এই সময় ব্যায়াম ও ঘুম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একজন ব্যক্তির দিনে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। আর একজন গর্ভবতী মহিলা যদি গর্ভাবস্থায় ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম না যায় তাহলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান: এই সময় খাবারের ব্যপারে অনেক সচেতন হওয়া উচিত। বেশি বেশি ফাইবার বা অশযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পেট শক্ত হলে অল্প অল্প করে কয়েকবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। সঠিক এবং সুস্থ খাবারের দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে, ভাঁজা-পোড়া ও কোমল পানীয় কখনো খাবেন না। আশ জাতীয় খাবার কোনগুলো এখান থেকে জেনে নিন।
- গরম সেঁক দিন: গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে আপনি চাইলে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন অথবা মালিশ করে নিতে পারেন। ব্যায়ামের পাশাপাশি মালিশের উপকার রয়েছে। তাই, আপনি এই দুটি নিয়মিত করতে পারেন। কিন্তু, খুব বেশি পরিমাণে গরম পানি ব্যবহার করতে পারবেন না।
- ডাক্তারের কাছে যান: গর্ভাবস্থায় মাঝে মাঝে ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকআপ করা ভালো। এই সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হয়। যদি, পেট অতিরিক্ত শক্ত হয় এবং ব্যথা করে থাকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান। সর্বশেষ, আপনি কি খাবেন এবং কি খাবেন না সেটি জেনে নিন।
আরো পড়ুনঃ আঁচিল দূর করার ক্রিমের নাম ও ঘরোয়া উপায়।
গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস আপনাকে যে লক্ষণ গুলো খেয়াল রাখতে হবে
গর্ভাবস্থায় শারীরিক পরবর্তীনের পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্লান্তি, বমিভাব, পেট ব্যাথা, পেট মুচড়ানো, বুক জ্বালাপোড়া, খাবারের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভধারণের প্রথম থেকেই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জীবনযাপন করা অনেক গুরুত্বপূর্ন। প্রথম দিকে মাসে অন্তত এক বার হলেও ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। এছাড়া, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে। যেমন; ওজন পরীক্ষা, পেট পরীক্ষা ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় হালকা ব্যথা, মাঝে মাঝে ব্যাথা, হঠাৎ ব্যাথা সব কিছু অনুভব করবেন। এই সময় প্রস্রাবের সমস্যা এবং রক্তস্রাব হতে পারে। তাই, প্রথম থেকে সঠিক জীবনযাপন করা অতি উত্তম। এই সময় হালকা শরীরচর্চার গুরুত্ব অনেক। ধূমপান ও মদ্যপান এই দুটি থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর আগে অবশ্যই রাতে ব্রাশ করে শুবেন। ঘুম থেকে উঠে সবার প্রথমে ব্রাশ না করে বা মুখ না দিয়ে কিছুক্ষণ খালি পেটে বসে থাকলে বমি ভাব কমে যাবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে তরল জাতীয় খাবার না খেয়ে, শুকনা জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। বার বার বলা হচ্ছে গর্ভাবস্থায় অল্প অল্প করে খাবার খাবেন। এর মানে খাবার কম খেতে বলছি না, আপনি যা খাবেন সেগুলো একসাথে না খেয়ে অল্প অল্প করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
গর্ভাবস্থায় আপনি যদি দেখেন আপনার অতিরিক্ত মাথা ঘুরাচ্ছে, রক্তস্রাব হচ্ছে, খুব দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অতিরিক্ত পরিমাণে পেটে ব্যথা হচ্ছে তাহলে মনে করবেন আপনি বিপদ সীমার মধ্যে রয়েছেন। তাই, এই লক্ষণ গুলো দেখলে আপনি চিকিৎসকের সাথে কথা বলবেন।
FAQ
গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন?
স্বাভাবিক ভাবে একটি জরায়ু ছয় সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় এই জরায়ু ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এটি ৯ মাসে সর্বোচ্চ ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। মূলত জরায়ু এভাবে বড় হওয়ার কারণে গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয়। যদি এমন হয় কিছুক্ষণ ব্যাথা হয়ে আবার চলে যাচ্ছে এবং রক্তপাত হচ্ছে তাহলে আপনাকে চিকিৎসা নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় পেট বড় হয় কখন?
সাধারণত ৪ থেকে ৫ মাস পর গর্ভাবস্থায় পেটের আকার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। যদি, গর্ভাবস্থায় আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকে তাহলে আপনি পেটের পরিবর্তন বুঝতে পারবেন। এই সময় আপনি আপনার পেটের বাচ্চার নড়াচড়া টের পাবেন। যার অনুভূতি টা মৃদু কম্পনের মতো হবে। গর্ভাবস্থায় পেট বড় হওয়া স্বাভাবিক, চিন্তার কারণ নেই।
গর্ভাবস্থায় পেটের ডান পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ কি?
গর্ভাবস্থায় যদি আপনার অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সমস্যা হয় তাহলে আপনি পেটের ডান পাশে ব্যথা পেতে পাবেন। এটি অনেক ভয়াবহ হয়ে থাকে, তাই দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এই সময় বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি হতে পারে। যদি আপনার অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সমস্যা না থাকে তাহলে আপনি কিছুক্ষণ ধৈর্য্য নিয়ে বসে থাকতে পারেন না ব্যায়াম করতে পারেন তাহলে আপনার ডান পাশে ব্যথা চলে যাবে।
গর্ভাবস্থায় কোন মাস থেকে পেট ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক?
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাস থেকে পেট ব্যথা হওয়া সম্পূর্ন স্বাভাবিক একটি বিষয়। জরায়ু বড় হওয়ার সাথে সাথে এই ব্যথা হালকা হালকা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে, চিন্তার কারণ নেই এই ব্যথা সাময়িক সময়ের জন্য হয়ে থাকে। আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে পারেন তাহলে ব্যথা কম পাবেন।
শেষ কথা
গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হয় কেন এবং গর্ভাবস্থায় পেট ব্যাথা হলে কি করতে হবে সব গুলো তথ্য এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় আপনার কি করা উচিৎ সেটাও এখানে বলা হয়েছে তাই আর্টিকেলটা আপনার শেষ পর্যন্ত পড়া উচিত। প্রেগনেন্সি সম্পর্কে আপনি নিয়মিত আপডেট পেতে “Health Bissoy” ওয়েবসাইট এ নিয়মিত ভিজিট করুন।