আঁশ জাতীয় খাবার কি কি । আশ জাতীয় খাবার কোনগুলো

আঁশ বা ফাইবার যুক্ত খাবার আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ন। আশযুক্ত খাবার শরীরের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে যেমন; কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্যান্সার এবং বদহজম ইত্যাদি। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদির মতো আরো অনেক ধরনের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত আশ জাতীয় খাবার খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। এই আর্টিকেলে আঁশ জাতীয় খাবার কি কি এবং আশযুক্ত খাবার কোনগুলি এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

আঁশ জাতীয় খাবার কি কি । আশ জাতীয় খাবার কোনগুলো

ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবারের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি এবং ফলমূল যেমন; মুলা শাক, কচুশাক, পুঁইশাক, পুদিনা পাতা, কলমি শাক, ডাটা শাক, আগা ডোগা শাক, মিষ্টি আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, কচু, কলার মোচা, গাজর, বেগুন, পটল, মটরশুঁটি, সাজনা, ঢেঁড়স, ওলকপি, ডাল, ছোলা, মটর, বাদাম, নাশপাতি, আপেল, স্ট্রবেরি, কমলা, পেয়ারা, নারকেল, পাকা (আম, টমেটো, কাঠাল) ইত্যাদি।

উল্লেখিত আশযুক্ত খাবার গুলোর মধ্যে আরো অনেক খাবার রয়েছে। যে সকল খাবারে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার রয়েছে সে সকল খাবারের নাম এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকের কাছে এগুলো অনেক সাধারণ খাবার। আমরা সবাই প্রতিদিন এই সকল খাবার গুলোর মধ্যে অন্ততপক্ষে একটি হলেও খেয়ে থাকি।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ ব্যক্তির দিনে সর্বনিম্ন ৩০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং লিভারের রোগী ব্যক্তির আরো বেশি পরিমাণে আঁশযুক্ত খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। আমাদের শাকসবজি এবং ফলমূল থেকে সবচেয়ে বেশি আঁশ বা ফাইবার গ্রহন করা উচিত।

আঁশ বা ফাইবার কি?

উদ্ভিদ হতে প্রাপ্ত খাবারের যে অংশ টুকু আমাদের পরিপাকতন্ত্র হজম করতে পারে না, সেই অংশটুকুকে বলা হয় আঁশ যুক্ত বা ফাইবার জাতীয় খাবার। ফাইবার প্রধানত একটি কার্বোহাইড্রেট। ফাইবারযুক্ত খাবার পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।

আরো পড়ূনঃ কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার

আঁশ জাতীয় খাবার তালিকা

নিচে ফলমূল ও শাকসবজি, খাদ্যশস্য, ডাল ইত্যাদি কয়েকটি ধাপে আঁশ জাতীয় খাবার তালিকা দেওয়া হয়েছে।

  • শাকসবজি: কলমি শাক, কচু শাক, মুলা শাক, ডাঁটা শাক, পুঁই শাক, পুদিনা পাতা, বাঁধাকপি, গাজর, ঢেঁড়স, সাজনা, ওলকপি, ফুলকপি, কচু, বরবটি, বেগুন, ডাঁটা, শিম, পটল, মটরশুঁটি ইত্যাদি।
  • ফলমূল: পেয়ারা, কামরাঙ্গা, আপেল, কাঁঠাল, পাকা আম, পাকা টমেটো, কামরাঙ্গা, পেয়ারা, আমড়া, নারকেল, বেল ইত্যাদি।
  • ডাল, ছোলা, মটর, শিমের বিচিতে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার রয়েছে।
  • বাদাম: চিনা বাদাম, কাজু বাদাম অনেক ফাইবার থাকে। কিন্তু, অতিরিক্ত বাদাম খাওয়া ভালো না। কারণ, এতে এতে ফ্যাট ও লবণের পরিমাণও বেশি থাকে। তাই, দিনে সর্বোচ্চ ৩০ গ্রামের বেশি বাদাম না খাওয়া ভালো।

সবচেয়ে বেশি আঁশযুক্ত খাবার

সবচেয়ে বেশি আঁশযুক্ত খাবারের তালিকায় রয়েছে মটরশুঁটি, মসুর ডাল। ১ কাপ মটরশুঁটি ও মসুর ডালে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ গ্রাম ফাইবার থাকে। এছাড়া ১ কাপ নাশপাতি, আপেল, ব্রকলি, মিষ্টি আলু তে প্রায় ৫ গ্রাম ফাইবার থাকে।

সবচেয়ে বেশি আঁশযুক্ত সবজি

সবচেয়ে বেশি আঁশযুক্ত সবজির তালিকায় রয়েছে গাজর, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি ইত্যাদি। এছাড়া, ওলকপি, বরবটি, ঢেঁড়স, মটরশুঁটি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ রয়েছে।

আরো পড়ূনঃ দাঁতের মাড়ি শক্ত করার উপায়

আঁশ জাতীয় খাবারের উপকারিতা

শরীরের ভালো স্বাস্থ্যের পিছনে আঁশ জাতীয় খাবারের অনেক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে। যেমন;

  • কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে
  • রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে
  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে
  • ত্বক ভালো রাখে
  • রক্তের দূষিত বিভিন্ন উপাদান শোষণ করে নেয়
  • ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে
  • পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। যেমন; পাইলস, ডাইভারটিকুলাইটিস) ইত্যাদি।

প্রতিদিন কি পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত

  • ২ থেকে ৫ বছর বয়সীদের প্রতিদিন সর্বনিম্ন ১৫ গ্রাম আঁশ বা ফাইবার খাওয়া উচিত।
  • ৫ থেকে ১১ বছর বয়সীদের প্রতিদিন সর্বনিম্ন ২০ গ্রাম আঁশ বা ফাইবার খাওয়া উচিত।
  • ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের প্রতিদিন সর্বনিম্ন ২৫ গ্রাম আঁশ বা ফাইবার খাওয়া উচিত।
  • ১৭ বছরের উপরে বয়সীদের প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৩০ গ্রাম আঁশ বা ফাইবার খাওয়া উচিত।

আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা পাশাপাশি যা করতে হবে

ভালো স্বাস্থ্যের জন্য শুধু আঁশযুক্ত খাবার খেলে হবে না, এর পাশাপাশি আরো যে সকল কাজ করতে হবে সেগুলো হলো;

  • পর্যাপ্ত পরিমান পান করা: ফাইবারের কাজ হলো পানি শোষণ করে পায়খানা নরম করা, তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে ফাইবার সঠিক ভাবে কাজ করে। দুধ, চা, কপি সবকিছু মিলিয়ে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ গ্লাস বা ২ লিটার পানি পান করতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা: পায়খানা নরম করতে, শরীর সচল রাখতে, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। এছাড়া, পরিপাক নালীর পেশিগুলোকে সচল রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। ঘর পরিষ্কার রাখা এইটাও একটি ব্যায়াম। প্রতিদিন ৩০ মিনিট মাঝারি টাইপের ব্যায়াম (দৌড়ানো, ঘর পরিষ্কার করা, সাঁতার কাটা ইত্যাদি) করতে পারেন।
  • নিয়ম অনুযায়ী আঁশযুক্ত খাবার খান: প্রতিদিন একই নিয়মে এবং একই পরিমানে খেতে হবে। একদিন কম বা একদি বেশি এইরকম হলে হবে না। এর ফলে পেঁটের নানা সমস্যা হতে পারে।

আরো পড়ূনঃ মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ ও প্রতিকার

শেষ কথা

শরীরের সুস্বাস্থ্যের জন্য আঁশ জাতীয় খাবারের কোন বিকল্প নেই। একটি সুস্থ এবং বয়স্ক ব্যক্তির দিনে সর্বনিম্ন ৩০ গ্রাম ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। শরীরের ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য আঁশযুক্ত খাবারের কোন বিকল্প নেই। তাই, আপনি আজকে থেকে প্রতিদিন ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।

Leave a Comment

error: Content is protected !!