সিজারিয়ান মায়ের জন্য সিজারের পর খাবার তালিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষুধ খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে, যা সিজারিয়ান মায়ের জন্য খুবা বিপদজনক। অনেকে মনে করে সিজারের পর পাতলা খাবার খেতে হবে আবার অনেকে মনে করে সিজারের পর শক্ত খাবার খেতে হবে। কিন্তু কোন ধরণের খাবার সিজারিয়ান মায়ের জন্য ক্ষতি তা অনেকে না জানার কারণে তাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এই সময়টাতে শিশুর ভালো স্বাস্থ্যের জন্য সিজারিয়ান মায়ের পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম নেওয়া ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। যদিও এই সময় সঠিক নিয়মে জীবনযাপন করা একজন মায়ের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। সিজারের পর স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করতে প্রায় দেড় মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সিজারের পর স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করার আগে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয়। যেমন: হালকা পেট কামড়ানো, যোনিপথ দিয়ে রক্ত অথবা স্রাব যাওয়া, পেটের আশেপাশে ব্যথা হওয়া অথবা অবশ লাগা ইত্যাদি।
যদি এই সময় সঠিক খাবার ও সঠিকভাবে জীবনযাপন করা না হয় তাহলে এই শারীরিক সমস্যা গুলো দিন দিন বৃদ্বি পেতে পারে। তাই, একজন সিজারিয়ান মায়ের জানা উচিত সিজারের পর খাবার তালিকা কেমন হবে এবং সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না।
Table of Contents
সিজারের পর খাবার তালিকা
সিজারের পর শারীরিক ভাবে সুস্থ্য থাকার জন্য বেশি বেশি সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সিজারের পর বেশির ভাগই মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। এছাড়া শাকসবজি, ফলমূল ও ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। পাশাপাশি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন; মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি খেতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের ফলের রস সিজার রোগীদের জন্য অনেক কার্যকরী। যেমন; তরমুজ, আঙ্গুর, বেদনা বা ডালিম, কমলা ইত্যাদি ফলের রস সিজারের পর খাওয়া উচিত। সিজারের পর মহিলাদের কমপক্ষে দেড় মাস কষ্ট করতে হয়, যদি অনিয়মিত জীবনযাপন করা হয় তাহলে আরো কয়েকমাস কষ্ট করতে হবে।
সকল সিজার রোগীদের যেকোন একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হয়। সবচেয়ে বেশি ভালো হয় নিজ চিকিৎসকের কাছ থেকে সিজার পর খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনে নেওয়া। কারণ; সিজার রোগীর যদি এলার্জির সমস্যা থাকে তাহলে তাকে সে অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। তাই সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে সেটা নিজ চিকিৎসক বা যেকোনো চিকিৎসকের কাজ থেকে জেনে নেওয়া উচিত।
আরো পড়ুন: পিরিয়ডের সময় কি কি খাওয়া যাবে না
সিজারিয়ান মায়ের খাবার তালিকা
সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে বা সিজারের পর কি কি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন:
- পর্যাপ্ত পরিমান পানি: সিজারিয়ান মায়েদের বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। বেশি বেশি পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ানো সম্ভব হবে। কারণ সিজারিয়ান মায়েদের সবচেয়ে বেশি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য এর কারণে কাটা স্থান শুকাতে বেশি সময় লাগতে পারে। এছাড়া সিজারিয়ান মায়েরা ডিহাইড্রেশনের বড় ঝুঁকিতে থাকেন যার ফলে তাদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
- সুষম ও পুষ্টিকর খাবার: সিজারিয়ান মায়ের খাবারের তালিকায় বেশি বেশি সুষম ও পুষ্টিকর খাবার থাকতে হবে। এই সময় পুষ্টিকর খাবারের কোন বিকল্প নেই। শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে এমন খাদ্যই হলো পুষ্টিকর খাবার। বিশ্বের সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবার হলো ডালিম, টমেটো, বাঁধাকপি, কলা, আতাফল, পুদিনাপাতা, ধনেপাতা, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, মরিচ, লেটুস পাতা ইত্যাদি। যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় এই তালিকা করা হয়েছিল।
- ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার: পেটের সার্জারি, সিজার, ব্যথার ঔষুধ এর জন্য ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়াও আঁশযুক্ত খাবার পেট পরিস্কার রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, পায়খানা নরম করে। ফাইভার বা আঁশযুক্ত খাবারের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বাদাম, কলা, মিষ্টি আলু, গোটা শস্য, শাকসবজি, শুকনো ফল ইত্যাদি।
- প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার: অন্যান্য খাবারে পাশাপাশি সিজারিয়ান মহিলাদের বেশি বেশি প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। নিয়মিত প্রোটিন খেলে পেশির দুর্বলতা কমে, ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় থাকে ইত্যাদি। প্রোটিন জাতীয় খাবারের তালিকায় রয়েছে দুধ, মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি। ভিটামিন জাতীয় খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় রয়েছে কিসমিস, আলু, পাতাকপি, ডিমের কুসুম, আম, ব্রোকলি, টমেটো, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি।
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: চিকিৎসকরা বলছেন, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মাসিকের সময় রক্তক্ষরণের ক্ষতি মেটানোর জন্যেও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার অনেক গুরুত্বপূণ। সিজারিয়ান মায়ের আয়রন সমৃদ্ধ যে ৭ খাবার সবসময় খাবে সেগুলো হলো পালং শাক, জলপাই, রেড মিট, শুঁটিজাতীয় খাবার, ডার্ক চকোলেট, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, গরুর কলিজা।
- ফলমূল: সব ধরনের রোগে ফলমূল খেতে হয়, তেমনি গর্ভবতী মহিলাদের ও সিজারিয়ান মেয়েদেরও কিছু স্বাস্থ্যকর ফলমূল খেতে হয় সেগুলো হ্যলো: আপেল, তরমুজ, কমলা, কলা, পেয়ারা।
উপরের উল্লেখিত সিজারিয়ান মায়ের খাবার গুলোর মধ্যেও কিছু কিছু খাবার রয়েছে যা সকল সিজারিয়ান মায়েরা খেতে পারে না। তবে আপনার যদি অন্য কোন শারীরিক সমস্যা না থাকে তাহলে আপনি উপরের এই সকল খাবার খেতে পারেন। কিন্তু আপনার জন্য এলার্জি, ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা থাকে তাহলে আপনাকে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খেতে হবে।
সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না
সিজার বা অপারেশনের পর চিনিযুক্ত খাবার, চা – কপি, পনির, চর্বিযুক্ত খাবার, কাঁঠাল, অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার, ঝাল খাবার, অ্যালকোহল, ভাজা-পোড়া, লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার সহ বেশ কিছু খাবার খাওয়া যাবে না। সার্জারি পর ভুলেও ভাজা পোড়া খাবার খাওয়া যাবে না। এই ধরনের খাবার বমি বমি ভাব হওয়ার জন্য দায়ী। কিছু কিছু খাবার খেলে পেট ফাঁপার সমস্যা বেড়ে যায় সে সকল খাবার যেমন; পেঁয়াজ, ব্রকলি, ঢেঁড়স ইত্যাদি তাই এই সকল খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
সিজারের পর কাঁঠাল খাওয়া যাবে না। কারণ, কাঁঠাল খেলে পেট ব্যথার সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া এটি খাবার হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। মশলাদার খাবারও ফুসকুড়ি এবং অন্যান্য হজমের সমস্যা তৈরি করে। সিজার রোগীরা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি খেতে পারবে না। ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা জাতীয় খাবার খেলে সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদির মতো সমস্যা হতে পরে। এছাড়া সিজারের সময় কম রান্না করা খাবার খাওয়া যাবে না কারণ এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এর সমস্যা তৈরি করে।
সিজারের পর প্রায় সব ধরনের খাবার খাওয়া যায় এতে বেশি সমস্যা হয় না। কিন্তু, দ্রুত ভালো হতে চাইলে সিজারিয়ান মায়েদের কিছু কিছু খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। ভালো হয়ে গেলে এই সকল খাবার আবার নিয়মিত খাওয়া যাবে। তবে চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া খাবারের তালিকা থেকে নির্দিষ্ট খাবার বাদ দেওয়া উচিত না। কারণ সকল ধরনের খাবারে বিভিন্ন পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে যা শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই সিজারের পর খাবার তালিকা থেকে খাবার বাদ দেওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে পেট ব্যথা হওয়ার কারণ
সিজারের পর করনীয়
সিজারের পর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এই সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও টয়লেটের সমস্যা দূর হবে। অনেক সিজারিয়ান মায়ের রক্ত জমাট বাঁধার ভয় থাকে। এর জন্য সিজারের পরের দিন হালকা হাঁটাচলা করতে হবে। সার্জারির পর প্রথম প্রথম হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় পেতে হালকা ব্যথা করতে পারে। এই সময় পেটের উপর বালিশ দিলে ব্যথা অনেক কম হয়।
কাপড় পড়ার সময় সাবধান অবলম্বন করতে হবে। টাইট জামা কাপড় পড়া যাবে না। ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক কাপড় পরতে হবে। সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস পরতে হবে। নিয়মিত সিজার বা অপারেশন করা জায়গাটি একবার সাবান ও পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন। খুব জোড়ে চাপ দেওয়া যাবে না। পরিষ্কার হয়ে গেলে এবার তোয়ালে বা গামছা দিয়ে জায়গাটি ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। যদি সেলাই কাটানোর প্রয়োজন হয় তাহলে ডাক্তারের দেওয়া তারিখ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাবেন।
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
- সিজার বা অপারেশনের জায়গায় ব্যথা হওয়া, পুঁজ বা দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের হওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া।
- জ্বর
- শরীর কাঁপুনি
- প্রস্রাবের সমস্যা
- তীব্র পেট ব্যথা
- যোনিপথে রক্তক্ষরণ
- পায়ে ব্যথা হওয়া / ফুলে যাওয়া
সিজারের পর এই লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। সঠিক চিকিৎসার অভাবে এটি মারাত্বক রূপ ধারণ করতে পারে। তাই এই লক্ষণ গুলো দেখার সাথে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয়
সিজারের সেলাই শুকানোর উপায়
সিজারের সেলাই শুকানোর জন্য সাবান দিয়ে নিয়মিত ঐ জায়গায়টি পরিষ্কার করতে হবে। বেশি বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পানি পান করতে হবে। কারণ পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য এর কারণে ক্ষত বা ঘা শুকাতে অনেক সময় লাগে। তাই প্রচুর পানি এবং পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম ব্যবহার করলে সিজারের সেলাই খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়।
FAQ
সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায়?
সাধারণত সিজারের দেড় মাস পর সেলাই শুকিয়ে যায় এবং সিজারিয়ান মায়েরা স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করে। কিন্তু অনেক সময় সঠিক চিকিৎসা ও সঠিক জীবনযাপনের অভাবে সিজারের সেলাই ভালো হতে ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। অনেক সময় সিজারের সেলাইয়ের দাগটা শুকাতে ১ বছরের বেশি সময় লাগতে পারে।
সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে?
সিজারের পর ব্যথা কতদিন স্থায়ী হবে সেটা সঠিক ভাবে বলা খুব কঠিন। তবে, সিজারের পর প্রায় কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত এই ব্যথা থাকতে পারে। সিজারের পর সহজে ব্যথা কমে না। কারো ক্ষেত্রে এই ব্যথা হালকা বা মাঝারি আবার কারো ক্ষেত্রে খুব বেশি পরিমানে হতে পারে। তবে ব্যথার জন্য ঔষুধ খেলে এই ব্যথা অনেকটা কমে আসে।
সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায়?
সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায় এর কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে, সিজারের পর একজন সিজারিয়ান মায়ের অন্তত ১.৫ মাস বিশ্রাম নেওয়া উচিত এবং শরীরের ওপর চাপ পড়ে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
সিজারের পর গরুর মাংস খাওয়া যাবে?
ডাক্তার না বলা পর্যন্ত সিজারের পর গরুরু মাংস খাওয়া যাবে। তবে, সিজারের পর গরুর মাংস না খাওয়া ভালো। কারণ রোগীর এলার্জির জাতীয় কোন সমস্যা থাকলে গরুর মাংস সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া গরুর মাংস মল ত্যাগের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই সিজারের পর গরুর মাংস খাওয়ার আগে ডাক্তারের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া উচিত।
সিজারের কতদিন পর দুধ খাওয়া যায়?
সিজারের পর নিয়মিত গরুর দুধ খাওয়া যাবে। সিজারের কতদিন পর দুধ খাওয়া যাবে এর কোন তথ্য প্রমাণ নেই। স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি আপনি চাইলে গরুর দুধ খেতে পারেন সেক্ষত্রে গুরুর দুধ ফুটিয়ে খেতে হবে।
সিজারের পর কি কি ফল খাওয়া যাবে?
সিজারের পর সব ধরনের পুষ্টিকর ফল খাওয়া যাবে। বিশেষ করে ভিটামিন সি জাতীয় ফলমূল যেমন; লেবু, আমলকি ও টক জাতীয় ফল কাটা বা ক্ষত স্থানের জন্য বেশ কার্যকরী। তবে কোন ফল খাওয়ার পর যদি দেখেন আপনার শরীর খারাপ হচ্ছে বা পেট গ্যাস হচ্ছে তাহলে এই সকল খাবার বাদ দিয়ে দিতে হবে।
সিজারের কতদিন পর মিষ্টি খাওয়া যায়?
সিজারের পর আপনি যেকোন সময় মিষ্টি খেতে পারেন। মিষ্টির সাথে সিজারের কোন সম্পর্ক নেই। তবে মিষ্টি স্বাস্থ্যকর খাবার নয়। তাই যখন তখন মিষ্টি না খাওয়া ভালো। সিজারের পর যদি মিষ্টি খেতে ইচ্ছা হয় তাহলে সেটি সামান্য পরিমানে হলে ভালো হয়।
সিজারের পর কি আনারস খাওয়া যাবে?
আনারস ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার তাই সিজারের পর ডাক্তার না বলা পর্যন্ত যেকোন সময় আনারস খাওয়া যাবে। এই খাবারের কোন বিধিনিষেধ নেই। কারো কারো ক্ষেত্রে আনারস খেলে পেটের অস্বস্তি হতে পারে তাই আনারসের পরবর্তীতে অন্য যেকোন ফল খাওয়া উত্তম।
সিজারের কতদিন পর গোসল করা যায়?
সিজারের পর যদি সেলাই কাটানোর প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে সেলাই কাটার পর গোসল করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে গোসল করার বিষয়টি ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিতে হয়। সাধারণত ক্ষত বা ঘা না শুকানো পর্যন্ত পুকুর, সুইমিং পুল ও বাথটাব এ গোসল না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। গোসল করার সময় কাটা স্থানে সাবান ও পানি দিয়ে আলতোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। বেশি জোরে চাপ দেওয়া যাবে না।
সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ ও ব্যায়াম করা যাবে?
সিজারের ৬ মাস পর ভারী কাজ ও ভারী ব্যায়াম করা যাবে। পেটে টান বা চাপ খায় এমন ব্যায়াম বা কাজ সিজারের পর ৬ মাস পর্যন্ত করা যাবে না। তবে সিজারের পর হাটা ও হালকা কাজ করা উচিত। যেমন; সন্তানকে কোলে নিয়ে হাটতে পারবেন, দাঁড়িয়ে রান্না করতে পারবেন। ৬ মাস পর স্বাভাবিক ভাবে সব কিছু করা যাবে।
প্রথম সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি হওয়া কি সম্ভব?
শাররীক ও মানসিক ভাবে সব কিছু ঠিক থাকলে প্রথম সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি হওয়া সম্ভব। অনেকে মনে করে প্রথম সন্তান সিজারের মাধ্যমে হলে দ্বিতীয় সন্তান ও সিজারের মাধ্যমে হবে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল।
সিজারের কতদিন পর আবার বাচ্চা নেওয়া যায়?
সিজারের দেড় (১.৫) বছর পর আবার বাচ্চা নেওয়া উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে সিজারের পর যারা দেড় ১ থেকে ১.৫ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান নিয়েছে তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ছিল। প্রথম সন্তান ও দ্বিতীয় সন্তানের মধ্যে খুব বেশি বিরতি না থাকলে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই সিজারের পর দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
সিজারের কতদিন পর সহবাস করা যায়?
সাধারণত, সিজারের করার সর্বোচ্চ ৬ মাস পর সহবাস করা উচিত। তবে কিছু কিছু চিকিৎসকরা সিজারের পর অন্ততপক্ষে দেড় মাস সহবাস করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়। সিজররিয়ান মায়েরা দেড় মাস পর স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করতে পারে তাই ১.৫ মাস পর সহবাস করলে তেমন ক্ষতি হয় না।
সিজারে বাচ্চা হওয়ার কতদিন পর মাসিক হয়?
সিজারে বাচ্চা হওয়ার কতদিন পর মাসিক হয় সেটি শারীরিক অবস্থা ও হরমোনের ভিত্তিতে উপর নির্ভর করে। মা যদি সন্তানাকে বুকের দুধ না খাওয়ায় তাহলে সিজারের ৫–৬ সপ্তাহ পরই মাসিক শুরু হয়ে যেতে পারে।
সিজারের পর কী কী সমস্যা হতে পারে?
স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করা সিজারের পর সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা। সিজারের পর স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করতে তুলনামুলক ভাবে দেরি হয়। এই সময় সহবাস করা যায় না। এছাড়া ভারী কাজ ও ব্যায়াম করতে অসুবিধা হয়। অতিরিক্ত ব্যথা, প্রস্রাব ছুটে যাওয়া, যোনিপথে ভারী রক্তক্ষরণ ইত্যাদি মতো সমস্যাও দেখা যায়।
সিজারের পর কতদিন পর্যন্ত ব্লিডিং হয়?
সিজারের পর ১–১.৫ মাস পর্যন্ত রক্ত (ব্লিডিং) বা স্রাব যেতে পারে। অনেক সময় ২টি প্যাড ১ ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি ভিজে যায়। পাশাপশি পেট কামড়াতে পারে। যদি এমন হয় তাহলে সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
সিজার করতে কত টাকা খরচ হয়?
সরকারি হাসপাতালে সিজার করতে ২ থেকে ১২ হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে। বেসরকারি হাসপাতালে সিজার করাতে সর্বনিম্ন ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
আরো পড়ুন: মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
আশা করি সিজারের পর খাবার তালিকা সম্পর্কে আপনার ধারণা হয়েছে। একজন সিজারিয়ান মা ও তার সন্তানের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকায় গুরুত্ব অপরিসীম। যদি একজন সিজারিয়ান মা সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করতে চাই তাহলে তার খাদ্য তালিকায় বিশেষ কিছু খাদ্য থাকতে হবে যা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটা একজন সিজারিয়ান মায়ের উপকার হবে।