হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জেনে নিন আজই ২০২৪


হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানতে হলে প্রথমত জানতে হবে হিট স্ট্রোক কি? হিট স্ট্রোক হলো তাপজনিত সবচেয়ে গুরুতর অসুস্থতা। শরীর যখন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ঘামের প্রক্রিয়া শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ব্যর্থ হয় তখন হিট স্ট্রোক হয়। হিট স্ট্রোক হলে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে শরীরের তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি হতে পারে। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করলে হিট স্ট্রোক স্থায়ী পঙ্গুত্ব বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই আমাদের হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় ও তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পদ্ধতির সম্পর্কে জানা অতি গুরুত্বপূর্ণ।এককথায় বললে, হিট স্ট্রোক হলো এমন একটি অবস্থা যা শরীরের অতিরিক্ত উত্তাপের কারণে হয়। সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করলে বা কায়িক শ্রম দিলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি হলে হিট স্ট্রোক হতে পারে। গ্রীষ্মকালে এটি একটি সাধারণ সমস্যা।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে সর্বপ্রথমেই আছে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান। সময় মতো ও সঠিক চিকিৎসা না করালে হিট স্ট্রোকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, কিডনি এবং পেশির ক্ষতি হতে পারে। আর চিকিৎসায় দেরি হলে গুরুতর শারীরিক জটিলতা বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

হিট স্ট্রোকের সময় কী ঘটে?


উচ্চ তাপমাত্রার অত্যধিক এক্সপোজার তাপ ক্লান্তির কারণ হতে পারে যা তাপ ক্র্যাম্প এবং হিট স্ট্রোকের দিকে অগ্রসর হয়। দীর্ঘায়িত তাপের সংস্পর্শে থাকার কারণে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা হাইপারথার্মিয়া (শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার উপরে) সৃষ্টি করে। হিট স্ট্রোক হল তাপের আঘাতের সবচেয়ে গুরুতর রূপ যেখানে শরীরের তাপমাত্রা 40.60C বা তার বেশি পৌঁছে যায়।
পরিবর্তিত মানসিক আচরণের সাথে হাইপারথার্মিয়া, ঘাম, বমি বমি ভাব, এবং বমি, ফ্লাশ ত্বক, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি বা মাথাব্যথা হিট স্ট্রোকের সূচক। আপনি যদি হিট স্ট্রোক সন্দেহ করেন, তাহলে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে অবিলম্বে চিকিৎসা সাহায্যের জন্য কল করুন।
হিট স্ট্রোক একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। চিকিত্সা না করালে হিট স্ট্রোক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ব্যর্থতা, দুর্বল জৈব রাসায়নিক (এবং এনজাইম সম্পর্কিত) ফাংশন এবং গুরুতর ডিহাইড্রেশন হতে পারে। হিট স্ট্রোকের চরম ক্ষেত্রে, রোগীর খিঁচুনি এবং অজ্ঞান এবং মৃত্যু হতে পারে।

কাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি?


হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানতে হলে আপনাদের প্রথমতই জেনে নিতে হবে কাদের হিট স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি-
শিশু (শিশু এবং ছোট) এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা (>65 বছর),
যারা বিস্তৃত কার্যকলাপে নিযুক্ত থাকে বা দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের সংস্পর্শে থাকে,
নির্দিষ্ট হার্ট বা ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত রোগী, এবং
রোগীদের ওষুধ যেমন BP ওষুধ, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, ওভার-দ্য কাউন্টার কাশি এবং সর্দির ওষুধ।
হিট স্ট্রোকের কিছু লক্ষণ রয়েছে। হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে এই লক্ষণগুলো জানা থাকলে নিজে যেমন সচেতন থাকা যায়, তেমনি অন্যদের দিকেও খেয়াল রাখা যায়।

হিট স্ট্রোকের কারণ:


হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানতে হলে আমাদের অবশ্যই হিট স্ট্রোক কি কি কারনে হয় এ বিষয়টিও জেনে নিতে হবে। তীব্র গরম পরিবেশে বেশিক্ষণ অবস্থান করলে হিট স্ট্রোক হয়। এটিকে বলে নন–এক্সারশনাল (ক্ল্যাসিক) হিট স্ট্রোক। এই ধরনের হিট স্ট্রোক সাধারণত গরম, আর্দ্র আবহাওয়ার সংস্পর্শে বেশি সময় থাকলে হয়। হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানা না থাকার কারণে প্রায়শই বয়স্কদের এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভোগা মানুষের ক্ষেত্রে এটি বেশি ঘটে।
আবার গরমের মধ্যে কঠোর কায়িক শ্রম দিলেও হিট স্ট্রোক হয়। এ কারণে আমাদের দেশে খেতমজুর বা মাঠে কাজ করার সময় কৃষকদের হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। আবার তীব্র গরমের মধ্যে ব্যায়াম করলেও হিট স্ট্রোক হতে পারে।

আবার আরও কিছু কারণে হিট স্ট্রোক হতে পারে,

অতিরিক্ত পোশাক পরা। এতে ঘাম সহজে বাষ্পীভূত হয়ে শরীর ঠান্ডা হতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
অ্যালকোহল পান করা। এতে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমে যায়। তাই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে অ্যালকোহল পান করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
ঘামের মাধ্যমে হারানো তরল পূরণ করার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান না করা। অর্থাৎ পানিশূন্যতা থেকেও হিট স্ট্রোক হতে পারে।

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে জানতে হবে হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো


হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানতে হলে আমাদের হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো সম্পর্কেও জানতে হবে। যাতে করে কোন ব্যক্তির মধ্যে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেলেই তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা সেবা দিয়ে ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে তোলা যায়।


হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো

তীব্র মাথাব্যথা:
প্রচণ্ড গরমে মাথাব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া গরমে মানুষের মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে। এটি হিট স্ট্রোকের একটি লক্ষণ হতে পারে। এরূপ লক্ষণ প্রকাশ পেলে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রচণ্ড তৃষ্ণা, পানিশূন্যতা, ঘাম:
হিট স্ট্রোকের আগে ব্যক্তি চরম তৃষ্ণা অনুভব করতে পারে, সেইসঙ্গে ডিহাইড্রেটেড এবং আড়ষ্টতা অনুভব করতে পারে। শরীর নিজেকে ঠান্ডা করার জন্য অতিরিক্ত ঘাম তৈরি করতে পারে।
দ্রুত হৃদস্পন্দন:
হিট স্ট্রোকের আগে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত হতে পারে।
হাইপারভেন্টিলেশন:
শ্বাসকষ্ট এবং দ্রুত ও ভারী শ্বাস-প্রশ্বাসও হিটস্ট্রোকের লক্ষণ।
বমি বমি ভাব:
মাথাব্যথা, দ্রুত হৃদস্পন্দন ও হাইপারভেন্টিলেশন থেকে অক্সিজেনের অভাব ইত্যাদির কারণে হিট স্ট্রোকের আগে বমি বমি ভাব হতে পারে।
বিরক্তি, বিভ্রান্তি বা প্রলাপ বকা:
অতিরিক্ত তাপের কারণে হিটস্ট্রোকের আগে মানুষ বিরক্ত বোধ করতে পারে, রাগান্বিত হতে পারে, অযৌক্তিক কথা বলতে পারে এবং এমনকি প্রলাপ বকতে করতে পারে।
কথা জড়িয়ে যাওয়া:
হিট স্ট্রোকের আরেকটি লক্ষণ কথা জড়িয়ে যাওয়া। ব্যক্তি অসংলগ্ন কথা বলতে শুরু করতে পারে।
পেশিতে ব্যথা:
হিট স্ট্রোকের আগে যেসব লক্ষণ দেখা যায়, তারমধ্যে একটি হলো পেশি ব্যথা। যদিও সাধারণ ব্যথা ভেবে মানুষ এটা গুরুত্ব দেয় না।
দুর্বলতা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া:
অতিরিক্ত উত্তাপের শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কাজ করে। শরীরে আরও ক্লান্তি ও দুর্বলতা তৈরি হয়। ব্যক্তি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এগুলো হিট স্ট্রোকের লক্ষণ।
ঘাম না হওয়া:
হিট স্ট্রোকের একটি লক্ষণ হল প্রচণ্ড গরমেও ঘাম না হওয়া। সাধারণত এর মানে হচ্ছে, শরীরে ঘাম হওয়ার মতো পানি আর নেই বা শরীরের প্রাকৃতিক শীতল প্রক্রিয়াটি কাজ করছে না।

হিট স্ট্রোকের ধাপসমূহ:


হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে জেনে নিন কি কি ধাপে হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে।
হিট স্ট্রোকের তিনটি ধাপ।
১. হিট ক্রাম্পস (heat cramps)
২.হিট এক্সাজশন( heat exhaustion)
৩.হিট স্ট্রোক ( heat stroke)


হিট ক্র্যাম্প
পেশির খিঁচুনি, যা ডিহাইড্রেশন এবং অতিরিক্ত ঘাম থেকে হয় যা খুব ব্যথাদায়ক এবং মাংসপেশিতে খুব ব্যথা হয়। প্রচণ্ড গরমে মাংসপেশিতে ব্যথা হওয়ার প্রথম ধাপ হলো হিট ক্রাম্পস। পেটে, পিঠে, বাহুতে বা পায়ে হিট ক্র্যাম্প সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

হিট এক্সাজশন
অতিরিক্ত ক্লান্তি, ঘাম, পানির তৃষ্ণা পাওয়া, পেশি ব্যথা, দ্রুত শ্বাস নেওয়া দুর্বল হয়ে পড়া ইত্যাদি।
হিট স্ট্রোকে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এ উঠে যায়। শরীর শুষ্ক হয়ে যায়, ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, অজ্ঞান, খিচুনি হতে পারে, হিট স্ট্রোকে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এ উঠে যায়, শরীর শুষ্ক হয়ে যায়, ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, অজ্ঞান, খিচুনি হতে পারে।

হিট স্ট্রোক
হিট স্ট্রোকের আগে যখন হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সহসশন দেখা দেয় তখনই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব।
যদি হিট স্ট্রোকের মতো লক্ষণগুলো দেখা যায় মাথা ঘুরানো, মাথা ঝিমঝিম করা, বমি বমি ভাব, হৃদ স্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া তাহলে সঙ্গে সঙ্গে রোগী নিজেই যেতে পারলে ভালো অথবা আশপাশে যদি কেউ থাকে তাহলে রোগীকে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে ছায়াযুক্ত শীতল স্থানে নিয়ে যেতে হবে এবং চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দিতে হবে। জামাকাপড় টাইপ থাকলে ঢিলা করে দিতে হবে। নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

হিট স্ট্রোক এ আক্রান্ত হলে করণীয়:


হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে তৎক্ষণাৎ যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তা হলো –
আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঠান্ডা করুন: তাকে ঠান্ডা, ছায়াযুক্ত জায়গায় নিয়ে যান। পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন, বা বরফের পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিন। মাথায় ঠান্ডা পানি ঢেলে দিন। পাখা ব্যবহার করে বাতাস চলাচল করুন।
পানিশূন্যতা দূর করুন: হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ORS (Oral Rehydration Solution) বা ঠান্ডা পানি পান করান। লবণ ও চিনি মিশ্রিত পানি (electrolyte solution) দিতে পারেন।
চিকিৎসা সহায়তা নিন: অবস্থা যদি দ্রুত উন্নতি না হয়, তাহলে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিন। জরুরী বিভাগে নিয়ে যান, বা অ্যাম্বুলেন্স কল করুন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:


হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সচেতন রাখার চেষ্টা করুন।
তার অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন।
আক্রান্ত ব্যক্তি যদি বমি করে, তাহলে তাকে পাশের দিকে শুইয়ে দিন যাতে বমি শ্বাসনালীতে প্রবেশ না করে।
আক্রান্ত ব্যক্তি যদি চেতনা হারিয়ে ফেলে, তাহলে দ্রুত CPR (Cardiopulmonary resuscitation) শুরু করুন।

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানা না থাকলে হিট স্ট্রোকের কারণে সৃষ্ট মারাত্মক ক্ষতি

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানা না থাকলে হিট স্ট্রোকের কারণে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হল:

মস্তিষ্কের ক্ষতি:


মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু:
হিট স্ট্রোকের তীব্র তাপমাত্রা মস্তিষ্কের কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, চিন্তাভাবনা করতে অসুবিধা, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, এবং এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: তীব্র তাপমাত্রা রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানা না থাকলে এটি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
মস্তিষ্কের ফোলাভাব: হিট স্ট্রোক মস্তিষ্কের ফোলাভাবের কারণ হতে পারে, যা চাপের কারণে মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে।


অঙ্গের ক্ষতি:


কিডনি ব্যর্থতা: হিট স্ট্রোক কিডনির রক্ত নালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কিডনি ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
হৃদরোগ: হিট স্ট্রোক হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
যকৃতের ক্ষতি: হিট স্ট্রোক যকৃতের ক্ষতি করতে পারে এবং যকৃতের ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
পেশী ক্ষতি: হিট স্ট্রোক পেশীর কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রাবডোমায়োলাইসিস নামক একটি অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা পেশী থেকে রক্তে প্রোটিন মুক্ত করে এবং কিডনি ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

আরও দেখুন অ্যালোভেরা জেল মুখে ব্যবহারের নিয়ম


অন্যান্য ক্ষতি:


চর্মের ক্ষতি: হিট স্ট্রোক ত্বকের পোড়া এবং ফোলার কারণ হতে পারে।
জীবাণু সংক্রমণ: হিট স্ট্রোক রোগীর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
মৃত্যু: হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানা না থাকলে ও চিকিৎসা না করা হলে হিট স্ট্রোক মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

মনে রাখবেন: হিট স্ট্রোক একটি জরুরী অবস্থা যা দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। তাই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিন।

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়:


হিট স্ট্রোকে অনেক সময় বড় ধরনের ক্ষতি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় গুলো জানতে হবে। গরমের এই সময়টায় তাই সাবধানে থাকতে হবে।একটু সাবধানতা আর নিচের উপায়গুলো অবলম্বন করলেই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচা সম্ভব।

১। বেশি করে পানি খান যেহেতু পানিশূন্যতা থেকেই হিট স্ট্রোক হয়, তাই গরমে দেহ থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানির শূন্যতা পূরণে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। তাই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে খাবার পানির পাশাপাশি কাচা আমের ঘরে তৈরি জুস, লেবু, বেল, তরমুজের শরবত বেশি বেশি খেতে হবে । পানিশূন্যতা পূরণ করে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আনবে।
২। গরমে ঢিলেঢালা ও হালকা রঙ্গের পোশাক হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়। আঁটসাঁট পোশাক হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তীব্র গরমে হালকা রঙ এর, ঢিলেঢালা সুতি কাপড়ের পোশাক বেছে নিন। নরম কাপড়ের অন্তর্বাস অবশ্যই ব্যবহার করুন। কেননা এটি দ্রুত ঘাম শুষে নিয়ে আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখবে।
৩। জাঙ্ক ফুড একেবারেই নয়। গরমের এই দুই মাস ফাস্টফুডকে না বলুন। কেননা এতে থাকা অতিরিক্ত লবন, তেল গরমে আপনার শরীরকে আরো বেশি ক্ষতিকর অবস্থার দিকে নিয়ে যায়। তাই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে শরীর ঠান্ডা থাকে এমন ঘরে তৈরি খাবার খান।
৪। গোসল করুন যতবার সম্ভবপ্রচন্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা যাতে সীমা অতিক্রম না করে, এজন্যে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে যতবার সম্ভব গোসল করুন। তবে প্রতিবার গোসলের পরে চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। নইলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
৫। দুপুর ১২ টা থেকে ২ টা থাকুন ছায়ায়দুপুর ১২ টা থে ২ টায় রোদের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে। অর্থাৎ গরমের পরিমাণটাও। তাই চেষ্টা করুন ঘরের বা অফিসের বাইরের জরুরী কাজগুলো এর আগে বা পরে সেরে ফেলার। এই সময়টার সরাসরি সূর্যতাপে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য।
৬। ব্যাগে রাখুন ছাতা, টুপি, পানি, সানগ্লাসব্যাগে এই গরমে কয়েকটা জিনিস রাখতেই হবে। ছাতা, টুপি, সানগ্লাস, পানি ছাড়াও রাখতে পারেন একটা পানি স্প্রে করার বোতল ও রুমাল। হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে প্রচন্ড রোদে ঘেমে গেলে মুখে গলায় একটু পানি স্প্রে করতে পারেন।
৭। চা কফি কোল্ড ড্রিঙ্কস নয় চা, কফি কোল্ড ড্রিঙ্কস গরমে নিস্তেজ শরীরকে কিছুক্ষণের জন্যে সতেজ করলেও, এগুলোর কারণে শরীর থেকে পানি আরো দ্রুত বেরিয়ে গিয়ে পানিশূন্যতা তৈরি হতে পারে। তাই এর বদলে মৌসুমী ফল ও ফলের রস বেছে নিন। কেননা পানিশূন্যতা রোধই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়। এর মাধ্যমে সুস্থতা, সতেজতা দুটোই একসাথে পাবেন।
৮। প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা নয়, হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে প্রখর রোদ এড়িয়ে চলুন। কাজের প্রয়োজনে প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা লাগলে সেক্ষেত্রে একটু পর পর ছায়ায় যাবার চেষ্টা করুন। ছাতা, সানগ্লাস, টুপি যা কিছু সম্ভব ব্যবহার করে রোদ থেকে নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করুন।
৯। হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে খাদ্যতালিকার রাখুন সবজি ও ফল। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে ভুনা খিচুড়ি, বিরিয়ানি জাতীয় খাবারগুলোকে কিছুদিনের জন্যে বিদায় দিন। এর বদলে ভাত, কম তেল মশলায় রান্না মাছ, প্রচুর পরিমাণে সবজি খেতে পারেন। কম তেলে রান্না খাবার আপনাকে এই গরমে সতেজ রাখবে।
১০। তাপমাত্রার পরিবর্তন খেয়াল রাখুন নিজের চারপাশের তাপমাত্রা খেয়াল রাখুন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জায়গা থেকে বেরিয়েই প্রচন্ড রোদে চলে যাবেন না। বা প্রখর রোদ থেকে এসেই হুড়মুড় করে এসি রুমে ঢুকবেন না। একটু সময় নিন।তাপমাত্রার হঠাত পরিবর্তনের সাথে আপনার শরীর মানিয়ে নিতে না পারার কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।
১১। যেকোন রক্তচাপ বা হার্টের ওষুধ খাওয়ার আগে ভালো করে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিন। এসব ওষুধ রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। তাই হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
১২। অনেকেই জরুরি কোনো কাজে যাওয়ার সময় বাচ্চাকে গাড়িতে রেখে যান। এই গরমের সময় এমনটা করবেন না। সূর্যের তাপে গাড়ির মধ্যে তাপমাত্রা আরো বেড়ে যায়। এর ফলে বাচ্চারা হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়।
১৩। সূর্যের তাপে যদি আপনার ত্বক পুড়ে যায় তাহলে সেটা শরীরকে আর ঠান্ডা করতে পারে না। তাই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে চেষ্টা করুন ত্বকটাকে বাঁচাতে। বড় কোনো হ্যাট এবং সানগ্লাস নিন বাইরে বের হওয়ার আগে।১৪। সকাল বেলা হাঁটতে যাওয়ার সময়টা এগিয়ে নিন। দিনের বেলায় কোনো ব্যয়াম করবেন না। আর চেষ্টা করুন ব্যয়ামের মাঝে মাঝে বিরতি নিতে এবং তরল পানীয় পান করতে।
১৫। শারীরিক সমস্যা যেমন ক্লান্তি, অবসাদ, বমি বমি ভাব বা শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। এই গুলো হিট স্ট্রোকের লক্ষণ। আর হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো দেখা দেওয়া মাত্রই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
১৬। রাতের ঘুমানোর সময় ঠান্ডা মোজা পরতে পারেন, এবং অন্যান্য দিন আপনি যে সময়ে ঘুমান ওই একই সময়ে বিছানায় যাবেন।
১৭। যারা বাইরে রোদে কাজ করে তাদের হিট স্ট্রোক এড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমানে লিকুইড জাতীয় খাবার গ্রহন করতে হবে। এ সময় হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে স্যালাইন, ফলের জুস, লেবুর শরবত, মাঠা বা ডাবের পানি খুবই উপকারী
১৮। গরমের দিনগুলোতে অ্যালকোহল বাদ দিতে হবে। কারণ, অ্যালকোহল বা সুগার ড্রিঙ্কস-গুলো শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে।
১৯। ফল ও সবজি খেতে হবে। ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার পুরোপুরি এড়িয়ে চলাই ভালো
২০। চা ও কফি পান থেকে বিরত থাকুন, এতে শরীরের তাপ বৃদ্ধি পায়। ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।

হিট স্ট্রোক কী?

হিট স্ট্রোক হলো এমন একটি অবস্থা যা শরীরের অতিরিক্ত উত্তাপের কারণে হয়।

হিট স্ট্রোক এ আক্রান্ত হলে করণীয়:

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে তৎক্ষণাৎ যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তা হলো –
আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঠান্ডা করুন: তাকে ঠান্ডা, ছায়াযুক্ত জায়গায় নিয়ে যান। পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন, বা বরফের পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিন। মাথায় ঠান্ডা পানি ঢেলে দিন। পাখা ব্যবহার করে বাতাস চলাচল করুন।

কাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি?

শিশু (শিশু এবং ছোট) এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা (>65 বছর),
যারা বিস্তৃত কার্যকলাপে নিযুক্ত থাকে বা দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের সংস্পর্শে থাকে,
নির্দিষ্ট হার্ট বা ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত রোগীদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি

হিট স্ট্রোকের ধাপসমূহ কি কি?

হিট স্ট্রোকের তিনটি ধাপ।
১. হিট ক্রাম্পস (heat cramps)
২.হিট এক্সাজশন( heat exhaustion)
৩.হিট স্ট্রোক ( heat stroke)

হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা কি কি?

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে তৎক্ষণাৎ যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তা হলো –
১.আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঠান্ডা করুন
২.পানিশূন্যতা দূর করুন
৩.চিকিৎসা সহায়তা নিন

মনে রাখবেন:

হিট স্ট্রোক একটি জরুরী অবস্থা ফলে হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় গুলো জানা থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে হিট স্ট্রোকের জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

হিট স্ট্রোক যেকোন সময় যে কারোই হতে পারে। শিশু ও বৃদ্ধদের এই ঝুঁকি বেশী। তবে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানা থাকলে খুব সহজেই মারাত্মক ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
সুস্থ থাকুন।
ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ।

হিট স্ট্রোক সম্পর্কে আরো জানুন

Leave a Comment

error: Content is protected !!