কি খেলে বীর্য অনেক ঘন হয় এবং দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হয় সেই সম্পর্কে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পুরুষের দ্রুত বীর্যপাত হওয়া একটি সাধারণ যৌনগত সমস্যা। গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি ৩ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন পুরুষের অকাল বীর্যপাত বা দ্রুত বীর্যপাত হয়ে থাকে।
স্ত্রীর যোনিতে পুরুষের লিঙ্গ প্রবেশ করার পর যতক্ষণ বীর্যপাত না হয় ঐ সময়কে বীর্যধারণ কাল বলা হয়। একজন সুস্থ পুরুষের স্বাভাবিক বীর্যপাতের সময় ৪ থেকে ৮ মিনিট। ৪ মিনিট বা এর চেয়ে কম সময়ের মধ্যে বীর্যপাত হলে তাকে বলা হয় দ্রুত বীর্যপাত।
বেশির ভাগ নারী সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে পারে। অর্থাৎ, মহিলাদের দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা অনেক কম হয়ে থাকে। পুরুষের ক্ষেত্রে দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা অনেক বেশি। কিছু কিছু পুরুষ স্ত্রীর যৌনিতে লিঙ্গ প্রবেশ করানোর আগে তাদের বীর্য বের হয়ে যায়।
আবার কারো ক্ষেত্রে ১ থাকে ২ মিনিট মধ্যে বীর্যপাত হয়। অনেকে লজ্জার কারনে এই শারীরিক সমস্যা এড়িয়ে যায়। দ্রুত বীর্যপাত একটি যৌন সমস্যায়, যা সঠিক চিকিৎসা ও সঠিক খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
তাই এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন কি খেলে বীর্য অনেক ঘন হয় এবং দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হয়।
Table of Contents
কি খেলে বীর্য অনেক ঘন হয় এবং দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হয়
রসুন, টক বা লেবুজাতীয় ফল, আখরোট, টমেটো, ডালিম, তৈলাক্ত মাছ, ডার্ক চকলেট, কলা, মধু, খেজুর, চর্বিহীন গরুর মাংস, হাঁস-মুরগি, মসুর ডাল, মেথি, ঝিনুক, বাদাম, ডিম, কুমড়োর বীজ, পালং শাক ইত্যাদি খেলে বীর্য অনেক ঘন হয় এবং এইসব খাবার বীর্য কে শক্তিশালী করে। ফলে দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হয়ে যায়।
খাবারের পাশাপাশি দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ করার জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। পাশাপাশি কিছু ব্যায়াম করতে হবে, যেমন; যোগ ব্যায়াম, কেগেল ব্যায়াম ইত্যাদি।
চিকিৎসকরা বলে, কোন কারণ ছাড়াই দ্রুত বীর্য হতে পারে আবার কিছু কিছু কারণে দ্রুত বীর্যপাত হতে পারে। যেমন: সাইকোলজিক্যাল এর কারণে অকাল বীর্যপাত হয়। এছাড়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ, সঠিক যৌনশিক্ষার অভাব, যৌনতার ভয়, ঔষুধের প্রভাব ইত্যাদি।
অনেকেই সহবাসের সময় বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ খেতে থাকে যা সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেই। ওষুধের সাইড ইফেক্টের কারণে দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা হতে পারে।
তাই, শুধু খাবার খেলে যে বীর্য অনেক ঘন হবে এবং দ্রুত বীর্য পাত বন্ধ হয় তেমনটা কিন্তু নয়। এছাড়া বিভিন্ন রোগের কারণেও এই সমস্যা হতে পারে। যেমন; টেস্টোস্টেরন হরমোন পরিবর্তন, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের ইত্যাদি।
যদি সাইকোলজিক্যাল এর কারণে এই সমস্যা হয় তাহলে ধাপে ধাপে এর ট্রিটমেন্ট করতে হবে। যদি বিভিন্ন রোগের কারণে এমনটা হয় তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
আরো পড়ুন: সিজারের পর খাবার তালিকা
কি খেলে দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হয়
- রসুন: এ সেলেনিয়াম নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় রসুন খেলে বীর্য অনেক ঘন হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়া রসুন খেলে সহবাসের সময় বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত কাঁচা রসুন খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ভাজা রসুন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
- আখরোট: এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। আখরোট এ রয়েছে ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড যা বীর্য ঘন এবং দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ করে। এছাড়াও এতে ভিটামিন ই এবং পলিফেনল মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে এটি বীর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
- টক বা লেবুজাতীয় ফল: “ভিটামিন সি” পুরুষের বীর্য ঘন করে। তাই পুরুষের টক বা লেবুজাতীয় ফলমূল খাওয়া উচিত। কারণ, লেবুজাতীয় ফলে বেশি পরিমাণে “ভিটামিন সি” পাওয়া যায়।
- টমেটো: রক্ত চলাচল ঠিক রাখার জন্য টমেটো খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। টমেটোতে লাইকোপিন উপস্থিত থাকার কারণে এটি খেলে দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হয় এবং রক্তশূন্যতা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করে। পুরুষের বীর্য ঘন করার জন্য টমেটোর সালাত অথবা দোকানে টমেটোর সস পাওয়া যায়, যা পুরুষের পুরুষাঙ্গের স্বাস্থ্যের জন্য একটি সহজ উপায় হতে পারে।
- ডালিম: রক্তের জন্য ডালিম অনেক উপকারী। যদিও বিভিন্ন রোগে ডালিম অনেক সাহায্য করে। ডালিমে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের বিভিন্ন উপকার করে। আমাদের শরীরের রক্তে ম্যালন্ডিয়ালডিহাইড নামক ক্ষতিকারক পদার্থ ডালিম খেলে এই ক্ষতিকারক পদার্থ কম হয়। ফলে ডালিম খেলে বীর্য অনেক ঘন হয় এবং দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হয়।
- তৈলাক্ত মাছ: এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে তৈলাক্ত মাছ বীর্যের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বীর্যের গুণ এবং পরিমাণ উভয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই যাদের এই সমস্যা রয়েছে তাদের বেশি বেশি তৈলাক্ত মাছ খাওয়া উচিত।
- ডার্ক চকলেট: এতে এল-আর্জিনিন এইচসিএল ও অ্যামিনো অ্যাসিড সহ প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা বীর্য বা যৌন উদ্দীপনা বাড়িয়ে দেয়। তাই, দ্রুত বীর্যপাত ও পাতলা বীর্য থেকে মুক্তি পেতে ডার্ক চকলেট খাওয়া উচিত।
- কলা: কলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এটি শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দুর করে যার মধ্যে বীর্যের সমস্যা অন্যতম। নিয়মিত কলা খেলে বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া আমাদের শরীরের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় কলা রাখা উচিত।
- মধু: যৌন জীবনে সুখ ও শান্তি পাওয়ার জন্য মধুর কোন বিকল্প নেই। মধু খেলে দ্রুত গতিতে বীর্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। মধুর সাথে দুধ মিশিয়ে খেলে আরো ভালো হবে। যাদের যৌন সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত এক গ্লাস কুসুম গরম দুধে ২ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া উচিত এতে করে তাদের যৌন সমস্যা দূর হবে।
- খেজুর: খেজুর আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম একটি খাবার। খেজুরের অনেক গুণাগুণ রয়েছে যা অন্যান্য খাবারে অনেক কম পাওয়া যায়। গবেষণায় জানা যায় খেজুর একজন সুস্থ সবল মানুষের শরীরের প্রায় ১১ ভাগ আয়রনের চাহিদা পূরণ করে। পুষ্টিবিদদের মতে খেজুরে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আশ বা ফাইবার, ভিটামিন, জিংক, আয়রন, ফসফরাস ইত্যাদি। তাই বিশেষজ্ঞরা বলে খেজুর শারীরিক শক্তি ও যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। এক কথায় এটি দাম্পত্য জীবনের চাহিদা পূরণ করে।
- চর্বিহীন গরুর মাংস: পুরুষের যৌবনের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে গরুর মাংস। গরুর মাংসে প্রচুর পরিমাণে জিংক রয়েছে, যা যৌন উদ্দীপনা বাড়াতে সাহায্য করে। গরুর মাংসের মতো কলিজাতে ও প্রচুর পরিমাণে জিংক রয়েছে। তাই মাংসের পাশাপাশি কলিজা ও খাওয়া উচিত। খেয়াল রাখবেন কম চর্বি যুক্ত মাংস খেতে হবে। সাধারণত গরুর কাঁধের ও রানের মাংসে চর্বি অনেক কম থাকে এবং জিঙ্ক বেশি থাকে। গরুর মাংসের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি মাংস ও খাওয়া উচিত।
- ডিম: নিয়মিত ডিম খেলে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের যৌন ক্ষমতা তিন গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ডিম শরীরের হরমোনের কার্যক্রম ঠিক রাখে কারণ ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৫ ও বি-৬। যা যৌন উত্তেজনা বাড়াতেও সাহায্য করে। শুক্রাণু বৃদ্ধি বা যৌন জীবনে সুখ পাওয়ার জন্য ভিটামিনের পাশাপাশি প্রোটিনের ও গুরুত্ব রয়েছে। ডিম খেলে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়।
- মসুর ডাল: খেলে শুক্রাণু বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসকরা বলে ডাল খেলে মানুষের শরীরে প্রোটিনের চাহিদা শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ পূরণ হয়। এছাড়া এতে ভিটামিন- B, কপার, আয়রন, পটাশিয়াম ইত্যাদি রয়েছে যা খেলে বীর্য অনেক ঘন হয় এবং দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হয়।
- ঝিনুক: ঝিনুক প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকার কারণে এটি যৌনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জিঙ্ক শুক্রাণুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- কুমড়োর বীজ: এতেও প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকার কারণে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে কুমড়োর বীজ খেলে বীর্য অনেক ঘন হয় এবং দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হয়। যৌন স্বাস্থ্যের জন্য কুমড়োর বীজ অনেক উপকারী।
📝 প্রায় প্রতিটি খাবার আমরা অনেকেই নিয়মিত খেয়ে থাকি, কিন্তু এরপরেও অনেকের শুক্রাণু বা বীর্যের সমস্যা রয়েছে। তাই চিকিৎসা ছাড়া নিয়মিত এইসব খাবার খেলে কোন লাভ হবে না। প্রথমে চিকিৎসকের কাছ থেকে জানতে হবে কিভাবে দ্রুত বীর্যপাত হয় এবং বীর্য পাতলা হয়। ডাক্তারের চিকিৎসা পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খেলে ও জীবনযাপন করলে ইনশাআল্লাহ বীর্য অনেক ঘন হবে এবং দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হবে। তাই, একটাই কথা বলতে চাই শুধু খাবারের উপর নির্ভর করলে হবে না। প্রতিটি মানুষের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকতে পারে যা খাবারের মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব হয় না।
আরো পড়ুন: অন্ডকোষ ঝুলে যায় কেন
দ্রুত বীর্যপাতের প্রধান লক্ষণ
দ্রুত বীর্যপাত বা অকাল বীর্যপাতের প্রধান লক্ষণ হলো নারী ও পুরুষ উভয়ের যৌন চাহিদা পূরণ হওয়ার আগেই পুরুষের বীর্য বের হওয়া। স্বাভাবিক বীর্যপাতের সময় ৪ থেকে ৮ মিনিট।
২-৪ মিনিটের আগেই বীর্য বের হয়ে যাওয়াকে দ্রুত বীর্যপাত বা অকাল বীর্যপাত হিসেবে ধরা হয়। তবে, প্রথমবার মিলনে অতিরিক্ত উত্তেজনার ফলে দ্রুত বীর্যপাত হওয়া স্বাভাবিক।
এছাড়া মাঝে মাঝে এমন হওয়া স্বাভাবিক। আরো সহজ করে বললে স্ত্রীর অর্গাজম হবার আগে যদি স্বামীর বীর্য বের হয়ে যায় তাহলে সেটাকে অকাল বীর্যপাত বলা হয়।
দ্রুত বীর্যপাতের চিকিৎসা
দ্রুত বীর্যপাতের চিকিৎসা দুই ধরনের একটি হলো প্রাকৃতিক চিকিৎসা আরেকটি হলো ডাক্তারি চিকিৎসা। যৌন জীবনে সুখ পাওয়ার জন্য এই দুটির চিকিৎসা প্রয়োজন।
দ্রুত দ্রুত বীর্যপাত এর চিকিৎসার আগে জানতে হবে কেন দ্রুত বীর্য পাত হয়। যেমন; যারা মদ ও ধূমপান করে তাদের দ্রুত বীর্য পাত হওয়া স্বাভাবিক। তাই যৌন জীবনে সুখ পাওয়ার জন্য মদ ও ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
একইভাবে বিভিন্ন ঔষধ ও রোগের কারণে বীর্য পাতলা হয়। যেমন; ডায়াবেটিস, গনেরিয়া, ক্যান্সার, মুত্রথলির সংক্রমণ, থাইরয়েড ইত্যাদি। এই সকল রোগ হলে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন।
দ্রুত বীর্যপাতের প্রাকৃতিক চিকিৎসা
দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা হলে সঠিক খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যে সকল খাবার খেলে দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হয় সেগুলো হলো: আখরোট, টমেটো, ডালিম, টক বা লেবুজাতীয় ফল, তৈলাক্ত মাছ, রসুন, কলা, মধু, খেজুর, মসুর ডাল, মেথি, চর্বিহীন গরুর মাংস, ডার্ক চকলেট, হাঁস-মুরগি, ঝিনুক, ডিম, কুমড়োর বীজ, বাদাম, পালং শাক ইত্যাদি।
সাধারণত, প্রথম বার দ্রুত বীর্য বের হলে এর ২ ঘণ্টার মধ্যে বীর্য সহজে বের হবে না। যদি স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করানোর আগে অথবা স্ত্রীর অর্গাজম হওয়ার আগে বীর্যপাত হয় তাহলে সহবাসের পর কিছুক্ষণ সময় বিরতি নিয়ে আবার শুরু করতে হবে। এটি সবসময় না করা ভালো, স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করা যাবে।
তবে পর পর কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে সহবাস না করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্ধেক অধেক সময় ভাগ করে নিয়ে সহবাস করলে তেমন সমস্যা হবে না এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একের অধিক সহবাস করলে বীর্যপাত হতে বেশ সময় লাগবে। কারণ প্রথমবার বীর্য বের হওয়ার পর বীর্য পুনরায় জমা হতে অনেক সময় লাগে। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকালে ১ বার রাতে ১ বার সহবাস হলে দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা দুর হবে। তবে অতিরিক্ত সহবাস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি।
যে সকল পুরুষের অতিরিক্ত উত্তেজনা রয়েছে বা লিঙ্গের শীতলতার সমস্যা রয়েছে তাদের লিঙ্গে সাবান ও জেল বা স্প্রে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
সহবাসের সময় একটু পর পর বিরতি দেওয়া উচিত। বিশেষ করে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করানোর সময়টাতে কিছুক্ষণ পর পর বিরতি দিয়ে করা উচিত। তবে এটি নারীদের জন্য অনেকতা বিরক্তিকর। তাই, পুরুষদের এই সময়টাতে সঠিক নিয়মে ফোরপ্লে অধিক সময় নিয়ে করতে হবে। স্ত্রীর উত্তেজনাপূর্ণ জায়গায় অধিক সময় নিয়ে ফোরপ্লে করতে হবে।
যাদের দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। কেগেল ব্যায়াম থেকে শুরু করে বিভিন্ন হালকা ও মাঝারি ব্যায়াম গুলো করতে হবে। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট ব্যায়াম করলেও ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়ে দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হবে।
অনেকে রয়েছেন যারা কাজের জন্য বা টাকা ইনকামের জন্য দীর্ঘসময় ধরে স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকে। কেউ ৭ দিন পর স্ত্রীকে সময় দিতে পারে আবার কেউ কেউ ১ মাস বা কয়েকবছর পর সেক্ষেত্রে দ্রুত বীর্যপাত হওয়া স্বাভাবিক। নিয়মিত সহবাস করলে সে সমস্যাটা চলে যায়।
একজন পুরুষ যতক্ষণ মানসিক চাপে থাকবে তার হরমোনের সমস্যা তত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। ফলে সহবাসের সমস্যা বৃদ্ধি পাবে। তাই মানসিক চাপ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
যে সকল পুরুষ অতিরিক্ত ডিজিটাল ডিভাইসে আক্রান্ত তাদের এই সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। অনেকে কাজের জন্য ল্যাপটপ, মোবাইল ইত্যাদি সারাক্ষণ ব্যবহার করে এমনকি ঘরে আসলেও এই সকল ডিভাইস ব্যবহার করে থেকে যার ফলে ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। ঘুমের সমস্যার কারণে একজন পুরুষের যৌন জীবনের সমস্যা বাড়তে থাকে।
দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ করার জন্য সঠিক কনডমের ব্যবহার অনেক গুরুত্বপুর্ন। কনডমের উপর সহবাসের সময় অনেকটা নির্ভর করে। যেমন: অনেক কোম্পানি মোটা কনডম তৈরি করে যা দ্রুত উত্তেজিত থেকে মুক্তি দেয়। সাধারণত ক্লাইম্যাক্স বিলম্বিত রাসায়নিক দিয়ে এই কনডম গুলো তৈরি হয়। সহবাসে তৃপ্তি পাওয়ার জন্য সঠিক কনডম ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকে সহবাসের আগে হস্তমৈথুন করার পরামর্শ দিয়ে থাকে। এর ফলে দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হবে। তবে এটি ভালো নয়, বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে উৎসাহিত করে না। আপনার যদি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বীর্য বের হয় তাহলে এটি করে দেখতে পারেন।
সর্বশেষ দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা দূর করার জন্য সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য খেতে হবে এবং যৌন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে।
আরো পড়ুন: পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার ক্রিম এর নাম
দ্রুত বীর্যপাতের ট্যাবলেট
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা দ্রুত বীর্য পাতের জন্য Manforce 25 MG Tablet খাওয়া যাবে। এই ট্যাবলেটটি পুরুষদের যৌন সমস্যার জন্য। এই ট্যাবলেটটি খাওয়ার পর লিঙ্গের পেশী সক্রিয় হয় এবং সহবাসের সময় বৃদ্ধি পায়। যেসব পুরুষেরা পুরুষত্বহীনতায় ভুগছেন তাদের Manforce 25 MG Tablet এই ট্যাবলেটটি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এছাড়া, ফুসফুস-ধমনী গত উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় এই ট্যাবলেটটি ব্যবহার করা হয়। যাইহোক এই ট্যাবলেটটি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া যাবে না। কারণ:
ম্যানফোর্স ২৫ এম জি ট্যাবলেট এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাব দিক রয়েছে, যেমন:
- মাথা ব্যাথা
- মাথা ঘোরা
- ডায়রিয়া
- বদহজম
- হাড়ে ব্যথা
- বেদনাদায়ক প্রস্রাব
- অনিদ্রা
- মুখ লাল হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি।
এই ট্যাবলেটটি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খেলে সমস্যা হবে। বিশেষ করে বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের অনেক বড় সমস্যা হতে পারে। তাই দুধ খাওয়ানোর মায়েরা ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া এই ঔষধ খাবেন না।
FAQ: প্রশ্ন ও উত্তর
কোন ভিটামিন খেলে বীর্য গাঢ় হয়?
গবেষণা অনুযায়ী জানা যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি খেলে পুরুষের শুক্রাণুর পরিমাণ ১০০% এর বেশি বেড়ে যায়। ২ মাস নিয়মিত বেশি বেশি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে।
দ্রুত শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়ায় কোন ধরনের খাবার?
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জিঙ্ক, ভিটামিন সি ও অন্যান্য ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার দ্রুত শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
দ্রুত বীর্যপাত হওয়ার পরেও কিভাবে স্ত্রীর যৌন চাহিদা পূরন করা যায়?
স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করানোর আগে স্ত্রীর বিশেষ কিছু স্থানে স্পর্শ করলে স্ত্রীর উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং খুব সহজে অর্গাজম হয়। প্রয়োজন হলে তেল বা স্প্রে ব্যবহার করলে স্ত্রীর যৌন উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পাবে। তবে পুরুষের লিঙ্গে তেল বা স্প্রে ব্যবহার করলে দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা হবে।
কিভাবে ফোর প্লে করবেন?
নারীদের সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গ গুলো হলো যৌনাঙ্গ, কান, দুধের বোঁটা, পেট, নাভি, গলা। স্ত্রীর শরীরের এই অংশ গুলোতে বেশি বেশি চুমু দিতে হবে ও আদর করতে হবে। এক কথায় স্ত্রীর সম্পূর্ণ শরীরে আদর করাকে ফোরপ্লে বলে।
সপ্তাহে কতবার বীর্য ফেলা উচিত?
সপ্তাহে ২ থেকে ৪ বার বীর্য ফেলা যাবে। তবে ৫ বারের বেশি বীর্য ফেলা উচিত না। যাইহোক, এই বিষয়ে চিকিৎসা নির্দেশিকা নেই । নিয়মিত বীর্যপাত করলে উচ্চ রক্তচাপ কমে, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, যেনা বা পর্ণ ভিডিও আসক্তি কমে।
পুরুষের প্রতিদিন কতবার বীর্যপাত করা উচিত?
বীর্যপাত সপ্তাহে একবার বা প্রতিদিন করা যেতে পারে। এটি আপনার পছন্দের উপর নির্ভর। এর কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। হস্তমৈথুন বা বীর্যপাত মানসিক চাপ ও মনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ঘন ঘন বীর্যপাত কি প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে?
ডেইলি মেইল এর শিরোনামে ২০১৭ সালে একবার লেখা হয়েছিল মাসে ২১ বার বীর্যপাত একজন পুরুষের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। যদিও এটির প্রমাণ চূড়ান্ত নয়, তবে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
হস্তমৈথুনের উপকারিতা কি?
হস্তমৈথুন বা বীর্যপাতের ফলে শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, অতিরিক্ত যৌন চাহিদা কমে, ভালো ঘুম হয়, মানসিক চাপ ও বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, হস্তমৈথুন যৌনরোগ কমিয়ে আনে।
হস্তমৈথুনের অপকারিতা কি?
অধিক হস্তমৈথুন বা বীর্যপাত স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। ঘন ঘন হস্তমৈথুন নেশায় পরিনত হতে পারে। এটি সামাজিক জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। সবসময় এটি করার ইচ্ছা হবে। ভবিষ্যতে সঙ্গীর সঙ্গে সুন্দর যৌন সম্পর্কের সমস্যা হতে পারে।
হস্তমৈথুন কি ইসলামে হারাম?
কিছু ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের মতে হস্তমৈথুন সম্পূর্ন হারাম। আবার কিছু ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের মতে হস্তমৈথুন করা হারাম না তবে না করা উত্তম। কিন্তু, পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতে বলা হয়েছে “নিজের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না”। তাই এই আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নিজে নিজে যৌন চাহিদা পূরণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
শরীরে বীর্য ধরে রাখলে কি হয়?
শরীরে বীর্য ধরে রাখলে তেমন ক্ষতি হয় না। তবে অনেক দিন বীর্যপাত না হলে স্বপ্নদোষ হতে পারে।
আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পেরেছেন কি খেলে বীর্য অনেক ঘন হয় এবং দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হয়। শরীরের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য যেমন খাবারের প্রয়োজন তেমনি দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ করার জন্য সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রয়োজন।
তবে, খাবারের পাশাপাশি দ্রুত বীর্যপাতের চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসকের মাধ্যমে দ্রুত বীর্য পাতের ট্যাবলেট বা অন্যান্য সেবার প্রয়োজন রয়েছে। তাই যাদের দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা রয়েছে তাদের খাবারের পাশাপাশি একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করা উচিত।