সজনে পাতার উপকারিতা, না জেনে ভুল করছেন না তো?

সজনে আমাদের সকলেরই বেশ পরিচিত একটি সবজি। সজনে অনেকভাবে রান্না করা হয়। সজনের বৈজ্ঞানিক নাম হলো- Moringa oleifera। সজনের পাশাপাশি সজনে পাতার উপকারিতা ও অনেক রয়েছে। সজনে পাতার উপকারিতা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাইতো গবেষকরা সজনে পাতাকে ‘সুপার ফুড’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

তবে অনেক কম মানুষই সজনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে অবগত। কি আছে সুপার ফুড সজনেতে? কেনই বা একে ‘সুপার ফুড’ বলা হয়?

সজনে পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার পদ্ধতি নিয়ে  মিরপুর ইসলামী ব্যাংক অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তাসরিয়ার রহমান জানান,

সজনে পাতার সুবিধার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ ও ভিটামিন। পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ছাড়াও এতে রয়েছে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট। অনেক পুষ্টি উপাদান একত্রিত করে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

সজনে থেকে পাওয়া পুষ্টির পরিমাণ 

প্রতি ১০০ গ্রাম সজনে পাতা থেকে পাওয়া যায়-

শর্করা ৮.২৮ গ্রাম

ফাইবার ২.০ গ্রাম

স্নেহ  ১.৪০ গ্রাম

 প্রোটিন  ৯.৪০ g

ক্যালসিয়াম ১৮৫ মিলিগ্রাম

লৌহ ৪.০০ মিলিগ্রাম

ম্যাগনেশিয়াম ১৪৭ মিলিগ্রাম

সোডিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম

ভিটামিন এ প্রায় ৩৭৮ মাইক্রোগ্রাম 

ভিটামিন সি ৫১.৭ মিলিগ্রাম

সজনে পাতার উপকারিতা 

১. এটি রোগ প্রতিরোধে সহযোগিতা করে।

২. হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সজনে পাতার উপকারিতা অনেক।

৩. পুরুষদের টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।

৪. শরীরের বিভিন্ন ব্যথা দূর করতে প্রদাহনাশক হিসাবে কাজ করে।

৫. খাবার সহজে হজম না হওয়া, পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমে থাকা, বুকজ্বালা ইত্যাদিসহ পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা সমস্যা কমাতে সজনে পাতার উপকারিতা অনেক।

৬. হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে। সজনে পাতায় প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে, যা দাঁত ও হাড়ের গঠনের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।

৭. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সজনে পাতার উপকারিতা ব্যাপক।

৮. সজনে পাতার উপকারিতা হিসেবে এতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বকে বয়সের ছাপ দ্রুত পড়তে দেয় না।

৯. সজনে পাতায় থাকা ভিটামিন ‘এ’ চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

১০. সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল যৌগ রয়েছে। ত্বকের সংক্রমণ, মূত্রনালী সংক্রমণ এবং হজমের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে যা সজনে পাতার উপকারিতা।

“পুষ্টির ডিনামাইট” সজনে

সজিনার  এর বৈজ্ঞানিক নাম Moringa Oleifera। বীজ ক্যাপসুলের আকৃতির কারণে একে ইংরেজিতে”ড্রামস্টিক ট্রি বলা হয়।

বাড়ির আঙিনায় জন্মানো গাছটিকে “মাল্টিভিটামিন ট্রি”ও বলা হয় কারণ এর পুষ্টিগুণ, ঔষধি গুণাবলী এবং সারা বছর ফলন পাওয়া যায়।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে সজনের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ এশিয়া। শীত প্রধান দেশ ছাড়া প্রায় সারা পৃথিবীতেই এটি জন্মে।

বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এর চাষ হয়। সারা বিশ্বে ১৩ প্রজাতির সজিনা পাওয়া যায়।

এসব অঞ্চলে প্রদাহ থেকে শুরু করে গনোরিয়া কিংবা ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রচলিত চিকিৎসায় সজিনা ব্যবহৃত হয়।

একইসঙ্গে ঔষধিগুণ ও পুষ্টিগুণ থাকায় সজনেকে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ ও ‘অত্যাশ্চার্য বৃক্ষ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। তাইতো সজনে পাতার উপকারিতা অনেক।

আরও জানুন কাঁচা কলার উপকারিতা

সজনে পাতার উপকারিতা হিসেবে এর বহুমুখী ব্যবহার

সজনের পাতা, শিকড় এবং অপরিণত শুঁটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এছাড়া এই গাছের বাকল, শুঁটি, পাতা, বাদাম, বীজ, কন্দ, শিকড় এবং ফুলসহ গোটা অংশই খাওয়া যায়।

জন হপকিন্স ম্যাগাজিনে সজনেকে শুষ্ক ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অপুষ্টি প্রতিরোধে ‘শক্তিশালী অস্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে সজনে পাতার উপকারিতা হিসেবে এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও ঔষধি গুণ আছে বলে উল্লেখ করা হয়।

সবজির চেয়ে সজনে পাতার উপকারিতা আরও বেশি। সজনে পাতার উপকারিতা হিসেবে এতে আছে নয় ধরনের অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো এসিডসহ ৩৮ শতাংশ আমিষ।

এছাড়াও সজনে পাতার উপকারিতা হিসেবে এতে আছে ক্যালসিয়াম আয়রন, পটাসিয়াম ও ভিটামিন এ, সি এবং বি।

সজনের বীজে থাকে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিন।

কিন্তু সজনে পাতার উপকারিতা কেবল ‘স্বাস্থ্যের জন্য ভালো’ বলেই শেষ করলে এর যথাযথ মূল্যায়ন হবে না বলেই ম্যাগাজিনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, সজনে পাতার উপকারিতা হিসেবে এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যামিনো এসিড থাকায় এটি ত্বকের এবং চুলের জন্য খুব উপকারী।

সজনে পাতার উপকারিতা ও ঔষধি গুণাগুণ

কেবল খাদ্য উপাদানই না, সজনে পাতার উপকারিতা হিসেবে এর ঔষধিগুণও বিদ্যমান। এর বাকল, শিকড়, ফুল, ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাও বিভিন্ন রোগের প্রতিকার হিসেবে কাজ করে।

সজনে গাছের পাতা বছরে সাতবারও কাটা যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় এই গাছের অনেক অংশ আয়ুর্বেদিক ওষুধে ব্যবহৃত হয় বলে “অলৌকিক গাছের” উপাধিও পেয়েছে সজনে।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকার দ্বারা পরিচালিত বিশ্বের বৃহত্তম চিকিৎসা গ্রন্থাগার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে সজনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানি চিকিৎসায় সজনে পাতার উপকারিতা অনেক। এমনকি প্রথাগত পদ্ধতিতেও অনেক রোগের চিকিৎসায় সজনে ব্যবহার করা হয়।

বিশেষ করে পরীক্ষাগারে প্রাণীদের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, সজনে গাছের পাতা এবং বীজে সুরক্ষার জন্য জৈবসক্রিয় যৌগ উৎপাদিত হয়।

ফলস্বরূপ, এটিতে শক্তিশালী কার্ডিওপ্রোটেক্টিভ এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-অ্যাজমা, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে এবং এমনকি শরীরে টিউমারের বিস্তার রোধ করে।সজনের শুঁটিগুলিতে ওলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ বীজ থাকে, যা শরীরে প্রচুর পরিমাণে “ভাল” কোলেস্টেরল তৈরি করতে সহায়তা করে।

২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ফাইটোথেরাপিতে সজনের প্রচলিত ব্যবহারের ওপর একটি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়।

এতে বলা হয়, সজনে পাতার উপকারিতা হিসেবে এতে আছে দইয়ের চেয়ে নয় গুণ বেশি প্রোটিন, কমলালেবুর চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি এবং কলার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি পটাসিয়াম থাকে।

এছাড়াও এতে পালং শাকের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি আয়রন, গাঁজরের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘এ’ এবং দুধের চেয়ে ১৭ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

অর্থাৎ কোন খাদ্য উপাদানের জন্য যেসব খাবারের ওপর আমরা তুলনামূলক অনেক বেশি নির্ভরশীল, সেই একই খাদ্য উপাদান কয়েকগুণ বেশি পরিমাণে থাকে সজনের পাতা, শুঁটি ও বীজে।

এছাড়া ক্ষত, প্রদাহ এবং টিউমার প্রতিরোধী হিসেবে সজনের শিকড়ের নির্যাস ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিমের মতে, সজনায় প্রচুর পটাশিয়াম থাকায় এর পাতার রস বা সবজি বা চা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ও কমাতে সাহায্য করে।এই পদার্থটি কোলেস্টেরলের ভারসাম্যের মাধ্যমে ওজন কমাতেও ভূমিকা রাখে।

আরও জানুন মাথা ব্যথা কমানোর উপায়

চিকিৎসায় সজনের ব্যবহার

১. কৃষি তথ্য সার্ভিস ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্যমতে, শরীর, কান ও মাথাব্যথার মতো সমস্যায় সজনে পাতার উপকারিতা অনেক।

২. শরীরের কোনো স্থান ফুলে গেলে বা ব্যথা হলে সজনের শিকড় বেটে প্রলেপ দিলে ব্যথা ও ফোলা সেরে যায়।


৩. এছাড়া সজনের আঠা কপালে মালিশ করলে ও দুধের সাথে খেলে মাথা ব্যথা সেরে যায়।

৪. সজনের ফুল দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

৫. আর ফুলের রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মূত্রপাথরি দূর হয়। একইসঙ্গে তা হাঁপানি রোগের ক্ষেত্রেও বিশেষ উপকারী।


৬. সজনে পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে খেতে দিলে বাচ্চাদের পেট জমা গ্যাস দূর হয় এবং এর চাটনি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।


৭. এই রস হৃদরোগের চিকিৎসা এবং রক্ত ​​​​সঞ্চালন উন্নত করতে ব্যবহৃত হয়।

৮. জন হপকিন্স ম্যাগাজিনে সজনে নিয়ে ভারতে পরিচালিত ছয়টি গবেষণার উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, সজনে পাতার উপকারিতা হিসেবে এর নির্যাস টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজ কমিয়ে দেয়।

৯. সজনে পাতার উপকারিতা এত যে, এর শাক খেলে যন্ত্রণাধায়ক জ্বর ও সর্দি দূর হয় এবং
এর পাতার রসে বহুমূত্র রোগ সারে।
ক্ষতস্থান সারার জন্য সজনে পাতার পেস্ট উপকারী।

১০. সজনের ফল নিয়মিত রান্না করে খেলে গেঁটে বাত থেকে স্বস্তি পাওয়া যায়।

১১. এর বীজের তেল মালিশ করলে বিভিন্ন চর্মরোগ, বাত বেদনা, বোধহীনতা দূর হয়।

১২. সজনে পাতার উপকারিতা হিসেবে এর রস পোকার কামড়ে এন্টিসেপ্টিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

১৩. শরীরের প্রতিরোধক ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সজনে পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার অনেক। এছাড়াও শরীর থেকে বিষাক্ত দ্রব্য, ভারি ধাতু অপসারণ এবং শরীরে রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি নিতে সহায়তা করে।

১৪. এছাড়াও মাথা ধরা, মাইগ্রেন, শ্বাসকষ্ট, আর্থাইটিস এবং চুলপড়া রোগের চিকিৎসায় ও সজনে পাতার উপকারিতা অনেক ভূমিকা রাখে।

‘আয়রন ম্যান’ সজনে

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়, সবজিকে যদি সুপারহিরোদের সঙ্গে কল্পনা করা হতো, তাহলে সজনে হতো আয়রন ম্যান।

সজনের মধ্যে এমন এক রাসায়নিক বিন্যাস রয়েছে যার সঙ্গে ‘ব্রকলি’র রাসায়নিক বিন্যাস এর মিল পাওয়া গেছে।

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রকলি নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং অনেক ক্ষেত্রে অটিজমে আক্রান্তদের মধ্যে আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলো নমনীয় করে।

জন হপকিন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রবন্ধে স্কুল অফ মেডিসিনের লুইস বি এন্ড ডরোথি কুলম্যান কেমোপ্রোটেকশন সেন্টারের পরিচালক জেড ফাহে বলেন, “আমি নিশ্চিত যে শেষ পর্যন্ত সজনেতেও ক্যান্সার-প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে।

তিনিসহ আরো অনেক জৈব রসায়নবিদ বিশ্বাস করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দিনগুলিতে অধিক শুষ্ক হয়ে ওঠা অঞ্চলে সজনে একটি প্রধান খাদ্য উৎস হয়ে উঠতে পারে। বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ এবং অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এটি সাহায্য করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

“শুষ্ক এবং দরিদ্র এলাকার লোকেরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে,” তিনি বলেছেন। “আসলে, এই উদ্ভিদটি যেখানেই বৃদ্ধি পায় সেখানেই জীবন রক্ষাকারী হতে পারে।”

সজনে পাতা কীভাবে খাবেন

সজনে পাতার উপকারিতা অনেক তাই এটি বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে-

শাকের মতো ভেজে খাওয়া যেতে পারে বা সেদ্ধ করে ভর্তা করে খাওয়া যেতে পারে। তবে রান্না করলে ভিটামিন সি অনেকাংশে কমে যায়।

প্রাকৃতিকভাবে রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে খাওয়া যেতে পারে। এতে করে সজনে পাতার উপকারিতা অনেকাংশে বেড়ে যায়।

ব্লেন্ড করে জুস হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে।

চায়ের মধ্যে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

অতিরিক্ত কোনো কিছুই শরীরের জন্য ভালো নয়। তাই সজনে পাতার উপকারিতা অনেক থাকলেও একদম প্রতিদিন না খেয়ে বিরতি দিয়ে খাওয়া ভালো। ১০-১৫ দিন পর পর কিছুদিন বিরতি দিয়ে খেলে ভালো হয়।

বাংলাদেশে সজনের চাষ

বারোমাসি সজনের জাত প্রায় সারা বছরই বার বার ফলন দেয়। এই গাছে সব সময় ফুল ও কচি শুঁটি দেখা যায়।

আমাদের দেশে দুই থেকে তিন প্রকার সজনে পাওয়া যায়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৩ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন সজনে আবাদ করা হয়েছে ৮ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে ।

এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৩ কেজি সজনে রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে।

তবে এই পরিমাণ অত্যন্ত কম।

খুলনার ডুমুরিয়ায় সজনের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন নবদ্বীপ মল্লিক। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সজনের পাতা গুঁড়ো করে উৎপাদিত পাউডার বিদেশে রপ্তানির চেষ্টা করেছিলেন তিনি।

তবে একেবারেই স্পর্শহীনভাবে উপায়ে এই গুঁড়ো প্রস্তুত না করায় স্যাম্পল পাঠালেও শেষ পর্যন্ত তা ক্রেতারা কেনেননি।

এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে সজনে পাতার উপকারিতা হিসেবে এর চাষ শুরু হয়নি বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিনুর ইসলাম।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায় যেসব সবজিকে বাণিজ্যিক পর্যায়ে উন্নীত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার মধ্যে সজনেও আছে কারণ সজনে পাতার উপকারিতা অত্যাধিক।

সজনের অপকারিতা

সজনে পাতার উপকারিতা অনেক বেশি থাকলেও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত প্রবন্ধে এর কয়েকটি ঝুঁকির দিক উল্লেখ করা হয়েছে।

১ গর্ভবতী নারীদের জন্য: সজনে পাতা প্রতিদিনের আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি প্রজননরোধীও হতে পারে। সজনে পাতার উপকারিতা আছে কিন্তু গর্ভাবস্থায় খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। সজনে পাতার ডালে থাকা বিষাক্ত পদার্থ শরীরে প্রবেশ করলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এই ডাল পাতার রস বা গুঁড়ার সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় সেবন এড়িয়ে চলাই ভালো।।

২ থাইরয়েড চিকিৎসায়: থাইরয়েডের ক্ষেত্রে সজনে পাতার উপকারিতা থাকলেও থাইরয়েডের চিকিৎসার সময় অন্য কোনো ওষুধের সাথে মেশালে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৩ ডায়াবেটিকসের ক্ষেত্রে: সজনে পাতা রক্তে শর্করা কমিয়ে দেয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা খুবই কমিয়ে দিতে পারে।ডায়াবেটিস রোগীদের অনেকে মনে করেন, শুধু সজনে পাতা খেলে ডায়াবেটিস  ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। ডায়াবেটিস রোগীদের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি সজনে পাতার উপকারিতা আছে। প্রি-ডায়াবেটিস রোগিরা সজনে পাতা খাওয়ার মাধ্যমে এবং সঙ্গে অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেহে সুগারের মাত্রা ঠিক রাখার চেষ্টা করতে পারেন।

৪ রক্তচাপের ওষুধের জন্য: রক্তচাপ কমাতে সজনে পাতার উপকারিতা আছে। তবে রক্তচাপ কমানোর ওষুধের সাথে এটি খেলে তা রক্তচাপ অতিরিক্ত কমিয়ে দিতে পারে।

৫. পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিমের মতে, যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে তাদের সজনে না খাওয়াই উত্তম।

কারন কিডনি রোগীদের পটাসিয়াম ফসফরাস এবং প্রোটিন রেস্ট্রিক্টেড করা হয়। অন্যদিকে সজনে পাতায় অনেক পটাসিয়াম ফসফরাস এবং প্রোটিন থাকে।

আরও জানুন নিম পাতার উপকারিতা

সজনে পাতা কীভাবে খাবেন?

সজনে পাতার উপকারিতা অনেক তাই এটি বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে-
শাকের মতো ভেজে খাওয়া যেতে পারে বা সেদ্ধ করে ভর্তা করে খাওয়া যেতে পারে। তবে রান্না করলে ভিটামিন সি অনেকাংশে কমে যায়।
প্রাকৃতিকভাবে রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে খাওয়া যেতে পারে। এতে করে সজনে পাতার উপকারিতা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
ব্লেন্ড করে জুস হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে।
চায়ের মধ্যে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

চিকিৎসায় সজনের ব্যবহার

১. কৃষি তথ্য সার্ভিস ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্যমতে, শরীর, কান ও মাথাব্যথার মতো সমস্যায় সজনে পাতার উপকারিতা অনেক।
২. শরীরের কোনো স্থান ফুলে গেলে বা ব্যথা হলে সজনের শিকড় বেটে প্রলেপ দিলে ব্যথা ও ফোলা সেরে যায়।

৩. এছাড়া সজনের আঠা কপালে মালিশ করলে ও দুধের সাথে খেলে মাথা ব্যথা সেরে যায়।
৪. সজনের ফুল দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

সজনে পাতার উপকারিতা ও ঔষধি গুণাগুণ

সজনের পাতা, শিকড় এবং অপরিণত শুঁটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এছাড়া এই গাছের বাকল, শুঁটি, পাতা, বাদাম, বীজ, কন্দ, শিকড় এবং ফুলসহ গোটা অংশই খাওয়া যায়।
জন হপকিন্স ম্যাগাজিনে সজনেকে শুষ্ক ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অপুষ্টি প্রতিরোধে ‘শক্তিশালী অস্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

সজনে পাতার উপকারিতা

১. এটি রোগ প্রতিরোধে সহযোগিতা করে।
২. হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সজনে পাতার উপকারিতা অনেক।
৩. পুরুষদের টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।
৪. শরীরের বিভিন্ন ব্যথা দূর করতে প্রদাহনাশক হিসাবে কাজ করে।

সতর্কতা

সজনে পাতার উপকারিতা অনেক থাকলেও এটি বেশি গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।

সজনে পাতা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

রক্তচাপের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত সজনে পাতার গুঁড়া বা জুস খেলে রক্তচাপ কমে যায়। সজনে পাতার সংলগ্ন ডাল আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই ক্ষতিকারক উপাদানগুলি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

তবে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কিডনি সুরক্ষায় সজনে পাতার উপকারিতা অনেক। এছাড়া সজনে পাতা থেকে উৎপাদিত পাউডার তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। সর্বোপরি সজনে আমাদের জন্য বেশ উপকারী।

Leave a Comment

error: Content is protected !!