স্বল্পমাত্রায় জন্মনিয়ন্ত্রক পিল গুলোর মধ্যে পরিচিত একটি নাম হল ফেমিকন পিল। আপনি যদি স্বল্প মেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে চান তাহলে আপনার জন্য ফেমিকন হবে বেস্ট। কারণ ফেমিকন পিল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। ফেমিকন একদিকে যেমন স্বল্পমাত্রায় জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর তেমনি এর সামান্য হের ফেরে হতে পারে গর্ভধারণ। তাই ফেমিকন পিল খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে এই পিল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। ফেমিকন খাওয়ার কত দিন পর সহবাস করা যায়, ফেমিকন পিল খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয়, প্রথমবার পিল খাওয়ার নিয়ম, ফেমিকন পিলের কার্যকারিতা কত ঘন্টা, ফেমিকন খাওয়ার অপকারিতা, ফেমিকন এর দাম কত, এই সকল প্রশ্নের উত্তর জানিয়ে দিব এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে।
Table of Contents
ফেমিকন পিল এর ব্যবহার বিধি
- বাংলাদেশের প্রায় সকল মিশ্র খাবার পিলের মতো ফেমিকন এর প্যাকেটেও ২১টি সাদা গর্ভনিরোধক বড়ি (যার প্রধান উপাদান হরমোন) এবং ৭টি খয়েরি বড়ি (আয়রন বড়ি) থাকে। কোন কোন প্যাকেটে বা পাতায় শুধু মাত্র ২১টি জন্মনিরোধক বড়ি থাকে।
- প্রথমবার ফেমিকন পিল শুরু করার সময় মাসিকের প্রথম দিন। অর্থাৎ মাসিকের প্রথম দিন হতে সাদা বড়ি খাওয়া শুরু করতে হবে। (তবে মাসিক শুরু প্রথম দিন হতে ৫ম দিন পর্যন্ত যে কোন দিন থেকেও শুরু করা যাবে)।
- যে মহিলা এমআর বা গর্ভপাত করেছেন বা যে মহিলার গর্ভপাত হয়েছে, তিনি যদি ফেমিকন পিল জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি হিসাবে পছন্দ করেন তবে গর্ভপাত /এম আর করার দিন থেকেই বা পরবর্তী ৫ম দিনের মধ্যে বড়ি খাওয়া শুরু করতে হবে।
- ফেমিকন সেবনের ক্ষেত্রে সব সময় প্রথম বড়ি দিয়ে শুরু করতে হবে। বড়ির পাতার দিক নির্দেশনা (তীর চিহ্ন বা আঙ্গুল) অনুসরণ করে প্রথম বড়ি হতে ২১ দিনে ২১টি সাদা বড়ি খেতে হবে।
- সাদা বড়ি শেষ হয়ে যাবার পর একইভাবে একটি করে ৭দিনে ৭টি খয়েরি বড়ি খেতে হবে। খয়েরী বড়ি খাওয়াকালীন সাধারণ মাসিক শুরু হয়। মাসিক আরম্ভ হলেও খয়েরী বড়ি খাওয়া বন্ধ করা যাবে না।
- মাসিক হোক বা না হোক ৭টি খয়েরী বড়ি শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই উপরের নিয়ম অনুযায়ী ফেমিকন এর নতুন একটি পাতা থেকে আবার সাদা বড়ি খাওয়া শুরু করতে হবে।
- ফেমিকন পিল পানি দিয়ে গিলে ফেলতে হয়। প্রতিদিন একই সময়ে বড়ি খাওয়ার অভ্যাস করা ভাল। বড়ি খাওয়ার সব চেয়ে ভাল সময় হচ্ছে রাতের খাবারের পরে বা ঘুমানোর আগে।
- ফেমিকন ব্যতীত যে সব পিল এর প্যাকেটে ২১টি বড়ি থাকে সেক্ষেত্রে ২১টি বড়ি শেষ হয়ে গেলে মাসিকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। মাসিক শুরু হলে মাসিকের ১ম দিন থেকে আবার নতুন প্যাকেটের বড়ি খাওয়া শুরু করতে হবে। যদি মাসিক না হয় এবং গ্রহীতা নিশ্চিত থাকেন যে কোন বড়ি খেতে ভুল হয়নি তবে, শেষ বড়ি খাবার ৭দিন পরে আবার বড়ি খেতে শুরু করবেন।
ফেমিকন পিল প্রথম শুরু করার নিয়ম
মাসিকের প্রথম দিন থেকে: ডিম্বস্ফুটন সঠিকভাবে প্রতিরোধ করার জন্য মাসিকের প্রথম দিন থেকেই ফেমিকন পিল গ্রহণ শুরু করা উচিত। যদি মাসিক শুরু হতে কোন কারণে দেরী হয় অথবা অন্যান্য অস্বাভাবিক উপসর্গ থাকে তবে ফেমিকন গ্রহণ শুরু করার আগে মহিলা গর্ভবতী কিনা সে সম্বন্ধে নিশ্চিত হবে।
যে কোন দিন থেকে: মহিলা যদি নিশ্চিত হন যে, তিনি গর্ভবতী নন তবে প্রয়োজনে যে কোন দিন থেকে ফেমিকন পিল খাওয়া শুরু করতে পারেন। তবে পরবর্তী ৭ দিন তাকে কনডম ব্যবহার করতে হবে। এভাবে বড়ি খেতে শুরু করলে পরবর্তী মাসিকের সময় পিছিয়ে যাবে (যত দিন না বড়ি শেষ হয়)।
ফেমিকন পিল খাওয়া বাদ পড়লে করণীয়
- যদি ১ দিন ফেমিকন পিল খেতে ভুলে যান তাহলে যখনই মনে পড়বে তখনই একটি বড়ি খাবেন এবং ঐ দিনের বড়িটি যথাসময়ে খাবেন।
- যদি পর পর ২ দিন বড়ি খেতে ভুলে যান তাহলে মনে পড়ার সাথে সাথে ২টি বড়ি খাবেন এবং তার পরদিন নির্দিষ্ট সময়ে ২টি খাবেন। পাতার বাকি বড়ি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতি দিন একটি করে খাবেন এবং পরবর্তী মাসিক না হওয়া পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করবেন বা স্বামীর সাথে সহবাসে বিরত থাকবেন।
- যদি পর পর ৩দিন বড়ি খেতে ভুলে যান তবে ঐ পাতা থেকে বড়ি আর খাবেন না এবং পরবর্তী মাসিকের আগ পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করবেন বা সহবাস থেকে বিরত থাকবেন।
ফেমিকন এর কার্যকারিতা ও উপকারিতা
কার্যকারিতাঃ
ফেমিকন পিল সঠিকভাবে গ্রহণ করলে প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ কার্যকরী।
ফেমিকন পিল এর সুবিধাঃ
- সকল বয়সী মহিলা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি খাবার বড়ি হিসাবে ফেমিকন ব্যবহার করতে পারেন।
- এটি একটি অস্থায়ী পদ্ধতি, যে কোন সময় বড়ি ছেড়ে দিয়ে অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করা যায় অথবা গর্ভধারণ করা যায়।
- সঠিকভাবে বড়ি খেলে এটি অত্যন্ত কার্যকারী (শতকরা ৯৭-৯৯.৯ ভাগ)
- মাসিক চক্রকে নিয়মিত করে।
ফেমিকন পিল এর অসুবিধা সমূহঃ
- প্রতিদিন খেতে হয়
- মাসিক স্রাব বন্ধ থাকতে পারে (Post Pill amenorrhaea)।
- যোনিপথের পিচ্ছিলতা কমে যেতে পারে
- বুকের দুধ কমে যেতে পারে
- বিমর্ষতা দেখা দিতে পারে
জন্মনিয়ন্ত্রণের খাবার বড়ি ব্যবহারের প্রথম দিকে (বিশেষত ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে) ছোট খাট পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন-
- স্তন স্পর্শ কালে ব্যথার অনুভুতি (Tenderness), বেদনা
- দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব
- বমি বমি ভাব
- মাথা ধরা
- মুখে ব্রণ
- ওজন বৃদ্ধি
- যে সমস্ত মহিলার মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (Myocardial Infarction MI)- এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বিদ্যমান, খাবার বড়ি তাদের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দেয়।
- যে সমস্ত মহিলার স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি আছে (যেমন ধুমপান/তামাক পাতা গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপ) খাবার বড়ি ব্যবহার তাদের ষ্ট্রোকের ঝুঁকি আরো বাড়ায়।
- যদি কারো আগে রক্ত জমাট বেঁধে থাকে, বা হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাহলে তাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়া উচিত নয়
ফেমিকন যাদের জন্য উপযুক্ত
- যারা জন্মনিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী একটি অস্থায়ী পদ্ধতি নিতে চান।
- মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাবের দরুন যারা রক্তস্বল্পতায় ভোগেন।
- মাসিক চক্র যাদের অনিয়মিত
- যে সব মা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তারা বাচ্চার বয়স ৬ মাস হবার পর জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসাবে মিশ্র খাবার বড়ি খেতে পারেন।
- যেসব মা শিশুকে বুকের দুধ দিচ্ছেন না, তাদের শিশুর প্রসবের ৪ সপ্তাহ পর থেকে খাওয়ার বড়ি শুরু করা উচিত।
আরও জানুন: পিরিয়ডের সময় কি কি খাওয়া যাবে না
ফেমিকন পিল যাদের জন্য উপযুক্ত নয়
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে প্রস্ত্ততকৃত খাবার বড়ি ব্যবহারে বিবেচ্য স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক উপযুক্ততার নির্দেশিকা অনুযায়ী সে সব স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক অবস্থায় খাবার বড়ি প্রদান করা যাবে না তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো
- প্রসবের ৬ মাসের মধ্যে যদি শিশুকে বুকের দুধ পান করানো হয়, তবে…
- ধুমপায়ী নারী যাদের বয়স ৩৫ বছর ও তদুর্ধে, ধুমপান বলতে বুঝায়ঃ সিগারেট, বিড়ি ও তামাক সেবন বা তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি সেবন (যেমন তামাক পাতা, গুল, জর্দ্দা ইত্যাদি)।
- হৃদযন্ত্র ও রক্ত সংবহন নালীর রোগ-ব্যাধির জন্য একাধিক ঝুঁকি বিদ্যমান, যেমন বয়সের বৃদ্ধি, ধুমপান, তামাকপাতা বা জর্দা সেবন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এবং রক্তে উচ্চ মাত্রার চর্বি ইত্যাদি।
- উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস আছে (গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ সহ) কিন্তু রক্তচাপ মাপা সম্ভব নয় এমন পরিস্থিতিতে।
- উচ্চ রক্তচাপ যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রিত তবে বয়স ৩৫ বছর বা তদুর্ধে।
- উচ্চ রক্তচাপঃ সিস্টলিক ১৪০ অথবা ডায়াস্টলিক ৯০ মিমি পারদ বা তার বেশি হলে।
- সার্ভিক্স এর ক্যান্সার।
- রোগ অনির্ণীত স্তনের পিন্ড বা চাঁকা।
- স্তনের ক্যান্সারঃ বর্তমানে আছে বা অতীতে ছিল।
- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
- ডায়াবেটিস সংশ্লিষ্ট জটিলতা (নেফরোপ্যাথি, রেটিনোপ্যাথি/নিউরোপ্যাথি, রক্ত সংবহননালীর অন্যান্য ব্যাধি, অথবা ২০ বছর ও তার বেশি সময় ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত)।
- যক্ষার ঔষধ রিফামপিসিন এবং মৃগী বা খিচুনীর ঔষধ ব্যবহারের সময়।
ফেমিকন পিল খাওয়ার কত দিন পর সহবাস করা যায়
যেহেতু মাসিক হওয়া অবস্থায় সহবাস করা ইসলামের পরিপন্থী এবং মেডিকেল সাইন্সে নিষিদ্ধ তাই এই সময় সহবাস করা যাবে না। কিন্তু আপনার মাসিক শেষ হওয়ার পর থেকেই আপনি সহবাস করতে পারবেন।
ফেমিকন গ্রহণ করার কত দিন পর মাসিক হয়
আপনি কি ফেমিকন খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয় সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? অনেকেই আছেন যারা এখনো জানেন না ফেমিকন পিল খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয়। আজ আমি আপনাদের সুবিধার্থে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আশা করছি বিস্তারিত জেনে আপনি উপকৃত হবেন। বিশেষ করে যারা নতুন বিবাহিত দম্পতি তাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি অজানা।
আপনি যদি ফেমিকন পিল খেতে মনস্থির করেন তাহলে আপনার মাসিক শুরু না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যেদিন থেকে আপনার মাসিক শুরু হবে সেদিন থেকে মোটা তীর চিহ্নিত সাদা পিলটি দিয়ে খাওয়া শুরু করতে হবে।
এর পরের দিন থেকে যে সময় আপনি পিলটি খেয়েছেন ঠিক সেই সময় থেকেই পিল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যেমন রাতে শোয়ার আগে। প্রতিদিন ১ টি করে পিল খেতে হবে ২১ দিনে ২১ টি সাদা পিল খাওয়ার পরের দিন থেকে প্রতিদিন একটি করে বাদামি পিল খেতে হবে। বাদামি রং এর পিল খাওয়ার সময় সম্ভবত আপনার মাসিক হবে।
এর মধ্যে যদি আপনার মাসিক আরম্ভ হয়ে যায় তাহলেও পিল খাওয়া বন্ধ করবেন না। আপনি যদি বাদামি পিল নিয়মিত সাত দিন খান তাহলে আপনার শরীরের লৌহ স্বল্পতা পরিপূর্ণ হবে। এছাড়াও পিল খাওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম ঠিক থাকবে। এরপর যদি আপনার মাসিক শুরু না হয় তাহলে আপনি অন্তঃসত্ত্বা কিনা তা পরীক্ষা করতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন অথবা কাঠির সাহায্যে পরীক্ষা করুন।
এরপর সাতটি বাদামি পিল খাওয়া শেষ হওয়ার পরের দিন থেকেই উপরের নিয়ম অনুযায়ী নতুন একটি পাতার পিল খাওয়া শুরু করতে হবে। যতদিন না পর্যন্ত আপনি আরেকটি সন্তান নিতে চাচ্ছেন, ততদিন পর্যন্ত একই নিয়মে আপনাকে পিল খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে।
ফেমিকন পিল এর কার্যকারিতা কত ঘন্টা?
ফেমিকন এর কার্যকারিতা কত ঘন্টা সেই সম্পর্কে যদি বলতে হয়, তাহলে জানা প্রয়োজন ফেমিকন হল স্বল্প মাত্রার অস্থায়ী জন্ম বিরতিকরণ পিল। যেকোনো জন্ম নিয়ন্ত্রক পিল বা ফেমিকন পিল খাওয়ার নিয়ম হলো-মাসিকের প্রথম দিন থেকে শুরু করে পুরো পিল খেতে হবে।
একটানা পিল খাওয়ার মধ্যে যদি কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে সহবাস করে তাহলে গর্ভবতী হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। একটানা পিল খাওয়া অবস্থায় যেকোনো সময় আপনি সহবাস করতে পারেন। তবে পিল খাওয়া বাদ দেওয়া যাবে না।
আপনি যদি একটানা একমাস ফেমিকন পিল খেতে পারেন তাহলে মাসের যে কোন সময় যে কোন দিন শুধুমাত্র মাসিকের সময় বাদ দিয়ে সহবাস করতে পারবেন। এর কোন নির্দিষ্ট ঘন্টা বা সময় নেই। তবে একটি কথা মাথায় রাখবেন কোন মতেই যেন পিল খাওয়া বাদ না যায়। যদি কোন কারণবশত একদিন পিল খাওয়া বাদ পড়ে তাহলে পরের দিন যখন মনে পড়বে তখনই পিল খেতে হবে।
ফেমিকন পিল এর দাম কত
ফেমিকন পিল এর দাম আগে ৩৪ টাকা ছিল, কিন্তু বর্তমানে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জন্মবিরতিকরণ পিলের দামও বেড়েছে। এখন এক প্যাকেট ফেমিকন পিল এর দাম ৪০ টাকা।
ফেমিকন পিল কেন খায়
ফেমিকন পিল কেন খায় আপনি কি জানতে চান? ফেমিকন হল স্বল্পমাত্রার জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল। যা আপনাকে স্বল্পমাত্রার জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। আপনি যদি আপনার জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে চান তাহলে আপনি ফেমিকন পিলটি সেবন করতে পারেন।
ফেমিকন পিল সেবন করার ফলে আপনার গর্ভাশয় থেকে ডিম্বাণু নিষিক্ত হতে পারেনা মিলনের পরেও। তবে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে শুধুমাত্র নিয়মিত সেবনেই আপনি গর্ভধারণ রোধ করতে পারবেন। প্রথম মাসিকের,প্রথম দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী মাসিক না হওয়া পর্যন্ত ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে।
ফেমিকন পিল খেলে কি মোটা হয়ে যায়?
অনেক নারীই মনে করেন ফেমিকন পিল খেলে মোটা হয়ে যায়। কিন্তু কোনো গবেষণায় এটি প্রমান হয়নি।
চিকিৎসকরা বলেছেন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি বা ফেমিকন পিল খেলে মেয়েরা মোটা হয়ে যায় এটি সঠিক নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওজন বাড়ে। তবে সেটা শরীরে জলীয় পদার্থ জমে যাওয়ার কারণে বাড়ে। আর পিল খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় এই জলীয় পদার্থ জমে যায়। যা আবার কয়েক মাসের মধ্যে চলেও যায়।
অধ্যাপক কিশোয়ার লায়লা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “আগে ফেমিকন পিল খেলে মোটা হতো এমন ধারণা ছিল। কিন্তু সেটা সঠিক ছিল না। আবার এখন আধুনিক যেসব পিল পাওয়া যায় সেসব খেলে মোটা হয় এটাও ঠিক না। অর্থাৎ পিলের জন্য মোটা হয় এ তথ্য সঠিক নয়।”
চিকিৎসক অধ্যাপক রেজাউল করিম কাজল বলেছেন, শুরুর দিকের পিলগুলোতে যে হরমোন ব্যবহার করা হতো, তাতে ক্ষুধা বাড়তো, শরীরে কিছুটা পানিও জমাতো- তাই ওজন বাড়তো।
“তবে বর্তমানে ব্যবহৃত পিলগুলি তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের। চতুর্থ প্রজন্মের পিলগুলিতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া প্রায় নেই বললেই চলে।”
বরং এগুলো রক্তের কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মাসিক নিয়মিতকরণসহ নারীদের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় মুখে খাওয়ার পিল ব্যবহার করা হয়।
আরও জানুন: নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ
মুড সুইং
যে নারীরা ফেমিকন বা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খান অনেক সময়ই তাদের আচরণ পাশে থাকা মানুষেরা বুঝতে পারেন না। কখন তারা খুশি আর কখন বিষাদ গ্রাস করেছে তাদের- তা অনুমান করা কঠিন।
চিকিৎসকেরা বলছেন, মস্তিষ্কের ওপরেও জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির প্রভাব রয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে ‘রেডিওলজি সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকা’র ১০৫তম বার্ষিক সম্মেলনে এই বিষয় নিয়ে একটি গবেষণা উপস্থাপন করা হয়।
তাতে গবেষকরা দেখান, যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেয়েছিলেন তাদের মস্তিষ্কের ‘হাইপোথ্যালামাস’ এর ঘনত্ব আর যারা ওষুধ সেবন করছিলেন না তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।
‘হাইপোথ্যালামাস’ হচ্ছে যৌনক্ষমতা, ঘুমের চক্র, মেজাজ নিয়ন্ত্রণ, খাওয়ার রুচি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রবিন্দু ।
চিকিৎসকরাও জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনের ফলে নারীদের মুড সুইং হওয়ার প্রবণতা উল্লেখ করছেন।
অধ্যাপক কিশোয়ার লায়লা বলেছেন, “বর্তমানে যে জেনারেশনের (ধরনের) স্বল্পমাত্রার পিল বাজারে পাওয়া যায়, তাতে মুড সুইং এখন কম হয়।
ফেমিকন পিল খাওয়া বন্ধ করলে হতে পারে যেসব সমস্যা
গর্ভধারণ থেকে নিরাপদে থাকতে জন্মনিয়ন্ত্রক হিসেবে ফেমিকন পিল অনেক নারী নিরাপদ পদ্ধতি মনে করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, ডাক্তারের পরামর্শে মহিলারা পিল গ্রহণ করেন, কিন্তু পিল খাওয়া বন্ধ করে দিলে বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। এতে অনেক নারী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং কী করবেন বুঝে উঠতে পারেন না। যদি সমস্যা বেশি হয় এবং আপনার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, তবে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। ফেমিকন পিল খাওয়া বন্ধ করলে হতে পারে যেসব সমস্যা –
অতিরিক্ত পিরিয়ড ও ব্যথা
অনেক নারী ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফেমিকন খেয়ে থাকেন আবার পিল খাওয়া ছেড়ে দেন। হঠাৎ পিল খাওয়া ছেড়ে দিলে অতিরিক্ত পিরিয়ড হওয়াসহ তলপেটে ব্যথা হতে পারে।
ওজন পরিবর্তন
হঠাৎ ফেমিকন পিল খাওয়া ছেড়ে দিলে অনেক নারী আছেন যাদের ওজন কমতে পারে, অনেকে বাড়তেও পারে আবার একই রকম থাকতে পারে। পিল গ্রহণের সময় বিভিন্ন কারণে ওজন বাড়তে পারে। অন্যতম কারণ হলো খাদ্যাভ্যাস বা শরীরে পানি ধারণ করা অথবা বাড়ন্ত বয়সে পিল খাওয়া শুরু করা। তবে পিল খাওয়া ছেড়ে দিলে ওজন কমার কারণ হচ্ছে পানি। শরীরে পানি ধারণের পরিমাণ কমে যায় বলে মনে হয় ওজন কমে যায়।
স্তনের আকার হ্রাস
ফেমিকন পিল খাওয়ার সময় অনেক নারীদের স্তনের আকার বড় হয়ে যেতে পারে।আবার পিল খাওয়া ছেড়ে দিলে স্তন আবার আগের আকারে ফিরে যেতে পারে। তবে প্রক্রিয়াটা খুব কম নারীদের ক্ষেত্রেই হয়।
হতে পারে ফুসকুড়ি
ফেমিকন পিল খাওয়া শুরু করার পর অনেকের ফুসকুড়ি বা ব্রন হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে পিল বন্ধ করে দিলে আবার সেগুলো ফিরে আসতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়া
ফেমিকন পিল খাওয়া বন্ধ করলে দ্রুত গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে। যদি অন্য কোনো নিরধক ব্যবহার করা না হয়।
জন্মনিরোধক পিল সম্পর্কে আরও জানুন
ফেমিকন পিল খাওয়ার কত দিন পর সহবাস করা যায়
যেহেতু মাসিক হওয়া অবস্থায় সহবাস করা ইসলামের পরিপন্থী এবং মেডিকেল সাইন্সে নিষিদ্ধ তাই এই সময় সহবাস করা যাবে না। কিন্তু আপনার মাসিক শেষ হওয়ার পর থেকেই আপনি সহবাস করতে পারবেন।
ফেমিকন এর দাম কত?
ফেমিকন পিল এর দাম আগে ৩৪ টাকা ছিল, কিন্তু বর্তমানে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জন্মবিরতিকরণ পিলের দামও বেড়েছে। এখন এক প্যাকেট ফেমিকন পিল এর দাম ৪০ টাকা।
ফেমিকন পিল খেলে কি হয়?
ফেমিকন পিল খেলে সাময়িক সময়ের জন্যে জন্মবিরতিকরণ কিংবা গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকা যায়, আরো সহজ করে বললে ফেমিকন খেলে বাচ্চা হয় না। তবে ফেমিকন পিল খাওয়ার রয়েছে কিছু নিয়ম, যেগুলা অবশ্যই মানতে হবে, অন্যথায় বাচ্চা হওয়া থেকে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ফেমিকন পিল খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয়?
ফেমিকন পিল খাওয়ার সাধারণ নিয়ম হচ্ছে যেদিন থেকে মাসিক শুরু হয় সেদিন থেকে পিল খাওয়া শুরু করা, উপরের নিয়ম অনুযায়ী পিল চালিয়ে গেলে বাদামী বর্ণের পিল খাওয়া অবস্থায় মাসিক শুরু হবে, অর্থ্যাৎ ফেমিকন পিল খাওয়ার ২১-২৮ দিনের মধ্যে মাসিক হবে।