শিশু যদি গর্ভাবস্থার ৩৭তম সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পরে জন্মায়, তাহলে আমরা সাধারণত নরমাল ডেলিভারি হয়েছে বলি। এই সময়ের আগে ডেলিভারি হলে তাকে অকাল প্রসব বা প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি ধরা হয়। সচরাচর গর্ভকালীন ৩৭তম–৪২তম সপ্তাহের মধ্যে নরমাল ডেলিভারি হলে তা মা ও গর্ভের শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বিবেচনা করা হয়। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় ও জীবনধারায় সহজ কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে গর্ভাবস্থার জটিলতা কাটিয়ে নরমাল ডেলিভারি হওয়া সম্ভব।
Table of Contents
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়
নিয়মিত ব্যায়াম করা
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে যারা গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করেন তাদের নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বেড়ে যায়, সিজার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সাহায্যে ডেলিভারির প্রয়োজন কম হয়।সেই সাথে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় জানা থাকলে সময়ের আগে সন্তান প্রসব হওয়া ও কম ওজনের শিশু জন্মদানের ঘটনাও কমে আসে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বাড়া প্রতিরোধ করে। অতিরিক্ত ওজন বাড়লে গর্ভের শিশু আকারে বেশি বড় হওয়ার এবং সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ব্যায়াম নরমাল ডেলিভারি উপায় হিসেবে গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, প্রিক্ল্যাম্পসিয়া এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। এই জটিলতাগুলি সিজারিয়ান সেকশনের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দিতে পারে।নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় জানা থাকলে এবং সেই অনুযায়ী গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করলে আরও কিছু উপকারিতা পাওয়া যায়। যেমন—
- কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ফাঁপা কমানো
- পেশি শক্তিশালী করে তোলার মাধ্যমে কোমর ব্যথাসহ গর্ভকালীন বিভিন্ন ধরনের ব্যথা কমানো
- মন-মেজাজ ফুরফুরে রাখা
- শরীরের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়া
- ভালোমতো ঘুমাতে সাহায্য করা
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে গর্ভবতী নারীদের জন্য সপ্তাহে ২.৫ ঘণ্টা মাঝারি তীব্রতার ‘অ্যারোবিক’ শরীরচর্চাকে আদর্শ ধরা হয়। যেমন: সাঁতার কাটা, দ্রুত হাঁটা, বাগান করা, নাচ ও সাইকেল চালানো।গর্ভাবস্থায় নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে আপনার পছন্দমতো এমন যেকোনো ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন। এ ছাড়া আগে থেকে ভারী ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেটাও চালিয়ে যেতে পারেন।
আপনার গর্ভধারণের আগে থেকে ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে গর্ভাবস্থায় নিশ্চিন্তে ব্যায়াম করা শুরু করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে শুরু করে সময়ের সাথে আপনার সহনশীলতা বাড়াতে হবে।
সহজ কিছু কাজ প্রতিদিনের রুটিনে যোগ করতে পারেন নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে। যেমন, লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি বেছে নিন,বাজারে কিংবা দোকানে গেলে একটু বেশি ঘুরে হেঁটে যাওয়ার রাস্তাটি বেছে নিতে পারেন। মূল কথা হলো, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় জেনে ব্যায়ামের সব ধরনের উপকার পেতে প্রতিদিন একটু একটু করে শরীরচর্চার পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করুন ।
গর্ভাবস্থায় ঠিক কোন ধরনের এক্সারসাইজগুলো আপনার জন্য নিরাপদ হবে তা আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নির্ধারণ করে নিতে পারলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে ব্যয়াম জরুরি কিন্তু গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার সময়ে স্বাভাবিক সহ্যক্ষমতার বাইরে ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার কোনো গর্ভকালীন জটিলতা থাকলে ব্যায়াম করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতামত মেনে চলুন।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে শুধু ব্যয়ামই নয় সাথে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াও অত্যাধিক জরুরি।
গর্ভধারণ করলেই যে আপনাকে দুইজনের পরিমাণে খাবার খেতে হবে— বিষয়টি এমন নয়। স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে অস্বাস্থ্যকর, তেল-চর্বিযুক্ত ও অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া যতটা সম্ভব বাদ দিয়ে দিন। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে আপনার জন্য সঠিক পরিমাণে সুষম খাবার খান। পর্যাপ্ত শাকসবজি ও ফলমূল খান, প্রচুর পানি পান করুন।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে সাধারণত বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। তবে এর পরের মাসগুলোতে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে আপনাকে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি খাবার খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় আপনি কতটুকু অতিরিক্ত খাবার খাবেন, সেটি খাবারে থাকা ক্যালরির সাহায্যে হিসাব করা যায়।
একজন স্বাভাবিক ওজনের গর্ভবতীর প্রথম ত্রৈমাসিকের চেয়ে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে প্রতিদিন প্রায় ৩৪০ ক্যালরি পরিমাণ অতিরিক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে, একজন স্বাভাবিক ওজনের গর্ভবতীকে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত প্রায় ৪৫০ ক্যালরির খাবার খেতে হবে।
তবে ওজন কম বা বেশি হলে একটু বেশি খাওয়া উচিত। আপনি যদি যমজ সন্তানের সাথে গর্ভবতী হন তবে গণনা কিছুটা আলাদা হবে।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় জেনে প্রয়োজন মাফিক পুষ্টিকর খাবার খেলে আপনার গর্ভকালীন বাড়তি ওজন স্বাভাবিক সীমার মধ্যে থাকবে। গর্ভকালীন চেকআপের সময়ে আপনি কী ধরনের খাবার খাচ্ছেন সে বিষয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন ও নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কে পরামর্শ গ্রহণ করুন।
নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপে যাওয়া
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেকআপে গিয়েছেন এমন নারীদের তুলনায় যারা চেকআপে অনিয়মিত ছিলেন তাদের গর্ভকালীন ও প্রসব সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এসব জটিলতা সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারিসহ প্রসবের সময়ে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপে গেলে গর্ভবতী ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে নানান গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে সেই সাথে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় বৃদ্ধি পায়। ফলে এসব জটিলতা আগেভাগে ধরে ফেলে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়। এভাবে নিয়মিত চেকআপ নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
এ ছাড়া নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে নিয়মিত চেক-আপের কারণে গর্ভধারণ ও প্রসবকালীন জটিলতার কারণে মা ও শিশুমৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। 1990 সালে, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল প্রতি লক্ষে 581, তবে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় জানা থাকায় 2017 সালে তা 173-এ নেমে আসে। শিশুমৃত্যুর হারও আগের সময়ের তুলনায় দ্রুত কমেছে। যদিও 1990 সালে, প্রতি হাজারে 65 জন নবজাতকের মৃত্যু হয়েছিল, 2020 সালে এই সংখ্যা 17-এ নেমে এসেছে। নিয়মিত প্রসবপূর্ব পরীক্ষাগুলি মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
গর্ভধারণের পরে যত দ্রুত সম্ভব গর্ভকালীন চেকআপ শুরু করা প্রয়োজন। যেকোনো অবস্থাতেই ১২তম সপ্তাহের আগে আপনার প্রথম চেকআপ করিয়ে ফেলতে হবে। তাই আপনি যে গর্ভবতী সেটি জানার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
ডাক্তার আপনার ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থার ভিত্তিতে আপনার জন্য ব্যক্তিগত একটি পরিকল্পনা তৈরি করে দিতে পারেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গর্ভকালীন সময়ে আপনার চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়া কেমন হবে সেই বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।
এ ছাড়া আপনার ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হবে। গর্ভাবস্থা শেষে একজন সুস্থ মা ও সুস্থ শিশুর ডেলিভারির জন্য এসব তথ্য যত দ্রুত জানা যায়, ততই ভালো।
সঠিক মাত্রায় ওজন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা
মা ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গর্ভাবস্থায় সঠিক মাত্রায় ওজন বৃদ্ধি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ওজন বৃদ্ধির হার কম কিংবা বেশি হলে সেটি মা ও গর্ভের শিশুর জন্য বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
এসব জটিলতার কারণে সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি ও শিশুর জন্মের পরে বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যেতে পারে। এমনকি শিশুর জন্মের বহু বছর পরেও এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কতটুকু ওজন বাড়লে তা মা ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে, সেই হিসাবটা একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম। এসময়ে খুব দ্রুত ওজন না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে বাড়ানোর লক্ষ্য রাখা উচিত। গর্ভধারণের ১৩তম সপ্তাহের পর থেকে ধীরে ধীরে এবং নির্দিষ্ট হারে আপনার ওজন বাড়তে থাকলে তা আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো হয়।
আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম থেকেই নিয়মিত নিজেকে ওজন করুন। এইভাবে, আপনি সহজেই দেখতে পারবেন আপনার ওজন কত দ্রুত বাড়ছে। আপনি যদি প্রতি সপ্তাহে নিজেকে ওজন করেন তবে আপনি সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিন এবং সময় বেছে নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি প্রতি শুক্রবার সকালে প্রস্রাব করার পরে খালি পেটে ওজন পরিমাপ করতে পারেন।
আপনার ওজন ঠিকঠাক মতো বাড়ছে কি না সেই বিষয়ে গর্ভকালীন চেকআপের সময়ে ডাক্তারের মতামত নিন। ওজন বৃদ্ধিতে কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে খাবার তালিকা ও ব্যায়াম নিয়ে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে আপনার জন্য একটি সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করে নিন।
মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকা
গর্ভাবস্থায় আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে যায়। এর মধ্যে যতটা সম্ভব মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করবেন। এই কাজটা সবসময় সহজ হয় না। অনেক বেশি চাপের মধ্যে থাকলে তা আপনার ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর প্রভাব ফেলতে পারে।
এসময়ে মানসিক অবস্থা নিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে খোলাখুলিভাবে কথা বলুন। আপনজনদের সাথে চাপ ভাগাভাগি করে নিলে তা মোকাবেলা করা সহজ হতে পারে। সেই সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ইয়োগা বা যোগব্যায়াম, শ্বাসের ব্যায়াম করুন। ডায়েরি লিখতে পারেন, পছন্দের গান শুনতে পারেন। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে তা কেবল আপনার গর্ভাবস্থায় নয়, বরং ডেলিভারির সময়েও সাহায্য করতে পারে।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য স্বাস্থ্য পরামর্শ
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য গর্ভকালীন বিশেষ স্বাস্থ্য পরামর্শ মেনে চলা উচিত। এসব পরামর্শের মধ্যে রয়েছে—
- গর্ভধারণের পরিকল্পনা শুরু করার পর থেকে নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড খাওয়া
- কাজের জায়গায় একটানা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকা এবং ভারী জিনিস বহন করা এড়িয়ে চলা
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া
- রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করা
- গর্ভাবস্থার সতর্কীকরণ লক্ষণগুলি জানুন এবং তা দেখা দিলে অবিলম্বে হাসপাতালে যান।
- অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলা। গর্ভকালীন সময়ে দৈনিক ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন জাতীয় খাবার অথবা পানীয় খাওয়া এড়িয়ে চলবেন। সাধারণত ২ কাপ কফি কিংবা ২–৩ কাপ চায়েই এই পরিমাণ ক্যাফেইন থাকতে পারে।
- ধূমপান ও মদপান বাদ দেওয়া
- কেগেল এক্সারসাইজ করা
আমাদের পায়ের মধ্যে একটি পেশী ঝিল্লি আছে। একে পেলভিক ফ্লোর বলে। এটি জরায়ু, মূত্রাশয় সঠিক অবস্থানে বজায় রাখতে সাহায্য করে। বাড়ন্ত জরায়ুকে সাপোর্ট দেয় গর্ভাবস্থায়।
প্রসবের সময়ও এই পেশিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো কারণে পেলভিক ফ্লোরের পেশি দুর্বল হয়ে গেলে হাঁচি, কাশি অথবা চাপ দিয়ে মলত্যাগ করার সময় কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব বেরিয়ে আসার সমস্যাসহ নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। নরমাল ডেলিভারির পরে অনেকেরই এই সমস্যা দেখা দেয়। আগে থেকে নিয়মিত পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম করলে তা এই ধরনের সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে।
পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম অনেকের কাছে ‘কেগেল এক্সারসাইজ’ বা ‘পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ’ নামে পরিচিত। এই ব্যায়ামটি দাঁড়িয়ে, বসে অথবা শুয়ে, যেকোনো ভাবেই করা যায়।
পেরিনিয়াল ম্যাসাজ
ব্যথার কারণে অনেকেই নরমাল ডেলিভারি করাতে ভয় পান। কেউ কেউ নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা শুরু করলেও পরে স্বেচ্ছায় সিজার করানোর সিদ্ধান্ত নেন। এটি প্রতিরোধে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ‘পেরিনিয়াল ম্যাসাজ’ করাতে পারেন।
এতে যোনিপথের ২–৩ সেন্টিমিটার ভেতরে আঙুল ঢুকিয়ে যোনি ও পায়ুর মাঝামাঝি পেশিতে নির্দিষ্ট নিয়মে ম্যাসাজ করা হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এই ম্যাসাজ ডেলিভারি জনিত যোনিপথের ব্যথা, এপিসিওটোমি ও যোনিপথে সেলাইয়ের প্রয়োজনীয়তা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার খাবার
নরমাল ডেলিভারি অর্থ হচ্ছে এটি একটি স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। সাধারণত মানুষ মাসিকের রাস্তা দিয়ে সন্তান প্রসব করাকে চিকিৎসকের পরিভাষায় নরমাল ডেলিভারি বলা হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। মানুষ অল্পতেই সিজার করে তাদের সন্তান বের করে নিচ্ছে। কিন্তু নরমাল ডেলিভারি হওয়ার খাবার রয়েছে অবশ্যই সে খাবারগুলো ডেলিভারি হওয়ার আগে থেকেই খাওয়া উচিত।
একজন মা যদি তার সন্তানকে নরমাল পদ্ধতিতে পৃথিবীতে আনতে চায় তাহলে অবশ্যই কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে? এই বিষয়গুলো বুঝতে হবে। যদিও নরমাল ডেলিভারিতে অনেক কষ্ট হয়, তবে তা মায়ের ভবিষ্যতের জন্য সহজ এবং ভালো। প্রাকৃতিক জন্মের জন্য পুষ্টি সম্পর্কে জানুন।
১। খেজুর খেতে হবে – আমরা জানি যে খেজুরের মধ্যে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রাচীনকালে মানুষ খেজুর খেয়ে শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা নিয়ে আসতো। যে সকল গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত খেজুর খায় সাধারণত তাদের প্রসবকালে কষ্ট অন্যদের তুলনায় একটু কম হয়ে থাকে।মহিলারা যদি সন্তান প্রসবের এক মাস আগে নিয়মিত পাঁচ থেকে ছয়টি খেজুর খান তাহলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই, আপনি যদি স্বাভাবিক প্রসব করতে চান, তাহলে নিয়মিত খেজুর খাওয়া শুরু করুন।
২। দই খাওয়া যায় – প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার আমাদের শরীরকে ভিটামিন জোগাতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের জন্য ভিটামিন কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যা প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার পূরণ করে থাকে। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের জন্য এ ধরনের খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নরমাল ডেলিভারি হওয়াতে চাইলে ডেলিভারির আগে নিয়মিত দই জাতীয় খাবার খান।
৩। অতিরিক্ত পরিমাণে পানি – আমরা জানি যে আমাদের শরীরে পানি ছাড়া কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি আপনার বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে চান এবং নরমাল ডেলিভারিতে আপনার বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনতে চান তাহলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে প্রতিনিয়ত।
৪। মিষ্টি আলু খেতে পারেন – মিষ্টি আলুর মধ্যে পুষ্টি উপাদানের ভরপুর রয়েছে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য যে সকল পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন সেগুলো এখানে পাওয়া যায়। জন্ম দেওয়ার আগে মিষ্টি আলু খাওয়া শুরু করুন। এটি একটি শিশুর নরমাল ডেলিভারি হওয়াতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৫। বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার – আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমরা ইতিমধ্যেই তা জানি। যদি গর্ভবতী মাকে বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার খাওয়ানো যায় তাহলে এটি তার শরীরের জন্য আরো উপকারী। বাদামের বীজ, সূর্যমুখীর বীজ তিল, কুমড়োর বীজ সহ বিভিন্ন ধরনের বীজে রয়েছে উপাদান। যা গর্ভবতী মায়ের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
৬। কলা খেতে পারেন – গর্ভবতী মায়ের শরীরের গ্লুকোজ এর চাহিদা মেটাতে কলা কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কলায় যে শুধু উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম থাকে তা নয় এতে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি। গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারিতে বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
৭। লিভার খেতে পারেন – গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রাণিজ প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহিলাদের শরীরের জননতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে লিভার। তাই গর্ভাবস্থায় নারীদের লিভার খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময় ব্যথা কমাতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে লিভারে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো।
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে পেট ব্যথা হওয়ার কারণ
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ
প্রসব ব্যথা শুরু হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু লক্ষণ দেখা যায। এগুলো ‘প্রি-লেবার লক্ষণ’ হিসেবেও পরিচিত। এই লক্ষণগুলো প্রসব ব্যথা শুরু হওয়ার কয়েক মাস থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টা আগেও দেখা যেতে পারে।
- বাচ্চা নিচের দিকে নামতে থাকে: আপনি যখন প্রথম মা হন, তখন প্রসব শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে (সাধারণত প্রায় 2-4 সপ্তাহ) শিশুটি নিচে বা আপনার পেলভিসের দিকে নামতে শুরু করবে। প্রথমবার বাচ্চা হওয়ার সময় সব মায়েদের এমন হয়। আপনার শিশু পেট থেকে বের হওয়ার জন্য তার মাথা নিচের দিকে রেখে নিজের অবস্থান ঠিক করে রাখবে। তবে পরবর্তী বাচ্চা জন্মানোর সময় এমনটা নাও হতে পারে। এই অবস্থায় আর আগের মতো সহজভাবে হাঁটা যায় না, ছোট ছোট পা ফেলে হেলে দুলে হাঁটতে হয়। এসময় আপনি আগের থেকে বেশি প্রস্রাবের চাপ অনুভব করবেন কারণ আপনার শিশু মূত্রাশয়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকবে। শিশুর শরীর নিচের দিকে নেমে আসায় ফুসফুস তার আগের জায়গা কিছুটা হলেও ফিরে পায় তাই মায়েদের শ্বাস নিতে কিছুটা সুবিধা হয়।
- সারভিক্সের (Cervix) মুখ বড় হতে থাকে: আপনার সারভিক্সও শিশু জন্মানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়। সারভিক্স হলো শিশুর জন্ম নেয়ার পথ। আপনার প্রসবের আগের দিন বা আগের সপ্তাহগুলোতে এর মুখ খুলতে থাকবে এবং পাতলা হতে শুরু করে। আপনার গর্ভাবস্থার শেষের দিকে চেকআপের সময় ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখবেন যে সারভিক্সের মুখ কতটা খুলেছে এবং কতটা পাতলা হয়েছে। তবে সবার ক্ষেত্রে এটি একরকম হয় না, একেকজনের প্রসব একেকরকম হয়। আপনার ক্ষেত্রে যদি সারভিক্সের মুখ ধীরে ধীরে খোলে বা এখনও না খোলে তবে নিরুৎসাহিত হবেন না।
- পেশিতে টান লাগা (ক্র্যাম্প) ও পিঠে ব্যথা বেড়ে যাওয়া: প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আপনার পিঠের নিচের অংশে এবং পশ্চাৎদেশের হাড়ে ব্যথা করবে। বিশেষ করে এটি যদি আপনার প্রথম প্রেগন্যান্সি না হয় তবে এই ব্যথা আরও বেশি অনুভব হবে। আপনার পেশী এবং জয়েন্টগুলো প্রসারিত হবে এবং শিশু জন্ম দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেবে।
- হাড়ের জয়েন্ট শিথিল হয়ে যাওয়া: গর্ভাবস্থার শুরুর সময় থেকে মেয়েদের শরীরের রিলাক্সিন (Relaxin) হরমোনের ক্ষরণ শুরু হয়। এই হরমোন হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্টগুলোকে একটু শিথিল করে দেয়। প্রসব ব্যথা শুরু হওয়ার আগে এই হরমোনের ক্ষরণের ফলে আপনি টের পাবেন যে শরীরের জয়েন্টগুলো অনেক বেশি শিথিল হয়ে পড়েছে এবং কম দৃঢ় মনে হচ্ছে। এমন অনুভূতি হলে আপনার শিশুর মুখ দেখার মুহূর্ত কিন্তু আর বেশি দূরে নেই। এইভাবে, আপনার পেলভিসের মুখ খুলে যাবে, আপনার শিশুর জন্মের জন্য জায়গা তৈরি করবে।
- ডায়রিয়া: শিশুর জন্মের প্রস্তুতির জন্য জরায়ুর পেশী যেমন শিথিল হয়, তেমনি শরীরের অন্যান্য পেশীও শিথিল হয়। এটি মলদ্বারের পেশীগুলিও অন্তর্ভুক্ত করে। মলদ্বারের পেশীর শিথিলতা প্রাথমিক প্রসবের ডায়রিয়া হতে পারে।এটা বিরক্তিকর হলেও স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। এ সময়ে পর্যাপ্ত পানি খাবেন যেন পানিশূন্যতা না হয়। এটি প্রসব হওয়ার খুব ভালো একটা লক্ষণ।
- ওজন বৃদ্ধি বন্ধ হওয়া: গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের ওজন বৃদ্ধি একবারে শেষ সময়ে গিয়ে বন্ধ হয়। অনেক মায়ের ওজন কিছুটা কমেও যেতে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক। এটি বাচ্চার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। আপনার ওজন কমে গেলেও শিশুর ওজন কমে যাচ্ছে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং শিশু তার মতোই বেড়ে ওঠে। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে, মায়ের অ্যামনিওটিক তরল হ্রাস, টয়লেটে ঘন ঘন যাওয়া, বা দীর্ঘায়িত কাজ বা শারীরিক কার্যকলাপের কারণে ওজন হ্রাস হতে পারে।
- ক্লান্ত বোধ করা বা শিশুর আগমনের জন্য অপেক্ষা করা (নেস্টিং প্রবৃত্তি): গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে, আপনি সম্পূর্ণরূপে অলসতা বা ক্লান্তিতে পরিবেষ্টিত হবেন এবং শেষের দিকে, এই অলসতা এবং ক্লান্তি আবার ফিরে আসবে। গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি প্রধানত হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হয়, তবে আরও অনেক কারণ রয়েছে, যেমন: বড় পেটের কারণে নড়াচড়া করতে অসুবিধা।তার ওপর মূত্রাশয়ের ওপর চাপ পড়ার কারণে আপনার বারবার প্রস্রাব করতে উঠতে হবে যার কারণে আপনার হয়তো তেমন ভালো ঘুম হয় না। আর রাতের বেলা ঘুম ভালো না হলে আপনার সারাটা দিন ক্লান্ত লাগবে, এটা খুবই স্বাভাবিক।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার দোয়া
প্রত্যেক গর্ভবতী নারীরই প্রত্যাশা থাকে যে তার ডেলিভারি নরমাল হোক। এই অবস্থায় বিশেষভাবে যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো দোয়া কবুলের সময়গুলোতে আল্লাহ তাআলার কাছে সহজ ডেলিভারির জন্য দোয়া করা। অবশ্য আল্লাহ তায়ালা সব সময় দোয়া কবুল করেন। তবে হাদীসে এমন কিছু বিশেষ সময়ের কথা উল্লেখ রয়েছে, যখন দোয়া করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। উদাহরণ – শেষ রাতের দোয়া, সেজদার সময়, আযান ও ইকামার মধ্যবর্তী সময়, ফরয নামাযের পরে, সন্ধ্যার নামাযের পরে, বৃষ্টির সময়, ইফতারের সময়, শক্তির রাত, হজ্জের সময়, নিম্নলিখিতগুলি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি (দ্রষ্টব্য- মুসলিম: ৭৫৮, ৪৮২, ১৪০৭; তিরমিজি: ২১২, ৩৪৯৮; বুখারি: ৬৪০০; সুনানে আবু দাউদ: ১৩৭২; সহিহুল জামি: ৩০৭৮; মুসনাদে আবি ইয়ালা: ২০৯০)
সুতরাং দোয়া কবুলের এই সময়গুলোতে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। তাছাড়া ডেলিভারির সময় যত ঘনিয়ে আসবে তত বেশি দরুদ, ইস্তেগফার ও দোয়া ইউনুস পড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আলেমরা। সেইসঙ্গে দান-সদকা করার কথাও বলেন। এতে করে আল্লাহ তাআলা বান্দার যেকোনো মসিবত, দুশ্চিন্তা ও দুঃখ-কষ্ট লাঘব করে দেন এবং কঠিন পরিস্থিতিতে উত্তরণের পথ দেখিয়ে দেন। (দেখুন- তিরমিজি: ২/৭২; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৬৭৭; সুরা আম্বিয়া: ৮৮)
এছাড়াও পবিত্র কোরআনের সুরা রাদের ৮নং আয়াত, সুরা ফাতির ১১ নং আয়াত, সুরা নাহাল ৮৭নং আয়াত এবং সুরা যিলযাল পড়ে গর্ভবতী মহিলাকে ফুঁ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেক আলেম। শায়খ ইবনু উসাইমিন (রহ) বলেন, ‘গর্ভবতীর সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে কষ্টের সময় উল্লেখিত আয়াতগুলো পড়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা অনেককে উপকার দান করেছেন।
সুতরাং একজন মহিলা আয়াতগুলো পড়ে সন্তান প্রসবকারীর উপর ফুঁ দেবে অথবা যে কোনো লোক তা পাঠ করে পানিতে ফুঁ দেবে। তারপর সেই পানি গর্ভবতীকে পান করাবে এবং তা দিয়ে তার পেট মালিশ করবে।’ এই ধরণের আমলে শরিয়তের কোনো বাধা নেই।
এছাড়াও কোনো কোনো আলেম বলে থাকেন, আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম (اَلْمُبْدِئُ) ‘আল-মুবদিয়ু’ (অর্থ: প্রথমবার সৃষ্টিকারী) জিকিরের মাধ্যমে গর্ভের সন্তানের হেফাজত এবং সহজে-নিরাপদে সন্তান প্রসব হয়। সুতরাং এই আমলটিও করতে পারেন।
নরমাল ডেলিভারির সুবিধা
নরমাল ডেলিভারি এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। একের জন্য, এটি অন্যান্য ধরণের প্রসবের পদ্ধতির তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রায়ই মায়ের শরীরে মৃদু। এটি অস্ত্রোপচারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা এবং শ্রম এবং প্রসবের সাথে সম্পর্কিত যেকোন সম্ভাব্য জটিলতাকেও হ্রাস করে। এটি মায়ের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত হাসপাতালে থাকারও নিশ্চিত করে। মায়ের শরীর স্বাভাবিকভাবেই সময়ের সাথে সাথে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং দ্রুত আরোগ্য লাভ করে। জরুরী প্রসবের তুলনায় স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের ঝুঁকি কম থাকে, যা গর্ভাবস্থায় বা শিশুর সমস্যা হলে প্রায়শই করা হয়। যাইহোক, স্বাভাবিক ডেলিভারি কিছু ঝুঁকি বহন করে, যেমন যোনি বা পেরিনিয়ামে ছিঁড়ে যাওয়া বা ফেটে যাওয়া, যা সংক্রমণের কারণ হতে পারে। আরেকটি সুবিধা যা স্বাভাবিক প্রসবের সুবিধা নয় কিন্তু এটির এক্সটেনশন হিসেবে সাহায্য করেমায়ের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানোর সুবিধা। স্বাভাবিক প্রসবের পর, মহিলারা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং কোনো বাহ্যিক ওষুধ পান না। অতএব, তারা বিনা দ্বিধায় বুকের দুধ খাওয়াতে পারে।
নরমাল ডেলিভারি এর সাথে জড়িত ঝুঁকি
এটি একটি কম ঝুঁকি বহন করে, তবে এটি বিদ্যমান এবং মা ও শিশু উভয়ের জন্যই গুরুতর হতে পারে। যেসব মহিলার পূর্বে সি-সেকশন হয়েছে বা যাদের অন্যান্য মেডিক্যাল অবস্থা রয়েছে তাদের ঝুঁকি বেশি। একটি স্বাভাবিক যোনি প্রসবের ঝুঁকি নিম্নরূপ:
- জরায়ু থেকে মূত্রাশয় পর্যন্ত প্রসারিত স্নায়ু ক্ষতি
- পেলভিক ফ্লোরের কর্মহীনতা
- জরায়ুমুখে অশ্রু
- মূত্রনালীর সংক্রমণ
- রক্তক্ষরণ
- প্রসবের বিষণ্নতা
- প্রিক্ল্যাম্পসিয়া
- একটি সময় ঘelivery, প্ল্যাসেন্টা শিশুর জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে না কারণ এটি আপনার সার্ভিক্স এবং জরায়ু দিয়ে যেতে পারে না।
ডাক্তারের সাক্ষাৎ
নিচের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি—
- যোনিপথে ব্যথা না কমা কিংবা একটানা ব্যথা
- ডেলিভারির প্রথম কয়েকদিনের পরেও ভারী রক্তস্রাব
- দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব
- জ্বর
- শরীর কাঁপুনি
- তীব্র পেট ব্যথা
- পায়ে ব্যথা হওয়া অথবা ফুলে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট অথবা কাশি
- খিঁচুনি অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- প্রস্রাব ছুটে যাওয়া
- প্রস্রাবের সময়ে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হওয়া
এগুলি সংক্রমণ, একলাম্পসিয়া বা রক্ত জমাট বাঁধার মতো জটিলতার লক্ষণ হতে পারে। তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিত্সা করা উচিত। যদি এই জটিলতাগুলি অবিলম্বে চিকিত্সা না করা হয় তবে এগুলি মারাত্মক হতে পারে।
নরমাল ডেলিভারি সম্পর্কে আরো জানুন
নরমাল ডেলিভারির জন্য বাচ্চার ওজন কত হওয়া প্রয়োজন?
শিশু আকারে বড় হলে নরমাল ডেলিভারি করা কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণত জন্মের সময়ে একটি সুস্থ বাচ্চার ওজন ২.৫ থেকে ৪ কেজির মধ্যে হয়ে থাকে। মায়ের প্রসবের রাস্তা যথেষ্ট প্রশস্ত হলে এবং কোনো জটিলতা না থাকলে নরমাল ডেলিভারি করা যায়।
কত বয়স পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারি সম্ভব?
এর উত্তর নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ এটি একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হতে পারে। তবে সাধারণত ৩৫ বছর বয়সের পরে প্রথমবারের মতো গর্ভধারণ করলে গর্ভকালীন ও প্রসব-সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এসব ক্ষেত্রে গর্ভের শিশুর সুস্থতা বিবেচনা করে নরমাল ডেলিভারির পরিবর্তে সিজার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
উল্লেখ্য, অনেক কম বয়সে (যেমন: ১৯ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে) গর্ভধারণ করলেও গর্ভকালীন ও প্রসব-সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অকাল প্রসবের সম্ভাবনাও তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। ফলে সিজারের প্রয়োজন হতে পারে।
নরমাল ডেলিভারির পর পুরোপুরি সুস্থ হতে কত সময় লাগে?
নরমাল ডেলিভারির পর পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সময়টা একেকজনের জন্য একেকরকম হতে পারে। তবে সাধারণত প্রসবের পর শরীর আগের অবস্থায় ফেরত আসতে কমবেশি ৬ সপ্তাহ সময় লাগে।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার কতদিন পর সহবাস করা যায়?
সাধারণত নরমাল ডেলিভারির ৬ সপ্তাহ, অর্থাৎ দেড় মাস পর থেকে স্বাভাবিকভাবে সহবাস করা যায়। তবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার এই সময়টা সবার ক্ষেত্রে সমান হয় না। শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী কারও কম, আবার কারও অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগতে পারে। হাসপাতালে ডেলিভারি হলে আপনার ছুটির কাগজে সময়টা লিখে দেওয়া থাকবে।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায়?
নরমাল ডেলিভারির কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায় তার কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তবে মা ও ভবিষ্যৎ শিশুর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ডেলিভারির পরে অন্তত ১.৫ বছরের বিরতিতে গর্ভধারণ করা উচিত।