কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথার কারণ অনেক গুলো হতে পারে এবং এটি মূলত একটি সাধারণ সমস্যা। এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন কোমর থেকে পায়ের যন্ত্রণার কারণ গুলো।
কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথাকে অনেকে সায়াটিকা বলে। তবে এই ব্যথা সায়াটিকা ছাড়াও হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ; মাংসপেশির দুর্বলতা থাকলে, স্বাস্থ্যকর খাবার না গ্রহণ করা, অতিরিক্ত পরিশ্রম করা, ক্রমাগত কাজ করা ইত্যাদি। তবে এই ব্যথা বেশির ভাগ সময় সায়াটিকা নার্ভ থেকে হয়ে থাকে।
Table of Contents
কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথার কারণ
কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথার সবচেয়ে বড় কারণ হলো সায়াটিক। সায়াটিক নার্ভ বা স্নায়ু সংকোচনের কারণে কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথা হতে পারে। সায়াটিকা বলতে পায়ে ঝাকুনি বা সুড়সুড়ি, দুর্বলতা, অসাড়তা এবং পায়ে ব্যথাকে বোঝায়। সায়াটিক ব্যথা কোমর থেকে পায়ের সামনে বা পিছনে উভয় দিকে হতে পারে।
সায়াটিক ব্যথায় হাঁটাচলা, বসে থাকা, অনেক কষ্ট। এই ব্যথা স্নায়ুর পথ বরাবর যেকোনো জায়গায় হতে পারে। কিন্তু এই ব্যথা বেশির ভাগই কোমর থেকে পায়ের পেছন পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় কয়েক সপ্তাহ বিশ্রাম নিলে এই ব্যথা সময়ের সাথে সাথে চলে যাবে। যদি ব্যথা এক বা দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় এবং খুব গুরুতর হয়, থালে দ্রুত ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।
অনেকের কাছে সায়াটিকা ব্যথা বিদ্যুতের ঝাঁকুনির মতো হয়ে থাকে আবার অনেকের কাছে সুঁচ বা পিন ঢুকানোর মতো ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথায় শুয়ে থাকা সহজ হলেও বসে থাকা বা হাঁটা অনেক বেশি কষ্টকর। এই ব্যথার কারণে অনেকেই একটানা শুয়ে ও বসতে পারেন না।
সায়াটিকা ব্যথা হওয়ার কারণ
ভারী কোন জিনিস তুলার কারণে হঠাৎ এই ব্যথা হতে পারে। এছাড়া, ডিস্ক বা দুই হারের মাঝখানের নরম অংশটি যদি পিছলে সামনের চলে আসে তাহলে সায়াটিকা হতে পারে। কিছু রোগ যেমন; হাড়ের যক্ষ্মা, ক্যানসার, স্পাইনাল কর্ডের টিউমার ইত্যাদি সায়াটিয়াকর কারণ হতে
ধূমপান, ভিটামিন বি ১২ এর অভাব, অতিরিক্ত ওজন, ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়স, মানসিক চাপ ইত্যাদি সায়াটিকার সবচেয়ে সাধারণ ঝুঁকির কারণ। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের স্নায়ুর ক্ষতির ঝুঁকি বেশি হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন মেরুদণ্ডের উপর চাপ দেয় যার ফলে সায়াটিকের ঝুঁকি বেশি থাকে।
যাদের বয়স ২০ থেকে ৫০ বছর এবং যারা দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকেন তাদের হার্নিয়েটেড ডিস্ক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আরো পড়ুন: মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
সায়াটিকা রোগের লক্ষণ
- কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথা।
- নিতম্বের ব্যথা
- কিছুক্ষন বসে থাকলে, হাঁটলে, শুয়ে থাকলে ব্যথা ও ঝিঁঝিঁ বেড়ে যায়।
- সুচ ফোটানো অনুভূতি
- পায়ে শিরশির অনুভূতি
- ঝুঁকে কাজ করার সময় ব্যথা তীব্র হয়
- পায়ের তলা ও আঙুল পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে যাব
- হাঁটার পরেই ব্যথা বেড়ে যাওয়া
সায়াটিকা সারানোর উপায়
- হাঁটার সময় অথবা দূরে ভ্রমনের সময় লাম্বার করসেট বেল্ট পড়া উচিত।
- শক্ত বিছানায় শুতে হবে।
- ভারী কাজ করা যাবে না
- কয়েক সপ্তাহ বিশ্রাম নিতে হবে
- ভারী ব্যায়াম করা যাবে না। তবে, চিকিৎসকের পরামশ অনুযায়ী ব্যায়াম করতে হবে।
- কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় সঠিকভাবে বসুন।
- আপনার ওজন বেশি হলে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
- হাই কমোড ব্যবহার করতে হবে।
- অতিরিক্ত ভারী ওজন তোলার কারণে সায়াটিক ব্যথা হতে পারে বা বৃদ্ধি পেতে পারে।
সায়াটিক ব্যথায় অতিরিক্ত চিন্তা করার কোন দরকার নেই। প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী চিকিৎসা ছাড়াই এই ব্যথা থেকে ভালো হয়ে ওঠেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ খেলে এবং সাঁতার কাটলে এই ব্যথা দ্রুত চলে যাবে।
এর পাশাপাশি প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে এবং অতিরিক্ত ভারী কাজ করা যাবে না ও ভারী কোন কিছু ওপরে তোলা যাবে না। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে। এই কয়েকটি কাজ করলে, ব্যথা অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো হয়ে যাবে।
ডাক্তাররা প্রায়ই এই ব্যথার জন্য অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন, তাই আপনি দেরি করতে পারবেন না। আপনাকে সঠিক সময়ের মধ্যে অস্ত্রোপচার করতে হবে। অন্যথায়, নার্ভ চাপে থাকলে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে না।
আরো পড়ুন: ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
সায়াটিক ব্যথা হলে যেসব কাজ এড়িয়ে চলতে হবে
- মেরুদণ্ড বাঁকা করে বসে থাকে যাবে না
- সামনে ঝুঁকে বসা যাবে না
- ভারী ব্যায়াম করা যাবে না
- একটানা বসে ও শুয়ে থাকা যাবে না
- বেশিক্ষন হাঁটা যাবে না
- অতিরিক্ত ভারী জিনিস তুলে যাবে না
- গরম পানির বোতল ব্যবহার করা যাবে না
- ধূমপান করা যাবে না। এটি সায়াটিকা ঝুঁকির বাড়ার অন্যতম কারণ।
ঘুমের সমস্যা
সায়াটিক ব্যথা হলে ঘুমের সমস্যা হবে না, সেটা হতে পারে না। এ সময় আপনার অনেক ঘুমের সমস্যা হতে পারে। আপনি ঠিকমতো শুয়ে থাকতে পারবেন না।
সায়াটিক ব্যথায় শোয়ার সঠিক নিয়ম হলো: ১
- একটি শক্ত বিছানা নির্বাচন করতে হবে। কখনো পাতলা বা নরম বিছানায় ঘুমাবেন না।
- আপনার পিঠ নিচে থাকবে এবং পেট থাকবে উপরে অর্থাৎ চিত হয়ে শোয়া। এভাবে ঘুমালে আপনি ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চিত হয়ে শোয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন: টেনশনজনিত মাথা ব্যথা কমবে, মেরুদণ্ডের জন্য ভালো, শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হবে।
- প্রয়োজন হলে নীচে এক বা একাধিক বালিশ রেখে হাঁটু উঁচু করুন। হাটু উঁচু করে ঘুমানোর ফলে আপনি আরাম পেতে পারেন।
- আপনার মাথা এবং ঘাড় একটি বালিশের উপর থাকবে।
যারা পিঠ নিচে রেখে বা একদম সোজা হয়ে ঘোমাতে পারেন না তারা চাইলে সায়াটিকা ব্যথা মুক্ত পাশ হয়ে ঘোমাতে পারেন।
সায়াটিক ব্যথায় যেভাবে ঘোমানো যাবে না:
- সায়াটিক ব্যথায় আপনি উপুড় হয়ে শুতে পারবেন না। এভাবে ঘুমালে আপনার পেটের উপর চাপ পরবে এবং এটি ঘাড়ের চাপের কারণও হতে পারে। এভাবে ঘুমালে আপনার মেরুদণ্ডের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
আরো পড়ুন: কি খেলে পাইলস ভালো হয় জেনে নিন
পায়ের রানে ব্যাথার কারণ
নার্ভের সমস্যা থাকলে পায়ের রানে বা উরুতে ব্যথা হতে পারে। মহিলাদের মাসিকের সময়টাতেও পায়ের রানের ব্যথা হতে পারে। আর্থ্রাইটিস বা রক্ত জমাট বাঁধার কারণে একজন ব্যাক্তির পায়ের রানের ব্যথা হয়। এছাড়া, আঘাত পাওয়া, মচকে যাওয়া বা স্ট্রেনের কারণে পায়ের উরুতে বা রানে ব্যথা হতে পারে।
শুধু তাই এই কারণ গুলো ছাড়াও আরো অনেক কারণে পায়ের রানে ব্যথা হতে পারে। যেমন; বাত, পেশী স্ট্রেন, ডায়াবেটিস ইত্যাদি।
এই সময় যারা খেলাধুলা খেলে, যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত এবং পায়ে বা নিতম্বে আগে থেকে আঘাত পেয়েছে তাদের পায়ের রানে ব্যথায় ঝুঁকি থাকে।
পা ব্যথার কারণ
- পায়ে আঘাত
- অতিরিক্ত ব্যায়াম
- অতিরিক্ত খেলাধুলা
- সঠিক মাপের জুতা পরিধান না করা
- বিভিন্ন রোগ যেমন; ডায়াবেটিস, গর্ভধারণ ইত্যাদি
কোমরের নিচে ব্যথার কারণ । কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ
- নিয়মিত ব্যায়াম না করা
- নরম বিছানায় ঘুমানো
- উঁচু বালিশে ঘুমানো
- উপুড় হয়ে ঘুমানো
- হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস
- অতিরিক্ত পরিশ্রম করা
- পূর্বে আঘাত পাওয়া
- ভারী ব্যায়াম করা
- একটানা একই নিয়মে বসে থাকা
- বাঁকা হয়ে বসা
- ভারী জিনিস তোলা
- সায়াটিকা (স্নায়ু জনিত সমস্যা) যদি কোমর থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
যদি কোমরের ব্যথা বেশি হয় তাহলে দুই তিন দিন বিশ্রাম নিতে হবে। এই সময় কোন কাজ করা যাবে না। কমপক্ষে টানা ২ থেকে ৩ দিন ঠান্ডা অথবা গরম সেক দেওয়া উচিত। প্রথমে ঠান্ডা পানি দিয়ে একবার সেঁক দিয়ে নিতে হবে এবং গরম পানি দিয়ে সেঁক দিলে ভালো। এরপর, ব্যথার স্থানে হালকা ম্যাসাজ করলে আপনি অনেক আরাম পাবেন।
চিকিৎসকের পরামশ অনুযায়ী ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করতে হবে। আইবুপ্রোফেন ও প্যারাসিটামল এই ব্যথানাশক ঔষুধ গুলোও কোমরের ব্যথার জন্য ভালো। তবে, ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া খাওয়া যাবে না। এরপাশাপাশি ব্যথানাশক জেল ও ক্রিম ব্যবহার করলে কোমরের ব্যথা দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন: পাতলা চুলের জন্য শ্যাম্পু
কোমর থেকে পায়ের যন্ত্রণার ব্যায়াম । সায়াটিকার ব্যায়াম
সায়াটিকা ব্যায়ামেরে জন্য প্রথমে দুটি চেয়ার নিন। এরপর, আপনি একটি চেয়ারে বসুন। হাঁটু সোজা করে অন্য চেয়ারে ব্যথা হওয়া পায়ের গোড়ালি রাখুন। তারপর, পায়ের পাতাকে ফ্লোরের দিকে পুশ ডাউন করুন। এভাবে পায়ের পাতাকে ৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০ থেকে ১২ বার আপ ডাউন করুন।
এভাবে ব্যায়াম করলে আপনার কোমর থেকে পায়ের যন্ত্রণা কমে যাবে। বাকি ব্যায়াম গুলো ফেসবুকে ভিডিও সহ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
FAQ
সায়াটিকা কি?
সায়াটিক হলো একটি নার্ভের নাম। যখন সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ বা খারাপ প্রভাব পরে তখন একে সায়াটিকা বলা হয়। এক কথায়, নার্ভ বা স্নায়ু জনিত সমস্যা গুলোকে সায়াটিকা বলা হয়।
সায়াটিকা বাত কি?
সাধারণত, সায়াটিকা কোন বাত না। যখন সায়াটিক নামক নার্ভ বা স্নায়ু জনিত সমস্যার কারণে কোমর থেকে পা পর্যন্ত যে ব্যথা হয় থাকে সায়াটিকা বলা হয়। এখানে, সায়াটিয়াকর সাথে বাতের কোন সম্পর্ক নেই।
সায়াটিক ব্যথা কতক্ষন থাকে?
সায়াটিক ব্যথা সাধারণত ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ বা তারও কম সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যদি আপনার সায়াটিক ব্যথা ৩ মাস বা ৩ মাসের বেশি সময় পর্যন্ত থাকে তাহলে এটি দীর্গস্থায়ী সায়াটিক ব্যথা হিসেবে বিবেচিত। তবে, সায়াটিক ব্যথা ৩ সপ্তাহের বেশি হলে বসে থাকা উচিত না।
সায়াটিকা কতটা ক্ষতিকর?
সায়াটিক ব্যথা প্রচণ্ড তীব্র হয়। এই ব্যথায় হাঁটতে চাইলে হাটা যায় না, বসতে চাইলে বসা যায় না, শুতে চাইলে শোয়া যায় না। তবে এটি তেমন ক্ষতিকর নয়। চিকিৎসা নেওয়ার পর এই ব্যথা সময়ের সাথে সাথে চলে যায়।
সায়াটিকা নিরাময়ের দ্রুততম উপায় কি?
সায়াটিক নিরাময়ের দ্রুততম উপায় হলো ব্যায়াম করা, হাঁটার সময় সঠিক ভাবে হাঁটা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অস্ত্রোপচার ও শারীরিক থেরাপি নেওয়া।
শেষ কথা
বেশির ভাগই সায়াটিকা ব্যথা কোমর থেকে পা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত ব্যথা সবসময় সায়াটিকার কারণে নাও হতে পারে। অনেক গুলো কারণ ও বয়সের উপর এই ব্যথা নির্ভর করে। তাই ডাক্তারের সাথে দেখা করে এই ব্যথার কারণ নিশ্চত করতে হবে।
আপনার বয়স যদি ৪০ এর নিচে হয় এবং আপনার হাঁটতে তেমন কোন অসুবিধা না হয়, এছাড়া প্রস্রাব-মলত্যাগ ঠিকভাবে হয় তাহলে অতিরিক্ত চিন্তার কারণ এই ব্যথা সময়ের সাথে সাথে ভালো হয়ে যাবে। সর্বশেষ, ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। এই ব্যথায় আপনাকে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের শেখানো ব্যায়াম গুলো নিয়মিত করতে হবে।